ক্ষমতায় এসে নতুন সরকারের ভেতরে নিত্যপণ্যের বাজার সহনীয় করতে গলদঘর্ম অবস্থা হলেও গত এক মাসে বাজারে এর প্রভাব সামান্যই। এমনকি মূল্যস্ফীতি নিয়ন্ত্রণে রাখতে বাংলাদেশ ব্যাংক মুদ্রানীতিতে সুদের হার বাড়িয়ে টাকার প্রবাহ সীমিত করার পদক্ষেপ নিয়েছে। বাণিজ্য মন্ত্রণালয়ের অনুরোধে জাতীয় রাজস্ব বোর্ড (এনবিআর) চারটি প্রধান নিত্যপণ্যের শুল্ক-কর কমিয়ে দিয়েছে। কিন্তু বাজারের বাস্তবচিত্র ভিন্ন। পণ্যের দাম কমা দূরের কথা; বরং রমজান সামনে রেখে অত্যাবশ্যক পণ্যগুলোর দাম বাড়তির দিকে। বলা যায়, কোনো পদক্ষেপেই কাজ হচ্ছে না। রোজাকে পুঁজি করে সামনে আরেক দফা পণ্যের দাম বাড়ানোর লক্ষণ স্পষ্ট হচ্ছে বলে সংশ্লিষ্টরা মনে করেন।
জানা যায়, গত ১৭ জানুয়ারি বাংলাদেশ মুদ্রানীতি ঘোষণা করে। ওই মুদ্রানীতিতে মূল্যস্ফীতি সহনীয় রাখতে সুদের হার বাড়ানো হয়। এর ফলে বাজারে টাকার প্রবাহ কমে যাবে। এতে মানুষ খরচ কম করবে, আর জিনিসপত্রের দাম কমবে। ঘোষণার এক মাস পার হলেও কেন্দ্রীয় ব্যাংকের এই ফর্মুলায় কাজ হয়নি। অথচ এই মুদ্রানীতির নেতিবাচক প্রভাব রয়েছে। সুদের হার বাড়ানোর কারণে ব্যবসা-বাণিজ্যের খরচ বেড়ে যাওয়া, বিনিয়োগ কমে যাওয়া এবং পরিণামে কর্মসংস্থান ক্ষতিগ্রস্ত হওয়ার ঝুঁকি রয়েছে। সামনে হয়তো এর প্রভাব বোঝা যাবে।
একইভাবে সম্প্রতি চাল, চিনি, ভোজ্যতেল ও খেজুরের শুল্ক-কর কমানো হয়েছে। এর ফলে বাজারে ওই পণ্যগুলোর দাম কমবে বলে আশা করা হয়। অথচ এক সপ্তাহ পরও ওই সব পণ্যের দাম তো কমেইনি, বরং বাড়তির দিকে।
সরকারি সংস্থা টিসিবির হিসাব বলছে, গত এক মাসে প্রায় সব কটি নিত্যপণ্যের দামই বেড়েছে। সরু চালের দাম কেজিতে প্রায় ২ টাকা বেড়েছে। আটার দামও বেড়েছে কেজিতে প্রায় ২-৩ টাকা। ডালের দাম বেড়েছে ৫ থেকে ১০ টাকা। আলুর দাম বেড়েছে ৫-৬ টাকা। এক মাস আগে দেশি পেঁয়াজের কেজিপ্রতি দাম ছিল ৩০-৩৫ টাকা। সেটি এখন বিক্রি হচ্ছে ১০০-১২০ টাকায়। রসুনের দাম ছিল ১০০-১৪০ টাকা। এখন তা বিক্রি হচ্ছে ১৪০ থেকে ২৫০ টাকা। আদার দাম ছিল ১৫০-১৮০ টাকা, এখন বিক্রি হচ্ছে ২৫০-২৮০ টাকা। গরুর মাংস ৭০০-৭২০ টাকা থেকে এখন বিক্রি হচ্ছে ৭০০-৭৫০ টাকা। ব্রয়লার মুরগি বিক্রি হচ্ছে ১৯০-২০০ টাকায়। চিনির দাম ছিল ১১০-১২০ টাকা। আর এখন তা বিক্রি হচ্ছে ১৩৫-১৪০ টাকা।
কৃষি অর্থনীতিবিদ অধ্যাপক ড. মিজানুল হক কাজল বলেন, ‘আমরা শাকসবজি আমদানি করি না। অথচ এর দামও বাড়তি। আমরা মূলত ডাল, চিনি, গম, ভোজ্যতেল আমদানি করি। তো আমরা যদি জানি, কতটুকু উৎপাদন করি আর কতটুকু আমদানি করতে হবে, আর আমদানিকারকদের কাছে কতটুকু মজুত রয়েছে, তাহলে সিদ্ধান্ত নেওয়া যায়। সরকারি প্রতিষ্ঠানগুলো ভিন্ন ভিন্ন তথ্য দেওয়ার কারণেও সংকটটা রোধ করা যায় না। আর ব্যবসায়ীদেরও দায় আছে। তারা কোনো পণ্যের দাম বাড়ার সঙ্গে সঙ্গে দেশে বাড়িয়ে দেয়। অথচ একটি পণ্য আসতেও তিন মাস সময় লাগে। এগুলোও শক্ত নজরদারিতে আনা দরকার।’
সরকারি বিভিন্ন পদক্ষেপের কারণে পণ্যের দাম না কমার বিষয়ে বিভিন্ন খাতের ব্যবসায়ীরা নাম প্রকাশ না করে বলেন, দাম নিয়ন্ত্রণে সরকারের পদক্ষেপ যথেষ্ট নয়। ডলার-সংকটে সাধারণ ব্যবসায়ীরা এত দিন ভোগ্যপণ্য আমদানির ঋণপত্র খুলতে পারেননি। তখন সরকার নজর দেয়নি। ফলে রমজানের ভোগ্যপণ্য আমদানির সুযোগ নিয়েছেন সীমিত কয়েকজন আমদানিকারক। আর রমজানের ঠিক আগমুহূর্তে শুল্ক-কর কমানোর সুবিধা বড় আমদানিকারকদের পকেটে যাবে বলেও অভিযোগ করেন কোনো কোনো ব্যবসায়ী।