বাগমারায় জাতির শ্রেষ্ঠ সন্তান বীর মুক্তিযোদ্ধাদের জন্য নির্মিত হয়েছে তিনতলা বিশিষ্ট একটি আধুনিক কমপ্লেক্স ভবন। উপজেলা মুক্তিযোদ্ধা কমপ্লেক্স ভবন নির্মাণ শীর্ষক প্রকল্পের আওতায় ২ কোটি ৫৭ লাখ টাকা ব্যয়ে এটি নির্মাণ করা হয়েছে।
উপজেলা সদরের পাশেই কমপ্লেক্সটির অবস্থান। উপজেলা বীর মুক্তিযোদ্ধা কমপ্লেক্স ভবনটির নির্মাণ কাজ শেষে ২০২০ সালের আগস্টে উপজেলা প্রকৌশলীর নিকট হস্তান্তর করেছেন ঠিকাদারী প্রতিষ্ঠান নাটোরের মীম ডেভলপমেন্ট ইঞ্জিনিয়ারিং লিমিটেড।
দীর্ঘ সময় অতিবাহিত হলেও এটির আনুষ্ঠানিক উদ্বোধন না হওয়ায় কমপ্লেক্সটি ব্যবহার করতে পারছেন না বীর মুক্তিযোদ্ধারা। অতিরিক্ত কোন কার্যালয় না থাকায় উপজেলা বন কর্মকর্তার কার্যালয়ের সামনের রাস্তার ধারে পলেথিনের ছাউনির নিচে বসে যাবতীয় কার্যক্রম পরিচালনা করছেন বীর মুক্তিযোদ্ধারা। অনেক সময় সামন্য ঝড়বৃষ্টিতেই উল্টে যায় মুক্তিযোদ্ধাদের বসার সেই স্থান। দীর্ঘ প্রায় ৫ বছর ধরে অভিভাবকহীন হয়ে পড়েছে বীর মুক্তিযোদ্ধাগণ।
নেতৃত্বহীনতায় ভুগছেন উপজেলার ১৬টি ইউনিয়ন এবং ২টি পৌরসভার বীর মুক্তিযোদ্ধারা। খোঁজ নিয়ে জানা গেয়ে ২০১৭ সাল থেকে বাগমারায় বীর মুক্তিযোদ্ধাদের কমান্ডারের দায়িত্ব পালন করছেন উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা। দপ্তরিক কার্যক্রম সামলাতে গিয়ে বীর মুক্তিযোদ্ধাদেরকে সেভাবে সময় দিতে পারেন না তিনি। পাশাপাশি নেই তাঁদের স্থায়ী কোন ঠিকানা। সেদিক দিয়েও সৃষ্টি হয়েছে অনেক দূরত্ব। যথাসময়ে বীর মুক্তিযোদ্ধাদের নির্বাচন না হওয়ায় অনেকটাই বেকায়দায় পড়েছেন তারা। নির্দিষ্ট নেতৃত্বই বদলাতে পারে অনেক কিছু।
উপজেলা বীর মুক্তিযোদ্ধাদের সাথে কথা বলে জানাগেছে, বাগমারা উপজেলা জুড়ে নতুন পুরাতন মিলে সর্বমোট বীর মুক্তিযোদ্ধার সংখ্যা ৪৮১ জন। এর মধ্যে নতুন ভাবে তালিকায় নাম অন্তভুক্ত সহ জীবিত রয়েছেন ২৭২ জনের মতো বীর মুক্তিযোদ্ধা। অবশিষ্টরা এরই মধ্যে মৃত্যুবরন করেছেন। একদিকে নেই বীর মুক্তিযোদ্ধাদের কমিটি অন্যদিকে এখনো হয়নি নব-নির্মিত মুক্তিযোদ্ধা কমপ্লেক্সের উদ্বোধন।
বাংলাদেশ মুক্তিযোদ্ধা সংসদ বাগমারা উপজেলা কমান্ড এর নেতৃত্বে কেউ না থাকায় অনেক সমস্যার সম্মুখীন হতে হচ্ছে বীর মুক্তিযোদ্ধাদের। উপজেলার বীর মুক্তিযোদ্ধাদের সাংগঠনিক কাজে গতিশীলতা আনতে জরুরী ভিত্তিতে নির্বাচন প্রয়োজন। নির্বাচিত কমান্ডার না থাকায় কার হাতে তুলে দেয়া হবে আধুনিক এই বীর মুক্তিযোদ্ধা কমপ্লেক্সের দায়িত্ব তা নিয়েও সংসয় রয়েছে। জানাগেছে, মুক্তিযোদ্ধা কমপ্লেক্সের বিদ্যুৎ বিল পরিশোধ না করায় সাময়িক ভাবে সংযোগ বিচ্ছিন্ন করা হয়েছে।
সাবেক ডেপুটি কমান্ডার বীর মুক্তিযোদ্ধা আব্দুল জব্বার সরদার বলেন, আমরা জাতির শ্রেষ্ঠ সন্তান হয়েও রাস্তার পাশে বসে চালাতে হচ্ছে সংগঠন। পলেথিনের ছাউনির নিচে বসতে হচ্ছে আমাদের। দ্রুত মুক্তিযোদ্ধা কমপ্লেক্স ভবনের উদ্বোধন করে আমাদের স্থায়ী ঠিকানা প্রদানের দাবী জানাচ্ছি। প্রতিদিন চালার নিচেই একত্রিত হন বীর মুক্তিযোদ্ধা আব্দুল খালেক, নিয়ামতুল্লাহ, আমজাদ হোসেন, আবু তালেব সহ জাতির শ্রেষ্ঠ সন্তানরা।
উপজেলা পরিষদের চেয়ারম্যান বীর মুক্তিযোদ্ধা ও রাজশাহী জেলা আওয়ামী লীগের ভারপ্রাপ্ত সভাপতি অনিল কুমার সরকার বলেন, মাননীয় প্রধানমন্ত্রী বীর মুক্তিযোদ্ধাদের জন্য আধুনিক কমপ্লেক্স নির্মাণ করেছেন। মুক্তিযোদ্ধাদের আর রাস্তার ধারে বসে কার্যক্রম পরিচালনা করতে হবে না।
উপজেলা প্রকৌশলী খলিলুর রহমান বলেন, বীর মুক্তিযোদ্ধা কমপ্লেক্সের নির্মাণ কাজ শেষ করে ঠিকাদারা তা হস্তান্তর করেছে। যেহেতু আনুষ্ঠানিক ভাবে উদ্বোধন হয়নি সে কারনে বীর মুক্তিযোদ্ধারা তা ব্যবহার করতে পারছেন না।
বীর মুক্তিযোদ্ধাদের দায়িত্বপ্রাপ্ত কমান্ডার উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা ফারুক সুফিয়ান বলেন, দীর্ঘ সময় উপজেলায় নির্বাচন না হওয়ায় অনেক সমস্যায় পড়তে হচ্ছে বীর মুক্তিযোদ্ধাদের। সময় মতো নির্বাচন হলে এমন সমস্যা হতো না। বীর মুক্তিযোদ্ধাদের কমপ্লেক্স ভবন নির্মাণ হলেও উদ্বোধন না হওয়ার কারনে তাঁদের নিকট হস্তান্তর করা যাচ্ছে না। পাশাপাশি নির্বাচিত কোন বীর মুক্তিযোদ্ধা কমান্ডার না থাকায় বর্তমানে আমাকেই কমান্ডারের দায়িত্ব পালন করতে হচ্ছে।
এ ব্যাপারে বাগমারা আসনের সংসদ সদস্য ইঞ্জিনিয়ার এনামুল হক বলেন, সরকার মুক্তিযোদ্ধাদের জন্য উপজেলা পর্যায়ে আধুনিক কমপ্লেক্স ভবন নির্মাণ করেছেন। মুক্তিযোদ্ধা বিষয়ক মাননীয় মন্ত্রীর সাথে যোগাযোগ হচ্ছে তিনিই এটির উদ্বোধন করবেন। শীঘ্রই মুক্তিযোদ্ধা কমপ্লেক্সটির উদ্বোধন করা হবে। এরপরই তা বীর মুক্তিযোদ্ধাদের নিকট হস্তান্তর করা হবে।