তারল্যের চাহিদা মেটাতে ‘কারেন্সি সোয়াপ’ পদ্ধতির অধীনে বাংলাদেশ ব্যাংকে প্রায় ৫৯ কোটি ডলারের সমপরিমাণ বৈদেশিক মুদ্রা জমা দিয়ে টাকা নিয়েছে ১২টি বাণিজ্যিক ব্যাংক।
৩০ দিন মেয়াদে সবগুলো ব্যাংক এ সুবিধা নিয়েছে জানিয়ে বাংলাদেশ ব্যাংকের মুখপাত্র ও নির্বাহী পরিচালক মেজবাউল হক সাংবাদিকদের বলেন, এ পর্যন্ত ১২টি ব্যাংক ৫৮ কোটি ৮০ লাখ ডলার নিয়েছে কারেন্সি সোয়াপ করে।
কারেন্সি সোয়াপ হলো সর্বনিম্ন ৭ দিন থেকে সর্বোচ্চ ৯০ দিনের জন্য বৈদেশিক মুদ্রা জমা রেখে কেন্দ্রীয় ব্যাংক থেকে সমপরিমাণ টাকা নেওয়ার পদ্ধতি। গত ১৫ ফেব্রুয়ারি নতুন এ পদ্ধতি চালু করেছে বাংলাদেশ ব্যাংক।
এ পদ্ধতিতে মেয়াদ শেষে টাকা ফেরত দিয়ে জমা দেওয়া অর্থের সমপরিমাণ বৈদেশিক মুদ্রা নিতে পারবে বাণিজ্যিক ব্যাংক। সুবিধাটি চালু হওয়ার পর তা বাংলাদেশ ব্যাংকের রিজার্ভ বাড়াতেও ভূমিকা রাখছে।
এর সঙ্গে ফেব্রুয়ারির প্রথম তিন সপ্তাহে রেমিট্যান্স প্রবাহ বেড়ে যাওয়ায় গত ২০ ফেব্রুয়ারি বিপিএম৬ হিসেবে গ্রস রিজার্ভ হয়েছে ২০ দশমিক ১৯ বিলিয়ন ডলার। বাংলাদেশ ব্যাংকের গ্রস হিসেবে তা ২৫ দশমিক ৩২ বিলিয়ন ডলার।
জানুয়ারি শেষে বিপিএম৬ পদ্ধতিতে রিজার্ভ ছিল ১৯ দশমিক ৪২ বিলিয়ন ডলার এবং বাংলাদেশ ব্যাংকের গ্রস হিসেবে তা ছিল ২৫ বিলিয়ন ডলার।
বৈদেশিক মুদ্রার সংকটে এখন শুধু বাণিজ্যিক ব্যাংকের কাছে ডলার বিক্রি করছে কেন্দ্রীয় ব্যাংক। চলতি অর্থবছরের জানুয়ারি পর্যন্ত ৯ বিলিয়ন ডলার বিক্রি করা হয়েছে রিজার্ভ থেকে।
যে মুদ্রা নেওয়া হয় নির্ধারিত মেয়াদ শেষে সুদসহ সে মুদ্রা ফেরত দিতে হয়। সোয়াপের ক্ষেত্রে সুদহারের হিসাব হয় রেপো এবং ডলারের তিন মাস মেয়াদি বেঞ্চমার্ক রেট এসওএফআরের মধ্যকার পার্থক্যের ভিত্তিতে। বর্তমানে রেপোর সুদহার ৮ শতাংশ এবং এসওএফআর ৫ দশমিক ৩৪ শতাংশ। ফলে ব্যাংকগুলো এখন ডলার রেখে ২ দশমিক ৬৬ শতাংশ সুদ পাবে।
২০২১ সালের আগস্টে বৈদেশিক মুদ্রার রিজার্ভ ছিল ৪৮ বিলিয়ন ডলারের ওপরে। সরকারের সার, জ্বালানি, খাদ্যসহ বিভিন্ন পণ্য আমদানির জন্য রিজার্ভ থেকে প্রায় ৩০ বিলিয়ন ডলার বিক্রি করেছে কেন্দ্রীয় ব্যাংক। এতে রিজার্ভ কমে চলতি মাসের শুরুর দিকে ১৯ বিলিয়নের ঘরে নামে। এখন রিজার্ভ থেকে ডলার বিক্রি কমিয়েছে কেন্দ্রীয় ব্যাংক। আমদানি নিয়ন্ত্রণের ধারাও অব্যাহত আছে। একই সময়ে সোয়াপের মাধ্যমে ব্যাংক থেকে ডলার আসায় রিজার্ভ আবার বাড়ছে। যদিও নিট রিজার্ভে এটা যোগ হবে না। তবে গ্রস রিজার্ভে কেন্দ্রীয় ব্যাংক এটা দেখাতে পারছে।
আইএমএফের ৪৭০ কোটি ডলার ঋণের জন্য বিভিন্ন শর্ত মানতে হচ্ছে। সংস্থাটির লক্ষ্যমাত্রা অনুযায়ী আগামী মার্চে নিট রিজার্ভ রাখতে হবে ১৯ দশমিক ২৬ এবং জুনে ২০ দশমিক ১০ বিলিয়ন ডলার। বিপিএম৬ ম্যানুয়াল অনুযায়ী গ্রস রিজার্ভ থেকে সাড়ে ৪ বিলিয়ন ডলারের বেশি বাদ দিয়ে নিট রিজার্ভের হিসাব হয়।