২৭ এপ্রিল ২০২৪, শনিবার, ১২:০৯:০৯ অপরাহ্ন
আট লেনে উন্নীত হচ্ছে ঢাকা-চট্টগ্রাম মহাসড়ক
  • আপডেট করা হয়েছে : ১৯-০২-২০২৪
আট লেনে উন্নীত হচ্ছে ঢাকা-চট্টগ্রাম মহাসড়ক

দেশের অর্থনীতির লাইফলাইন খ্যাত ঢাকা-চট্টগ্রাম মহাসড়ক চার লেন থেকে আট লেনে উন্নীত হচ্ছে। আগামী মার্চ মাসের মধ্যে এ প্রকল্পের সম্ভাব্যতা যাচাই সম্পন্ন করবে সড়ক পরিবহন ও মহাসড়ক বিভাগ।

সড়ক পরিবহন ও মহাসড়ক বিভাগের কর্মকর্তারা বলছেন, নির্মাণ-পরবর্তী ১৫ বছর যেন ঢাকা-চট্টগ্রাম মহাসড়কে আর কোনো কাজ করতে না হয়, সে লক্ষ্যেই পরিকল্পনা গ্রহণ করা হচ্ছে। বাংলাদেশের বৈদেশিক বাণিজ্যের ৯০ শতাংশ ঢাকা-চট্টগ্রাম মহাসড়কের ওপর নির্ভরশীল। বিশ্বের দীর্ঘতম সমুদ্রসৈকত কক্সবাজার আর তিন পার্বত্য জেলার কারণে মহাসড়কটি একই সঙ্গে দেশের প্রধান পর্যটন করিডোরও। সরকারের পরিকল্পনা অনুযায়ী, ভবিষ্যতে মহাসড়কটি এশিয়ান হাইওয়ে ও সাসেক করিডোরে সংযুক্ত হবে। ঢাকা-চট্টগ্রাম মহাসড়কে প্রতিদিন ৩০ হাজারের বেশি যানবাহন চলাচল করে বলে ২০২০ সালে পরিকল্পনা কমিশনের বাস্তবায়ন পরিবীক্ষণ ও মূল্যায়ন বিভাগের (আইএমইডি) এক প্রতিবেদনে উল্লেখ করা হয়েছিল। প্রতিবেদনে বলা হয়, মহাসড়কটিতে চলাচলরত যানবাহনের সংখ্যা প্রতিনিয়তই বৃদ্ধি পাচ্ছে। বিদ্যমান চার লেনে সক্ষমতার চেয়ে বেশি যানবাহন চলাচল করায় বিভিন্ন পয়েন্টে তৈরি হচ্ছে যানজট। এতে বিঘিœত হচ্ছে পণ্য পরিবহন।


এমন প্রেক্ষাপটে ঢাকা-চট্টগ্রাম মহাসড়ক সম্প্রসারণের জন্য প্রায় এক বছর আগে গত এপ্রিলে একটি সমীক্ষার কাজ শুরু করে সড়ক ও জনপথ (সওজ) অধিদফতর। অস্ট্রেলিয়াভিত্তিক পরামর্শক প্রতিষ্ঠান এসএমইসির নেতৃত্বে পাঁচটি প্রতিষ্ঠানের একটি কনসোর্টিয়াম মাঠপর্যায়ে সমীক্ষাটি পরিচালনা করছে। সওজ অধিদফতরের সঙ্গে করা চুক্তি অনুযায়ী, মহাসড়কটি সম্প্রসারণে একটি বিস্তারিত নকশাও তৈরি করে দেবে এ কনসোর্টিয়াম। এসব কাজে খরচ হচ্ছে প্রায় ৪৪ কোটি টাকা।


ঢাকা-চট্টগ্রাম মহাসড়ক প্রকল্পের পরিচালক সাব্বির হোসেন খান বলেন, ঢাকার যাত্রাবাড়ী থেকে চট্টগ্রামের সিটি গেট পর্যন্ত ২৩২ কিলোমিটার দূরত্বের এই মহাসড়কের কোনো এলাকায় ছয় লেন, কোনো এলাকায় আট লেন হবে তা সমীক্ষায় নির্ধারণ করা হবে। পাশাপাশি উভয় পাশে দুটি করে সার্ভিস লেন নির্মাণ হবে। আমরা সকল স্টেকহোল্ডারদের সঙ্গে বসে পরামর্শ নিব। তারপর চূড়ান্ত নকশা করা হবে।


মহাসড়ক বিভাগের কর্মকর্তারা জানান, নারায়ণগঞ্জের মদনপুর, কুমিল্লা, চট্টগ্রামের বারইয়ারহাট থেকে সিটি গেট পর্যন্ত যেসব স্থানে যানজট তৈরি হতে পারে, সেগুলোয় ওভারপাস করে দেয়া হবে। যেসব স্থানে সড়ক বাঁকা, সেগুলো সোজা করা হবে। এটি সরকারের অগ্রাধিকার প্রকল্প। গুরুত্বপূর্ণ এ প্রকল্পটিতে অর্থায়নে অনেক উন্নয়ন সহযোগী সংস্থা আগ্রহও দেখিয়েছে। তবে সম্প্রসারিত মহাসড়কটির নির্মাণ ব্যয় কত হবে, সে সম্পর্কে কোনো তথ্য দেননি মহাসড়ক বিভাগের কর্মকর্তারা।


এ প্রসঙ্গে মহাসড়ক বিভাগের সচিব এবিএম আমিন উল্লাহ নুরী বলেন, নির্মাণ ব্যয় কত হবে তা সমীক্ষায় উঠে আসবে। সমীক্ষা শেষ হওয়ার পর আমরা গণমাধ্যমকর্মীদের বিস্তারিত তথ্য জানিয়ে দেব। তবে নির্মাণ ব্যয় নিয়ে মহাসড়ক বিভাগের সচিব কোনো তথ্য না দিলেও যোগাযোগ অবকাঠামো বিশেষজ্ঞ ও বাংলাদেশ প্রকৌশল বিশ্ববিদ্যালয়ের অধ্যাপক ড. সামছুল হক মনে করছেন ঢাকা-চট্টগ্রাম মহাসড়ক সম্প্রসারণের কাজ ব্যয়বহুল হবে। তিনি বলেন, মহাসড়কটি শুরুতেই এক্সপ্রেসওয়ে মানে নির্মাণের সুযোগ ছিল। কিন্তু তা না করে চার লেন করা হয়েছে। চার লেন হয়ে যাওয়ার পর ঢাকা-চট্টগ্রাম মহাসড়কের দুই পাশে অনেক অবকাঠামো নির্মিত হয়েছে। এসব অবকাঠামো উচ্ছেদ করা এখন অনেক কঠিন ও ব্যয়বহুল হবে।


সওজ অধিদফতরের হিসাব বলছে, ঢাকার যাত্রাবাড়ী থেকে চট্টগ্রামের সিটি গেট পর্যন্ত ঢাকা-চট্টগ্রাম মহাসড়ক আট লেনে উন্নীত করতে প্রায় ৭৩ হাজার কোটি টাকা ব্যয় হতে পারে। এর আগে ২০১৭ সালে মহাসড়কটিকে চার লেনে উন্নীত করতে খরচ হয় প্রায় সাড়ে ৩ হাজার কোটি টাকা।

এদিকে, ঢাকা-চট্টগ্রাম মহাসড়কে ওজন স্কেল তুলে দেওয়া এবং উন্নত ট্রাফিক ব্যবস্থাপনার দাবি জানান স্টেকহোল্ডাররা। এ বিষয়ে চট্টগ্রাম চেম্বার অব কমার্স অ্যান্ড ইন্ডাস্ট্রির সভাপতি ওমর হাজ্জাজ বলেন, ঢাকা-চট্টগ্রাম মহাসড়ক আট লেনে উন্নীত করার দাবি আমাদের দীর্ঘদিনের। এটা দ্রুত বাস্তবায়ন করা উচিত। পাশাপাশি চট্টগ্রাম ছাড়া আর কোথাও ওজন স্কেল নেই। এতে করে পরিবহন খরচ বাড়ছে। বিষয়টি সমাধান করা উচিত।


চট্টগ্রাম জেলা পরিষদের চেয়ারম্যান এটিএম পেয়ারুল ইসলাম বলেন, মাতারবাড়ি গভীর সমুদ্রবন্দর বাস্তবায়িত হলে ঢাকা-চট্টগ্রাম মহাসড়ক আট লেনও পর্যাপ্ত হবে না। মহাসড়কের উন্নয়ন হলে রামগড় স্থল বন্দর দিয়ে ভারতের ত্রিপুরা রাজ্য ব্যবহার করে সুনামগঞ্জ, সিলেট, মৌলভীবাজার তিন ঘণ্টায় যাতায়াত করা যাবে। এতে আমাদের সময় ও অর্থ খরচ দুটোই কম হবে।


শেয়ার করুন