২১ নভেম্বর ২০২৪, বৃহস্পতিবার, ০৫:৪৪:২৮ অপরাহ্ন
রমজানকেন্দ্রিক সব পণ্যের দাম ঊর্ধ্বমুখী
  • আপডেট করা হয়েছে : ০৯-০৩-২০২৪
রমজানকেন্দ্রিক সব পণ্যের দাম ঊর্ধ্বমুখী

দেশের বৃহৎ ভোগ্যপণ্যের বাজার চাক্তাই-খাতুনগঞ্জে রমজানকেন্দ্রিক সব পণ্যের দাম বেড়েছে। সরকারের নানা উদ্যোগের পরও কোনো পণ্যের দাম কমার লক্ষণ নেই। উলটো কিছু পণ্যের দাম বেড়েই চলছে। এমন পরিস্থিতির মধ্যেই রোজার প্রস্তুতি নিতে শুরু করেছেন লোকজন।


নিত্যপণ্যের দাম কমবে এমন আশায় সরকার শুল্ক ছাড় দিয়েছে। এর পরও দাম বাড়লে ব্যবস্থা নেওয়ার হুঁশিয়ারি দিয়েছিলেন বাণিজ্য প্রতিমন্ত্রী। কিন্তু চাক্তাই-খাতুনগঞ্জে ভোগ্যপণ্যের দামে এর প্রভাব নেই। আগের মতোই অতিরিক্ত দামে বিক্রি হচ্ছে ভোগ্যপণ্য। এমনকি শুল্ক ছাড়ের পর উলটো চিনির দাম এক দফা বেড়েছে। সোমবার এসআলম গ্রুপের সুগার মিলে অগ্নিকাণ্ডের পর ফের বেড়েছে চিনির দাম। চিনির দাম মনপ্রতি (৩৭.৩২ কেজি) বেড়েছে ১০০ টাকা থেকে ১৫০ টাকা পর্যন্ত। চট্টগ্রামের বিভিন্ন উপজেলা দাম বৃদ্ধির হার আরও বেশি। অথচ চিনির দাম কমাতে তিন মাসের ব্যবধানে দুই দফায় কমানো হয়েছে আমদানি শুল্ক। সর্বশেষ ৮ ফেব্রুয়ারি আমদানি শুল্ক কমানোর পরও দাম বেড়েছে। আসন্ন রমজান ও গ্রীষ্মকালীন মৌসুমে চিনির বাড়তি চাহিদাকে পুঁজি করে দাম বাড়ানো হচ্ছে বলে জানিয়েছেন আমদানিকারক ও ব্যবসায়ীরা। সবজির দাম কিছুটা কমলেও মাংসের দাম আগের মতোই।


ভোক্তাদের অভিযোগ, ‘রমজানে ভোগ্যপণ্যের বাজার স্থিতিশীল রাখতে শুল্ক ছাড় করা হচ্ছে। অন্যদিকে বাড়িয়ে প্রজ্ঞাপন জারি করা হচ্ছে। এতে ব্যবসায়ীরা দাম বাড়িয়ে বিক্রি সুযোগ পাচ্ছে। সরকার কোনো পণ্যের দাম শুল্ক বাড়ালে ব্যবসায়ীয়রা মিনিটের মধ্যে কার্যকর করে। আর দাম কমালে দিনের পর দিনও কার্যকর হয় না। সরকার নির্ধারিত দাম কাগজ-কলমেই সীমাবদ্ধ থাকে। নির্ধারিত দাম বাজারে কার্যকর হয়েছে কি-না, তা যাচাই-বাছাই করারও যেন কেউ নেই।’


চাক্তাই-খাতুনগঞ্জের ব্যবসায়ীরা জানান, রমজান মাসে যেসব পণ্যের চাহিদা বেশি সেসব পণ্যের দাম বেড়েছে। সরকারের নানা উদ্যোগের পরও কোনো কাজে আসছে না। সোমবার সকালে চাক্তাই-খাতুনগঞ্জে পাইকারি বাজারে মনপ্রতি চিনির দাম ছিল চার হাজার ৯২০ টাকা। সে হিসাবে প্রতিকেজি চিনির দাম পাইকারি বাজারে উঠেছে ১৩১ দশমিক ৮৪ টাকা। এদিন বিকালে এস আলম গ্রুপের চিনির পরিশোধন কারখানায় আগুন লাগে। আর পরদিন সকালে চিনির দাম বেড়ে যায়। শুক্রবার সকালে পাইকারি বাজারে মনপ্রতি চিনি বিক্রি হচ্ছে পাঁচ হাজার ৫০ টাকা থেকে পাঁচ হাজার ১০০ টাকায়। সে হিসাবে পাইকারি বাজারে প্রতি কেজি চিনির দাম ১৩৫ টাকার বেশি। আর খুচরা বাজারে চিনি বিক্রি হচ্ছে ১৪৩ টাকা থেকে ১৪৫ টাকায়। এদিকে শুল্ক কমানোর পরও বাজারে খেজুরের দাম বেড়েছে। খেজুর মানভেদে কেজিতে ৫০ থেকে ১০০ টাকা বেড়েছে। সাধারণ মানের খেজুর প্রায় ৪০ থেকে ৫০ শতাংশ দাম বেড়ে ৪৫০ থেকে ৬০০ টাকা পর্যন্ত বিক্রি হচ্ছে। ভালো মানের খেজুর আজোয়া ও মরিয়ম মানভেদে কেজি ৮০০ থেকে এক হাজার ৫০০ টাকায় বিক্রি হচ্ছে। বিভিন্ন সুপারশপে উন্নত মানের খেজুর তিন হাজার টাকা পর্যন্ত বিক্রি হচ্ছে। এছাড়া বেশ কিছু ভোগ্যপণ্যের দাম বেড়েছে। প্রতি কেজি ছোলার ডাল ১০০ থেকে ১১০ টাকা, অ্যাংকর ডাল ৭৫ থেকে ৮০ টাকা, ডাবলির ডাল ৭৫ টাকা, মোটা দানার মসুর ডাল ১০৫ থেকে ১১০ টাকা, চিকন মসুর ডাল ১৩৫ থেকে ১৪০ টাকা, মোটা দানার মুগ ডাল ১৪৫ থেকে ১৫০ টাকা, চিকন মুগ ডাল ১৭০ থেকে ১৮০ টাকা ও খেসারি ডাল ১০৫ থেকে ১১০ টাকা দরে বিক্রি হচ্ছে। অন্যান্য পণ্যের মধ্যে খোলা আটা ৫০ থেকে ৫৫ টাকা, প্যাকেট আটা ৬৫ থেকে ৬৮ টাকা, খোলা ময়দা ৬৫ থেকে ৭০ টাকা এবং প্যাকেট ময়দা ৭৫ থেকে ৮০ টাকা দরে বিক্রি হচ্ছে।


তবে ভোজ্যতেল সয়াবিন আমদানিতে শুল্ক কমানোর পর প্রতি লিটার বোতলজাত সয়াবিন তেলের দাম ১৭৩ থেকে কমিয়ে ১৬৩ টাকা করা হয়। যা গত ১ মার্চ থেকে কার্যকর হলেও বাজারে নতুন দরের তেল পাওয়া যাচ্ছে দুই-তিন দিন ধরে। আন্তর্জাতিক বাজারে ভোজ্যতেলের দাম কমতে শুরু করেছে। ফলে দেশের বৃহৎ ভোগ্যপণ্যের বাজার চাক্তাই-খাতুনগঞ্জে প্রতিমনে (৩৭.৩২ লিটার) ৩০০ টাকা থেকে ৩৫০ টাকা কমেছে। শুক্রবার সকালে চাক্তাই-খাতুনগঞ্জে প্রতিমন খোলা পাম তেল বিক্রি হয়েছে চার হাজার ৮০০ টাকা দরে। যা এক মাস আগে ছিল চার হাজার ৬০০ টাকা দরে। আর পাইকারি বাজারে মনপ্রতি সয়াবিন তেল বিক্রি হচ্ছে পাঁচ হাজার ৮০০ টাকা দরে।


চাক্তাই-খাতুনগঞ্জ আড়তদার সমিতির সাধারণ সম্পাদক মহিউদ্দিন জানান, ভোজ্যতেলের দাম আগের চেয়ে মনপ্রতি আড়ইশ টাকার বেশি কমেছে। পাশাপাশি আমদানি মূল্যও কমেছে।


বাজারদর : চট্টগ্রামে কাঁচাবাজারে এখনো শীতকালীন সবজি থাকায় দাম কিছুটা নিম্নমুখী। স্থিতিশীল রয়েছে মাংসের দাম। বাজার ঘুরে দেখা যায়, প্রতি কেজি মুলা ৩০ থেকে ৩৫ টাকা, শালগম ৪০ টাকা, করলা ৬০ থেকে ৮০ টাকা, শসা ৬০ টাকা, লতি ৮০ টাকা, শিম ৫০ থেকে ৬০ টাকা, বরবটি ৮০ টাকা, পেঁপে ৩৫ থেকে ৪০ টাকা ও গাজর বিক্রি হচ্ছে ৪০ টাকা। এছাড়া প্রতি কেজি বেগুন জাতভেদে ৬০ থেকে ১০০ টাকা, ক্ষীরাই ৫০ টাকা, টমেটো ৪০ থেকে ৪৫ টাকা, পেঁয়াজের কলি বিক্রি হচ্ছে ৩০ টাকা। আর প্রতি পিস লাউ ৫০ থেকে ৭০ টাকা, আকারভেদে প্রতি পিস ফুলকপি ৩০ থেকে ৫০ টাকা, বাঁধাকপি ৩৫ থেকে ৪০ টাকা বিক্রি হচ্ছে।


শেয়ার করুন