২১ নভেম্বর ২০২৪, বৃহস্পতিবার, ১০:২৬:০৫ অপরাহ্ন
ঈদের আগেই ফিরতে চান জিম্মি নাবিকরা
  • আপডেট করা হয়েছে : ১৭-০৩-২০২৪
ঈদের আগেই ফিরতে চান জিম্মি নাবিকরা

সোমালি জলদস্যুদের হাতে জিম্মি জাহাজ এমভি আব্দুল্লাহর ২৩ নাবিক ঈদের আগেই প্রিয়জনের কাছে ফিরতে চান। ভয়েস মেসেজ ও ফোনে স্বজনদের কাছে তাদের আকুল এই ইচ্ছার কথা জানাচ্ছেন। 


বাংলাদেশে উৎকণ্ঠায় থাকা নাবিক পরিবারগুলোও চাইছে তাদের স্বজনরা ঈদের আগেই ফিরে আসুক। না হয় তাদের জন্য এবার ঈদের আনন্দ বলে কিছুই থাকবে না। তারা জিম্মি নাবিকদের উদ্ধারে সরকার ও মালিকপক্ষের তৎপরতা আরও বাড়ানোর আকুতি জানান। 


যদিও সরকার ও মালিকপক্ষ বলছে, জিম্মি নাবিক ও জাহাজ উদ্ধারে তাদের চেষ্টার ত্রুটি নেই। 

পররাষ্ট্রমন্ত্রী ড. হাছান মাহমুদ জিম্মিদের বিষয়ে সংবাদ প্রচারে গণমাধ্যমকে সংযত হওয়ার আহ্বান জানান। 


শনিবার দুপুরে চট্টগ্রামে তিনি সাংবাদিকদের বলেন, স্যাটেলাইটের মাধ্যমে বাংলাদশের সব টেলিভিশন জিম্মিকারী জলদস্যুরা দেখে বা দেখার সুযোগ আছে। জিম্মিদের পরিবারের প্রতিক্রিয়া যখন তারা দেখে তখন জলদস্যুরা অনমনীয় হয়। জিম্মিদের উদ্ধারে সরকারের সমন্বিত প্রচেষ্টা অব্যাহত রয়েছে বলে জানান মন্ত্রী।


এদিকে দিন যতই যাচ্ছে জিম্মি নাবিকরা খাদ্য ও পানি সংকটের আশঙ্কা করছেন। জাহাজে আর মাত্র ১৫ দিনের মতো খাবার মজুত আছে। 


শুক্রবার বিকালে এমভি আব্দুল্লাহ জাহাজটি সোমালিয়ার গ্যারাকাড উপকূল থেকে সরিয়ে উত্তর দিকে জলদস্যুদের নতুন ডেরায় নেওয়া হয়েছে। রাত ৮টার দিকে এটি গোদবজিরান উপকূল থেকে ৪ নটিক্যাল মাইল দূরে নোঙর করে। 


নতুন ডেরায় অস্ত্রধারী আরও ৩০-৪০ জলদস্যু এই জাহাজে উঠেছে। তারা জাহাজের খাবার ইচ্ছেমতো খেয়ে ফেলছে। এ অবস্থায় তাদের সামনে অপেক্ষা করছে কঠিন বিপদ। এই বিপদ থেকে কীভাবে পরিত্রাণ পাওয়া যাবে তা ভেবেই জিম্মি নাবিকরা দিশেহারা হয়ে পড়েছেন।  


এক নাবিক ভয়েস মেসেজে  বলেছেন, ‘একটি ওয়াশরুম ব্যবহার করি সবাই। বড় বড় ফ্রিগেট আসছে দুইটা। একদম সব ইক্যুইপমেন্টস নিয়ে। কিন্তু ওরা ভয় পায় না এগুলো। ওরা আমাদের মাথায় গুলি ধরে রাখে। বড় বড় মেশিনগান গান তাক করে রাখছে। এ অবস্থায় ঘুম যা হওয়ার হচ্ছে। যেহেতু জলদস্যুরা আমাদের সঙ্গে খাওয়া-দাওয়া করছে, আমাদের পানি ব্যবহার করছে। ১৫ দিন পর খাওয়া-দাওয়া যখন শেষ হয়ে যাবে তখন আমরা খুব কষ্টে পড়ে যাব।’


চিফ অফিসার আতিক উল্লাহ খানের ভাই আসিফ নুর শনিবার যুগান্তরকে বলেন, শুক্রবার বিকালে স্যাটেলাইটের মাধ্যমে এক মিনিট কথা বলেছেন তার ভাই। সবার আগে পানি সংকটে পড়বেন বলে জানিয়েছেন। একসঙ্গে ৪০ জন খাওয়া-দাওয়া করার কারণে দ্রুত খাদ্য ফুরিয়ে যাচ্ছে বলেও জানিয়েছেন। এ অবস্থায় ঈদের আগেই যাতে তাদের মুক্ত করার ব্যবস্থা করা হয় সেই আকুতি জানিয়েছেন চিফ অফিসার। 


জাহাজের বর্তমান অবস্থান: জিম্মি জাহাজ এমভি আব্দুল্লাহ সোমালিয়ার গ্যারাকাড উপকূল থেকে সরিয়ে নেওয়া হয়েছে। 


ইইউর যুদ্ধ জাহাজ অপারেশন আটলান্টা ও ভারতীয় যুদ্ধ জাহাজ এমভি আব্দুল্লাহ ও জলদস্যুদের গতিবিধি পর্যবেক্ষণ করার কারণে ওই স্থানে নিরাপদ মনে করছিল না জলদস্যুরা। সে কারণেই হামলার আশঙ্কায় জাহাজটি সরিয়ে নেওয়া হয়েছে। 


বাংলাদেশ মার্চেন্ট মেরিন অফিসার্স অ্যাসোসিয়েশনের সাধারণ সম্পাদক সাখাওয়াত হোসেন বলেছেন, দ্বিতীয় দফায় গ্যারাকাড উপকূল থেকে ৪৫-৫০ নটিক্যাল মাইল উত্তরে সোমালিয়ার ‘গোদবজিরান’ উপকূল থেকে ৪ নটিক্যাল মাইল দূরে জাহাজটি নোঙর করা হয়েছে। 


জলদুস্যদের পক্ষ থেকে শনিবার পর্যন্ত জাহাজের মালিকপক্ষ বা সরকারি কোনো সংস্থার সঙ্গে যোগাযোগ করা হয়নি বলেও জানান সাখাওয়াত হোসেন। 


জাহাজের খাবার ইচ্ছেমতো খেয়ে ফেলছে দস্যুরা: শনিবার বিকাল ৩টার দিকে জিম্মি নাবিক শামসুদ্দিন চট্টগ্রামে তার পরিবারের এক সদস্যের সঙ্গে এক মিনিটের মতো কথা বলেছেন। 


ওই সদস্যের সঙ্গে কথা বলেছে যুগান্তর। শামসুদ্দিনের পরিবারকে দেওয়া তথ্য অনুযায়ী নতুন আস্তানায় নোঙর করার পর জাহাজে আরও ৩০-৪০ জন জলদস্যু উঠেছে। তাদের সবার হাতেই রয়েছে স্টেনগান, একে-৪৭ রাইফেলের মতো ভারী অস্ত্রশস্ত্র। 


তারা জাহাজে মজুত খাদ্য ইচ্ছেমতো খেয়ে ফেলছে। জাহাজের ক্যাপ্টেনকে অস্ত্রের মুখে জিম্মি করে নতুন নির্দেশনা জারি করেছে-২৪ ঘণ্টায় ব্যবহারের জন্য পানি দেওয়া হবে এক ঘণ্টা। ওয়াশরুমে ব্যবহার করতে হবে সাগরের পানি। সেহেরি ও ইফতারে দুই বেলা খাওয়ার দেওয়া হবে। 


ডিউটিরত নাবিকদের কেবিনে থাকতে দেওয়া হলেও অন্য নাবিকদের থাকতে দেয়া হচ্ছে ইঞ্জিন রুমে গাদাগাদি করে। জাহাজের ক্যাপ্টেন ও চিফ অফিসারকে অস্ত্রের মুখে জিম্মি করে রেখেছে। 


জলদস্যুদের নির্দেশ ছাড়া তাদের ঘাড় ফেরাতে দেওয়া হচ্ছে না। এদিক-ওদিক করলেই রাইফেলের বাঁট দিয়ে গুঁতো দেওয়া হচ্ছে। কেবিনে থাকা নাবিকদের এক-দুই ঘণ্টা পরপর এসে নক করে যাচ্ছে জলদস্যুরা।  


নাবিক পরিবারের ওই সদস্য জানান, এ অবস্থায় দিন যতই যাচ্ছে জিম্মি নাবিকদের মানসিক অবস্থা ততই দুর্বল হয়ে যাচ্ছে। তাদের উদ্ধারে মালিকপক্ষ ও সরকার যাতে দ্রুত পদক্ষেপ নেয় সেই আকুতি জানিয়েছেন জিম্মি এই নাবিক পরিবারের সদস্যরা।


জাহাজের মালিকপক্ষ কবির গ্রুপের অধীন এসআর শিপিং-এর সিইও মেহেরুল করিম যুগান্তরকে বলেন, গ্যারাকাড উপকূল থেকে জাহাজটি জলদস্যুদের নতুন আস্তানা গোদবজিরান উপকূলে নেওয়া হয়েছে। শনিবার বিকাল পর্যন্ত ওইখানেই ছিল। নতুন কোনো আপডেটও আমাদের কাছে নেই।


শেয়ার করুন