২৮ এপ্রিল ২০২৪, রবিবার, ০৮:২২:৩০ অপরাহ্ন
পাইপলাইনে জ্বালানি তেলপরিবহন শুরু বৃহস্পতিবার
  • আপডেট করা হয়েছে : ২৫-০২-২০২৪
পাইপলাইনে জ্বালানি তেলপরিবহন শুরু বৃহস্পতিবার

চালু হওয়ার তিন মাস পর অবশেষে কুতুবদিয়া থেকে পাইপলাইনের মাধ্যমে পতেঙ্গার ইস্টার্ন রিফাইনারিতে জ¦ালানি তেল পরিবহন শুরু হচ্ছে। আগামী ২৯ ফেব্রুয়ারি (বৃহস্পতিবার) প্রথমবারের মতো জ¦ালানি তেল পরিবহন শুরু হওয়ার কথা রয়েছে। গভীর বঙ্গোপসাগরে বাস্তবায়িত ‘ইনস্টলেশন অব সিঙ্গেল পয়েন্ট মুরিং (এসপিএম) উইথ ডাবল পাইপলাইন’ প্রকল্পের আওতায় জ¦ালানি তেল খালাসে কোটি কোটি টাকা সাশ্রয়ের লক্ষ্যে এই কার্যক্রম শুরু হচ্ছে। শুরুতে কিছু যান্ত্রিক ত্রæটি ধরা পড়লেও সবকিছু ঠিকঠাক করে গভীর সাগরে নোঙর করা দুটি জাহাজ থেকে পরীক্ষামূলকভাবে খালাস করা ক্রুড অয়েল এবং ডিজেল পতেঙ্গার ইস্টার্ন রিফাইনারিতে নিয়ে আসা হবে।

এর আগে গত বছরের জুলাই মাসে গভীর সাগর থেকে জ¦ালানি তেল খালাসের উদ্যোগ নেয়া হয়। কিন্তু ক্রুড অয়েল খালাস শুরু হলে পাইপলাইনসহ প্রকল্পে বেশ কিছু ত্রæটি ধরা পড়ায় তা সম্ভব হয়নি। পরবর্তীতে ত্রæটি সারিয়ে গত ১ ডিসেম্বর সৌদি আরব থেকে আমদানি করা ৮২ হাজার টন ক্রুড অয়েলবাহী জাহাজকে বঙ্গোপসাগরে স্থাপিত ভাসমান জেটিতে (এসপিএম বয়া) বার্থিং দেয়া হয়। জাহাজটি ক্রুড অয়েল খালাস করে চলে যাওয়ার একদিন পরই অপর একটি জাহাজ ৬০ হাজার টন ডিজেল খালাস করে। ক্রুড অয়েল ও ডিজেলগুলো ওখানেই ছিল। পাইপলাইনের সামান্য জটিলতায় এগুলো ইস্টার্ন রিফাইনারি পর্যন্ত আনা সম্ভব হয়নি। ইতোমধ্যে সব ত্রæটি সারিয়ে তোলা হয়েছে। সম্পন্ন হয়েছে পরীক্ষা-নিরীক্ষাও। অবশেষে আগামী ২৯ ফেব্রুয়ারি কুতুবদিয়ার ট্যাংক থেকে পাইপলাইনে ক্রুড অয়েল আসা শুরু হবে পতেঙ্গার ইস্টার্ন রিফাইনারিতে। ইস্টার্ন রিফাইনারি এসব ক্রুড অয়েল পরিশোধন করে জ¦ালানি তেল উৎপাদন করে সংশ্লিষ্ট বিপণন কোম্পানিগুলোকে সরবরাহ করবে। আমদানি করা এসব ডিজেল সরাসরি তিনটি তেল বিপণন কোম্পানিকে দেয়া হবে।

সংশ্লিষ্ট সূত্র জানায়, পাঁচ হাজার কোটিরও বেশি টাকা ব্যয়ে ‘ইনস্টলেশন অব সিঙ্গেল পয়েন্ট মুরিং উইথ ডাবল পাইপলাইন’ শীর্ষক প্রকল্পটি বাস্তবায়ন করা হয়। গভীর সাগরে নোঙর করা মাদার ভ্যাসেল থেকে লাইটারেজ না করে পাইপলাইনের মাধ্যমে জ¦ালানি তেল খালাসের জন্য এই প্রকল্প বাস্তবায়ন করা হয়। কক্সবাজারের কুতুবদিয়ার অদূরে গভীর সমুদ্রে ‘সিঙ্গেল পয়েন্ট মুরিং’ নির্মাণ করা


হয়। ওখান থেকে ইস্টার্ন রিফাইনারি পর্যন্ত অফ শোর এবং অনশোর মিলে মোট ২২০ কিলোমিটার ডাবল পাইপলাইন স্থাপন করা হয়। এর মধ্যে ১৪৬ কিলোমিটার অফশোর পাইপলাইন এবং ৭৪ কিলোমিটার অনশোর পাইপলাইন রয়েছে। প্রকল্পের আওতায় পাইপলাইন ছাড়াও মহেশখালীতে ১ লাখ ২৫ হাজার টন ক্রুড অয়েল এবং প্রায় ৮০ হাজার টন ডিজেল সংরক্ষণের ট্যাংক নির্মাণ করা হয়। বিদেশ থেকে আমদানিকৃত ক্রুড অয়েল এবং ডিজেল ওই দুটি ট্যাংকে সংরক্ষণ করে ওখান থেকে প্রয়োজন অনুযায়ী দুটি পাইপলাইনের একটি দিয়ে ক্রুড অয়েল ইস্টার্ন রিফাইনারিতে এবং অপর পাইপলাইন দিয়ে ডিজেল পদ্মা অয়েল কোম্পানি, যুমনা অয়েল কোম্পানি এবং মেঘনা পেট্রোলিয়ামের পতেঙ্গার গুপ্তাখালস্থ প্রধান ডিপোতে পাঠানোর ব্যবস্থা রয়েছে। জার্মানির একটি বিশেষজ্ঞ প্রতিষ্ঠানের তত্ত্বাবধানে চায়না পেট্রোলিয়াম পাইপলাইন অ্যান্ড ইঞ্জিনিয়ারিং নামের কোম্পানি এই প্রকল্পের কাজ করে।

বাংলাদেশ পেট্রোলিয়াম করপোরেশন বিপিসির একজন দায়িত্বশীল কর্মকর্তা জানান, খুব কম সময়ে কুতুবদিয়া থেকে পতেঙ্গায় জ¦ালানি তেল পৌঁছাবে। এতে সময় এবং অর্থ দুটোরই সাশ্রয় হবে। প্রাথমিকভাবে বছরে অন্তত ৮শ কোটি টাকা সাশ্রয় হবে বলে তিনি মনে করেন। এই কর্মকর্তা বলেন, এই প্রকল্পটি বাস্তবায়নের মাধ্যমে দেশের জ¦ালানি তেল পরিবহনের পুরনো আমলের ধারণা পাল্টে বিশ্বমানে উন্নীত হবে। বছরের পর বছর ধরে বহির্নোঙরে নোঙর করা মাদার ভ্যাসেল থেকে লাইটারেজে করে তেল পরিবহন করা হতো। এখন এই লাইটারেজ জাহাজের খরচটি পুরোপুরি বেঁচে যাবে। এছাড়া একটি জাহাজ থেকে তেল খালাসে আগে যেখানে ১৫দিন সময় লাগত এখন তা ৩৬ থেকে ৪৮ ঘণ্টায় নেমে আসবে।

ইস্টার্ন রিফাইনারি লিমিেিটডের ব্যবস্থাপনা পরিচালক প্রকৌশলী মোহাম্মদ লোকমান জানান, প্রকল্পটি বাস্তবায়নের পর এই প্রথম পাইপলাইনে জ¦ালানি তেল পরিবাহিত হবে। এটি দেশের জ¦ালানি নিরাপত্তাসহ সার্বিক ক্ষেত্রে একটি বৈপ্লবিক পরিবর্তন নিয়ে আসবে।


শেয়ার করুন