২৩ নভেম্বর ২০২৪, শনিবার, ০২:১২:১৭ অপরাহ্ন
জনসম্পৃক্ত কর্মসূচি নিয়ে মাঠে থাকবে বিএনপি
  • আপডেট করা হয়েছে : ১৭-০২-২০২৪
জনসম্পৃক্ত কর্মসূচি নিয়ে মাঠে থাকবে বিএনপি

দ্বাদশ সংসদ নির্বাচনের পর থেকে অনেকটা হতাশায় ভুগছেন বিএনপির নেতাকর্মীরা। হতাশা কাটিয়ে আবারও ঘুরে দাঁড়ানোর চেষ্টা করছে দলটি। কালো পতাকা মিছিল ও লিফলেট বিতরণের কর্মসূচি দিয়ে সাড়াও পেয়েছে বলে দাবি তাদের। এর মধ্যে গত কয়েকদিনে দলটির মহাসচিব মির্জা ফখরুল ইসলাম আলমগীর, স্থায়ী কমিটির সদস্য আমির খসরু মাহমুদ চৌধুরীসহ কারামুক্ত হয়েছেন বেশ কয়েকজন কেন্দ্রীয় নেতা। এছাড়া জামিন পেয়ে মুক্তির অপেক্ষায় আছেন অনেকেই। এতে বিএনপি নেতাকর্মীদের মধ্যে অনেকটা স্বস্তি বিরাজ করছে। শুধু তাই নয়, শীর্ষ নেতাদের মুক্তিতে দলটি নতুন করে চাঙাও হচ্ছে।


এমতাবস্থায় পূর্বঘোষিত কর্মসূচি অনুযায়ী আজ সব জেলা শহরে এবং রোব ও সোমবার সব উপজেলা, থানা, পৌরসভা ও ইউনিয়ন পর্যায়ে ‘দেশ বাঁচাও, মানুষ বাঁচাও’ শিরোনামে লিফলেট বিতরণের কর্মসূচি রয়েছে। এ কর্মসূচির পর নীতিনির্ধারকরা বসে পরবর্তী কর্মসূচি ঠিক করবেন। তবে এসএসসি পরীক্ষা, রমজান ও ঈদ বিবেচনায় সামনে নিত্যপ্রয়োজনীয় দ্রব্যাদির সীমাহীন মূল্যবৃদ্ধিসহ জনসম্পৃক্ত ইস্যুতে ‘নরম’ কর্মসূচি দিয়ে মাঠে থাকবে বিএনপি। এছাড়া রমজানে এতিম ও আলেম-ওলামা, কূটনীতিক ও রাজনীতিকদের সম্মানে ইফতার মাহফিলের আয়োজন করবে। পাশাপাশি সারা দেশের সব সাংগঠনিক জেলাসহ সব ইউনিটেও ইফতার মাহফিল আয়োজনের নির্দেশনা দেবে। সংশ্লিষ্ট সূত্রে জানা গেছে এসব তথ্য।


দপ্তর সূত্রে জানা যায়, ২৮ জুলাই থেকে সারা দেশে ২৭ হাজার ৫২৬ জনেরও বেশি নেতাকর্মীকে গ্রেফতার করা হয়। যার মধ্যে ২৮ অক্টোবর বিএনপির মহাসমাবেশের পর থেকে এ পর্যন্ত গ্রেফতার করা হয় ২৫ হাজার ৫৪৪ জনের বেশি নেতাকর্মীকে। তবে বৃহস্পতিবার পর্যন্ত অধিকাংশ নেতাকর্মীই জামিনে মুক্তি পেয়েছেন। কারাগারে এখন ১৫ কেন্দ্রীয় নেতাসহ দেড় হাজারের মতো নেতাকর্মী আছেন।


নেতাকর্মীরা আশা করছেন, ৭ জানুয়ারি দ্বাদশ সংসদ নির্বাচনের পর দেশের রাজনৈতিক পরিস্থিতি অনেকটাই নিরুত্তাপ। রাজপথে নেই জোরালো কোনো আন্দোলন। বিএনপিসহ সরকারবিরোধী দলগুলো অনেকটা রুটিন কর্মসূচি পালন করছে। আন্দোলনের চেয়ে আইনি প্রক্রিয়ায় কারাবন্দি নেতাকর্মীদের মুক্ত করার বিষয়টিকে বেশি প্রধান্য দিচ্ছে দলটি। মহাসচিবসহ বেশ কয়েকজন কেন্দ্রীয় নেতা মুক্তি পেয়েছেন। সামনে বাকিরাও মুক্তি পাবেন। এখন যে কোনো কর্মসূচি দিলে আগের চেয়ে অনেক বেশি নেতাকর্মী অংশ নেবেন। আন্দোলনেও নতুন করে গতি আসবে। আর রমজানে ইফতার মাহফিলকে কেন্দ্র করে নেতাকর্মীরা আবারও এক হওয়ার সুযোগ পাবেন। এতে দল আবারও আগের মতো শক্তি ফিরে পাবে।


এ প্রসঙ্গে বিএনপির স্থায়ী কমিটির সদস্য বেগম সেলিমা রহমান যুগান্তরকে বলেন, দল সব সময়ই উজ্জীবিত। যারা কারাগারে আছেন, মামলার কারণে পলাতক বা যারা বাইরে আছেন-সবাই উজ্জীবিতই আছেন। দেশে গণতন্ত্র প্রতিষ্ঠা ও জনকল্যাণে নেতাকর্মীরা প্রতিজ্ঞাবদ্ধ। চেয়ারপারসন খালেদা জিয়া বন্দি অবস্থায় আছেন। উন্নত চিকিৎসার জন্য বাইরে যেতে পারছেন না, মৃত্যুর সঙ্গে লড়ছেন। তিনিও নেতাকর্মীদের বলে গেছেন, ‘দেশ বাঁচাও, মানুষ বাঁচাও’। মানুষ এখন অসহায় হয়ে ঘুরছে, তখন আমরা বড় দল হিসাবে বসে থাকতে পারি না। জনগণের দাবি নিয়ে কর্মসূচি আমাদের চলমান। বড় কর্মসূচি আসবে কি আসবে না, তা সময় ও পরিস্থিতি বলে দেবে। তবে সামনে রমজান মাস আসছে, মানুষের যাতে কষ্ট না হয়, সেটি ভেবেই বিএনপি কর্মসূচি দেবে।


দলটির সহ-সপ্তর সম্পাদক তাইফুল ইসলাম টিপু বলেন, দলের মহাসচিবসহ জাতীয় নেতারা থেকে শুরু করে তৃণমূল পর্যায়ের নেতাকর্মী-সমর্থক যখন কারাগারে থাকেন, তখন তাদের সহকর্মীরা উদ্বিগ্ন থাকেন-এটাই স্বাভাবিক। যখন তারা মুক্তি পান, তখন তারা একটা স্বস্তির নিশ্বাস ফেলেন-এটাও স্বাভাবিক। যেহেতু আন্দোলন-সংগ্রাম চলমান, প্রত্যেক নেতাকর্মী মনে করছে, নেতারা কারামুক্ত হওয়ার পর আন্দোলন আবার নতুন করে গতি পাবে।


একাধিক ভাইস চেয়ারম্যান ও চেয়ারপারসনের উপদেষ্টা যুগান্তরকে জানান, বিএনপি মহাসচিবসহ কেন্দ্রীয় ও বেশ কয়েকজন জেলার নেতাদের গ্রেফতার করার উদ্দেশ্য কারও অজানা নয়। সদ্য অনুষ্ঠিত জাতীয় নির্বাচন ঘিরে বিএনপিকে ভাঙার জন্য সরকার অনেক চেষ্টা করেছে, কিন্তু সফল হননি। ওয়ান-ইলেভেনে দেশের এক চরম রাজনৈতিক সংকটকালে বিএনপি মহাসচিবের দায়িত্ব কাঁধে নিয়ে খোন্দকার দেলোয়ার হোসেন দলের বিরুদ্ধে চক্রান্ত রুখে দিতে যোগ্য নেতৃত্ব দিয়েছিলেন। তাই বিএনপি তার কথা সব সময় মনে রাখবে। ঠিক এবারও মহাসচিব মির্জা ফখরুল ইসলাম আলমগীরও দল ও নেতৃত্বের প্রতি আনুগত্য থেকে দলের বিরুদ্ধে ষড়যন্ত্র সফল হতে দেননি। তার সঙ্গে স্থায়ী কমিটির সদস্য মির্জা আব্বাস, আমির খসরু মাহমুদ চৌধুরী, ভাইস চেয়ারম্যান আলতাফ হোসেন চৌধুরী, চেয়ারপারসনের উপদেষ্টা আমান উল্লাহ আমান, যুগ্ম মহাসচিব সৈয়দ মোয়াজ্জেম হোসেন আলাল, সহ-সাংগঠনিক সম্পাদক শরিফুল আলম, বিএনপি মিডিয়া সেলের আহ্বায়ক জহির উদ্দিন স্বপন, প্রচার সম্পাদক শহীদ উদ্দীন চৌধুরী এ্যানিসহ কেন্দ্রীয় ও জেলা-মহানগরের যারা কারাগারে ছিলেন, তাদের ভূমিকাও দল আজীবন মনে রাখবে। ওইসব নেতা জানান, নানা চাপ ও প্রলোভন থাকলেও কারাগারে থাকা এসব নেতা কোনো আপস করেননি, দল ভাঙার ফাঁদে পা দেননি। বিশেষ করে কারাগারে যাওয়ার আগে মহাসচিবের নেতৃত্বে কর্মসূচিতে সফলতা, অসুস্থতা নিয়ে কারগারে যাওয়ার পরও কোনো চাপে নত না হওয়ায় নেতাকর্মীসহ সাধারণ মানুষের কাছে প্রশংসা কুড়িয়েছে-এটাই বাস্তবতা। তাই মহাসচিবসহ শীর্ষ নেতারা মুক্তি পাওয়ার পর এখন নেতাকর্মীরা নতুন উদ্যমে লক্ষ্য বাস্তবায়নে প্রস্তুতি নিচ্ছেন। সামনে কর্মসূচিও পরিবর্তন হতে পারে।


জানা যায়, ইতোমধ্যে মহাসচিব মির্জা ফখরুল ইসলাম আলমগীর, স্থায়ী কমিটির সদস্য আমির খসরু মাহমুদ চৌধুরী, ভাইস চেয়ারম্যান মো. শাহজাহান, যুগ্ম মহাসচিব মজিবর রহমান সরোয়ার, সাংগঠনিক সম্পাদক সৈয়দ এমরান সালেহ প্রিন্স, কেন্দ্রীয় নেতা শহীদ উদ্দীন চৌধুরী এ্যানি, ঢাকা মহানগর উত্তর বিএনপির সদস্য সচিব আমিনুল হক, বিএনপির নির্বাহী কমিটির সদস্য ফজলুর রহমান খোকন, যুবদলের কেন্দ্রীয় সাধারণ সম্পাদক আবদুল মোনায়েম মুন্নাসহ অনেক নেতাকর্মী জামিনে মুক্তি পেয়েছেন। সিনিয়র নেতাদের মধ্যে এখনো কারাগারে আছেন বিএনপির স্থায়ী কমিটির সদস্য মির্জা আব্বাস, ভাইস চেয়ারম্যান শামসুজ্জামান দুদু, এয়ার ভাইস মার্শাল (অব.) আলতাফ হোসেন চৌধুরী, চেয়ারপারসনের উপদেষ্টা আমান উল্লাহ আমান, হাবিবুর রহমান হাবিব, আতাউর রহমান ঢালী, যুগ্ম মহাসচিব সৈয়দ মোয়াজ্জেম হোসেন আলাল, খায়রুল কবির খোকন, সহ-সাংগঠনিক সম্পাদক শরিফুল আলম, বিএনপির মিডিয়া সেলের আহ্বায়ক জহির উদ্দিন স্বপন, নির্বাহী কমিটির সদস্য শেখ রবিউল আলম রবিসহ অন্তত ১৫ জন কেন্দ্রীয় নেতা। মির্জা আব্বাসের ২টি এবং আলতাফ হোসেন চৌধুরীর ১টি মামলায় জামিন হলেই তারা কারামুক্ত হবেন বলে আইনজীবীরা জানিয়েছেন।


বৃহস্পতিবার কারামুক্ত হয়ে বিএনপির মহাসচিব মির্জা ফখরুল বলেন, ‘গণতন্ত্র পুনরুদ্ধার ও বিজয় না হওয়া পর্যন্ত আন্দোলন অব্যাহত থাকবে।’ আমির খসরু মাহমুদ চৌধুরী বলেন, ‘গণতন্ত্র ফেরত না আসা এবং জনগণের ভোটে নির্বাচিত সরকার না আসা পর্যন্ত সংগ্রাম অব্যাহত থাকবে।’


শেয়ার করুন