৩০ এপ্রিল ২০২৪, মঙ্গলবার, ০৮:৫২:৩১ অপরাহ্ন
ফিকে হয়ে আসছে প্লট-ফ্ল্যাটের স্বপ্ন
  • আপডেট করা হয়েছে : ১৭-০২-২০২৪
ফিকে হয়ে আসছে প্লট-ফ্ল্যাটের স্বপ্ন

লাগামহীন মূল্যস্ফীতির কারণে সাধারণ মানুষের এমনিতেই নাভিশ^াস অবস্থা। নিজের একটি প্লট বা ফ্ল্যাটের স্বপ্ন দেখতেন যারা, তাদের সে স্বপ্ন ক্রমেই নাগালের বাইরে চলে যাচ্ছে। সর্বশেষ, ঢাকাসহ সারাদেশে প্লট ও ফ্ল্যাটের নামজারি, হস্তান্তরসহ বিভিন্ন ফি দ্বিগুণ করতে যাচ্ছে সরকার। এর ফলে নিজস্ব আবাসনের স্বপ্ন দেখেন যারা, বিশেষ করে মধ্যবিত্তরা, তাদের সে স্বপ্ন ফিকে হয়ে যাওয়াই স্বাভাবিক। আবাসন ব্যবসায়ীরা মনে করছেন, এটি হঠকারী সিদ্ধান্ত। এর ফলে নিজস্ব আবাসনের স্বপ্ন মানুষের সাধ্যের বাইরে চলে যাবে এবং আবাসন ব্যবসা ধ্বংস হয়ে যাবে।


বিশেষজ্ঞরা মনে করছেন সরকারের এ সিদ্ধান্ত নিম্ন ও মধ্যবিত্তদের আবাসন সংকট আরও বাড়াবে। তবে সরকারের পক্ষ থেকে বলা হচ্ছে ফি বাড়লেও সাধারণ প্লট, ফ্ল্যাটগ্রহীতাদের জন্য খুব একটা সমস্যা হবে না।


প্লট ও ফ্ল্যাটের নানা ধরনের সরকারি ফি পাঁচ বছর পর পর বাড়িয়ে থাকে সরকার। এবার প্রায় ৭ বছর পেরিয়ে গেছে। সর্বশেষ, ২০১৭ সালে সরকারি ফি বাড়ানো হয়েছিল। তাই এ দফায় ফি বৃদ্ধির হার আরও বেশি হতে পারে। এমনটাই বলছেন সর্বশেষ গৃহায়ণ ও গণপূর্ত মন্ত্রণালয়ের সংশ্লিষ্ট কর্তাব্যক্তিরা।


সারাদেশে গৃহায়ণ ও গণপূর্ত মন্ত্রণালয়ের নিয়ন্ত্রণাধীন গণপূর্ত অধিদপ্তরের প্লট, ফ্ল্যাট, দোকান, বাণিজ্যিক ফ্লোর স্পেস ইত্যাদির হস্তান্তর, নামজারির অনুমতি, বাণিজ্যিক ব্যবহারের অনুমতি, বন্ধকের অনুমতি, প্লট বিভাজন, একত্রীকরণের অনুমতি, আমমোক্তারনামা গ্রহণ, খ- জমি, মেথর প্যাসেজের জমি বরাদ্দসংক্রান্ত নীতিমালা প্রণয়ন করার উদ্যোগ গ্রহণ করেছে সরকার। এরই মধ্যে এ সংক্রান্ত কমিটির প্রথম সভা অনুষ্ঠিত হয়েছে। আগামীকাল রবিবার গৃহায়ণ ও গণপূর্ত মন্ত্রণালয়ে দ্বিতীয় সভা হওয়ার কথা রয়েছে। এ সভাতেই ফি চূড়ান্ত হওয়ার কথা রয়েছে। প্রথম সভার পর যে খসড়া ফির তালিকা দেওয়া হয়েছিল, সেটাই চূড়ান্ত করা হচ্ছে বলে দায়িত্বশীল সূত্রে জানা গেছে।


এ বিষয়ে গৃহায়ণ ও গণপূর্ত মন্ত্রণালয়ের অতিরিক্ত সচিব (উন্নয়ন অনুবিভাগ-২) মো. হামিদুর রহমান খান বলেন, বিগত দুই তিন টার্ম ৫ বছর পর পর ফি বাড়ানো হতো। ২০১৭ সালের পর আর বাড়েনি। এবার বাড়ানোর বিষয়ে


আলোচনা হচ্ছে। এরই মধ্যে একটি সভা হয়েছে। আগামী রবিবার (আগামীকাল) আরও একটি সভা হবে। এরপর চূড়ান্ত হবে। অতীতে যখনই বাড়ানো হয়েছে দ্বিগুণ করা হয়েছে। এতে সাধারণ প্লট, ফ্ল্যাটের মালিকরা ক্ষতিগ্রস্ত হবে না বলেই আমাদের ধারণা।


প্রস্তাব অনুযায়ী, সর্বোচ্চ ফি বৃদ্ধির প্রস্তাব করা হয়েছে কক্সবাজারে। সেখানে আবাসিক জমির নামজারি ফি ৪ হাজার টাকার স্থলে ১৫ হাজার টাকা অর্থাৎ ২৭৫ শতাংশ বৃদ্ধির কথা বলা হয়েছে। প্লট, ফ্ল্যাটের হস্তান্তর ফি বাড়ানোর দিক দিয়েও কক্সবাজারই সর্বোচ্চ। এ জেলার আবাসিক এলাকায় প্লট, ফ্ল্যাট হস্তান্তর ফি ৫০ হাজার টাকার জায়গায় ১ লাখ ৫০ হাজার টাকা করার (২০০ শতাংশ বৃদ্ধি) প্রস্তাব করা হয়েছে। চট্টগ্রাম আবাসিক এলাকায় হস্তান্তর ফি ১ লাখ টাকার স্থলে দুই লাখ করার প্রস্তাব করা হয়েছে। চট্টগ্রাম বাণিজ্যিক এলাকার হস্তান্তর ফি ৩ লাখ টাকার পরিবর্তে ৫ লাখ এবং শিল্প এলাকায় ১ লাখের পরিবর্তে দুই লাখ করার প্রস্তাব করা হয়েছে।


ঢাকায় ধানমন্ডি আবাসিক এলাকায় জমি/প্লট কাঠাপ্রতি হস্তান্তর ফি ১ লাখ ৬০ হাজার টাকার স্থলে ২ লাখ ৬০ হাজার টাকা করার (৬০ শতাংশ বৃদ্ধি) প্রস্তাব করা হয়েছে। তবে বাণিজ্যিক জমি/প্লট ৫ লাখ টাকার রাখার প্রস্তাব করা হয়েছে। সবচেয়ে বেশি বৃদ্ধির প্রস্তাব করা হয়েছে তেজগাঁও শিল্প এলাকায়। এখানে প্রতি কাঠায় ১ লাখ ৫০ হাজার টাকা থেকে বাড়িয়ে ৩ লাখ টাকা করার প্রস্তাব করা হয়েছে। বাণিজ্যিক প্লট প্রতি কাঠায় ৫ লাখ টাকা করার প্রস্তাব করা হয়েছে।


এদিকে আবাসিক, শিল্প ও বাণিজ্যিক এলাকার কনভার্সন ফি নতুন করে নির্ধারণ করা হচ্ছে। আবাসিক থেকে বাণিজ্যিক কিংবা বাণিজ্যিক ও শিল্প প্লট ছোট থেকে বড় করার ক্ষেত্রে এই ফি আরোপ করা হয়। কনভার্সন ফি ঢাকা, চট্টগ্রাম, কক্সবাজার ও অন্যান্য বিভাগীয় শহর এবং অন্যান্য শহরের আবাসিক এলাকায় দ্বিগুণ করা হয়েছে। ঢাকার ধানমন্ডি আবাসিক এলাকায় প্রতি কাঠা ৬ লাখের স্থলে ১২ লাখ টাকা, তেজগাঁও শিল্প এলাকায় ৪ লাখ টাকা বাড়িয়ে ৮ লাখ টাকা করার প্রস্তাব করা হয়েছে। এ ছাড়া এ দুই এলাকায় ফ্ল্যাট অ্যাপার্টমেন্টের ফ্লোর স্পেস প্রতি বর্গফুট ৫০০ টাকা থেকে বাড়িয়ে ১ হাজার টাকা করার প্রস্তাব করা হয়েছে। কক্সবাজার আবাসিক এলাকায় ৪ লাখ টাকা থেকে বাড়িয়ে ৮ লাখ করার প্রস্তাব করা হয়েছে। একইভাবে চট্টগ্রামে ৪ লাখ থেকে বাড়িয়ে ৮ লাখ, বাণিজ্যিক এলাকা ৫ লাখ থেকে দ্বিগুণ বাড়িয়ে ১০ লাখ করার প্রস্তাব করা হয়েছে। অন্যান্য বিভাগীয় সদরে ২ লাখ টাকার স্থলে ৪ লাখ, অন্যান্য শহরের আবাসিক এলাকায় ১ লাখ থেকে ২ লাখ, শিল্প এলাকায় ১ লাখ থেকে ২ লাখ বাণিজ্যিক এলাকায় ১ লাখ থেকে ২ লাখ করার প্রস্তাব করা হয়েছে। অর্থাৎ প্রতিটি খাতেই ফি বাড়ানো হচ্ছে।


আবাসন ব্যবসায়ীদের সংগঠন রিহ্যাবের সাবেক সহসভাপতি কামাল মাহমুদ বলেন, সরকারের কিছু আমলা ও কর্মকর্তার হঠকারী, মনগড়া সিদ্ধান্তের কারণে মানুষের সাধ্যের বাইরে চলে যাচ্ছে নিজস্ব আবাসন। সরকারের এই সিদ্ধান্ত আবাসন ব্যবসাকে ধ্বংসের দিকে নিয়ে যাবে। এটা করার আগে সার্ভে করা দরকার ছিল। সরকার যদি ফি বাড়িয়ে দেয় সেটি পড়বে প্লট, ফ্ল্যাটের দামের ওপর। তাই প্লট, ফ্ল্যাটের দাম আরও কয়েকগুণ বেড়ে যেতে পারে। এতে আবাসন ব্যবসা আরও নিম্নমুখী হওয়ার আশঙ্কা রয়েছে। এভাবে চলতে থাকলে আবাসন ব্যবসাকে আর বাঁচানো যাবে না।


শেয়ার করুন