আবারও সাধারণ ক্ষমার (ট্যাক্স অ্যামনেস্টি) আওতায় কালোটাকা বা অপ্রদর্শিত আয় বৈধ করার সুযোগ দেওয়া হচ্ছে। অবশ্য এজন্য আগের চাইতে বেশি আয়কর দিতে হবে। আগে ছিল ১০ শতাংশ, আগামীতে দিতে হবে ১৫ শতাংশ। এ পদ্ধতিতে টাকা বৈধ করলে সরকারের অন্য কোনো সংস্থা প্রশ্ন করতে পারবে না। এ বিষয়ে প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা সিদ্ধান্ত দিয়েছেন। অর্থ মন্ত্রণালয় ও জাতীয় রাজস্ব বোর্ড (এনবিআর) সূত্রে এসব তথ্য জানা গেছে।
২০২৪-২৫ অর্থবছরের বাজেট চূড়ান্ত করতে এনবিআর চেয়ারম্যানের নেতৃত্বে মঙ্গলবার সকালে একটি প্রতিনিধিদল গণভবনে প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার সঙ্গে বৈঠক করে। অর্থমন্ত্রী শারীরিকভাবে অসুস্থ থাকায় জুম বৈঠকে অংশ নেন, অর্থ প্রতিমন্ত্রী ওয়াসিকা আয়শা খান উপস্থিত ছিলেন। এনবিআরের পক্ষে বৈঠকে আয়কর, ভ্যাট ও শুল্কনীতির ঊর্ধ্বতন কর্মকর্তারা উপস্থিত ছিলেন।
সূত্র জানায়, প্রতিবারের ন্যায় এবারও বৈঠকে প্রধানমন্ত্রী জনগুরুত্বপূর্ণ ও জনস্বার্থসংশ্লিষ্ট বিষয়ে সিদ্ধান্ত দিয়েছেন। আগামী বাজেটে করমুক্ত আয়ের সীমা, করপোরেট কর, পুঁজিবাজারে ক্যাপিটাল গেইন ট্যাক্স, কালোটাকা, এমপিদের গাড়িতে শুল্কারোপ ও মোবাইল ফোনে কথা বলায় সম্পূরক শুল্কের বিষয়ে দিকনির্দেশনা দিয়েছেন। বাজেটে করমুক্ত আয়ের সীমা না বাড়ানো, শর্তসাপেক্ষে আড়াই শতাংশ করপোরেট কর কমছে, পুঁজিবাজারে ক্যাপিটাল গেইনের ওপর ট্যাক্স আরোপ, এমপিদের শুল্কমুক্ত সুবিধায় গাড়ি আমদানি বাতিল এবং কালোটাকা সাদা করতে ট্যাক্স অ্যামনেস্টি দেওয়ার বিষয়ে প্রধানমন্ত্রী সিদ্ধান্ত দিয়েছেন।
২০২০-২১ অর্থবছরের বাজেটে ১০ শতাংশ কর দিয়ে আয়কর রিটার্নে অপ্রদর্শিত নগদ অর্থ, ব্যাংক আমানত প্রদর্শনের সুযোগ দেওয়া হয়। একইসঙ্গে বর্গমিটার প্রতি নির্দিষ্ট হারে কর দিয়ে প্লট-ফ্ল্যাট প্রদর্শনের সুযোগ দেওয়া হয়। এ সুযোগ কাজে লাগিয়ে তখন ১১ হাজার ৮৫৯ জন করদাতা কালোটাকা সাদা করেন। এর মধ্যে পুঁজিবাজারে বিনিয়োগ করেন ২৮৬ জন, জমিতে এক হাজার ৬৪৫ জন, ফ্ল্যাটে দুই হাজার ৮৭৩ জন এবং নগদ অর্থ প্রদর্শন করেছেন সাত হাজার ৫৫ জন। এরপরের বছর কালোটাকা সাদা করার সাড়া না পাওয়ায় এ সুবিধা বাতিল করা হয়েছে। সূত্র জানায়, আগামী বাজেটে ১৫ শতাংশ কর দিয়ে আয়কর রিটার্নে অপ্রদর্শিত নগদ অর্থ, ব্যাংক আমানত প্রদর্শনের সুযোগ দেওয়া হচ্ছে। মূলত কালোটাকাকে অর্থনীতির মূল ধারায় আনতে এ উদ্যোগ থাকছে। এক্ষেত্রে আগের মতোই অ্যামনেস্টি সুবিধা থাকছে। অর্থাৎ সরকারের অন্য কোনো সংস্থা এ বিষয়ে প্রশ্ন করতে পারবে না।
কালোটাকার ইতিহাস পর্যালোচনা করে দেখা গেছে, স্বাধীনতার পর থেকে নানাভাবেই কালোটাকা বিনিয়োগের সুযোগ দেওয়া হয়। মূলত কালোটাকাকে অর্থনীতির মূল ধারায় আনতে এ সুযোগ দেওয়া হয়। ৭১-৭৫ সাল পর্যন্ত দুই কোটি ২৫ লাখ টাকা সাদা করা হয়েছে। সেখান থেকে তৎকালীন সময়ে সরকার মাত্র ১৯ লাখ টাকা আয়কর পায়। পরে এ সুবিধা বহাল থাকায় প্রতিবছরই কালোটাকা সাদা করার অঙ্ক বাড়তে থাকে। ৭৬-৮০ সাল পর্যন্ত ৫০ কোটি ৭৬ লাখ টাকা সাদা করা হয়, সরকার আয়কর পায় ৮১ লাখ টাকা। ৮১-৯০ পর্যন্ত ৪৫ কোটি টাকা সাদা হয়, সরকার আয়কর পায় চার কোটি ৫৯ লাখ টাকা।
৯১-৯৬ পর্যন্ত ১৫০ কোটি টাকা সাদা হয়, আয়কর আদায় হয় ১৫ কোটি টাকা। এরপর ধারাবাহিকভাবে কালোটাকার অঙ্ক বাড়তে থাকে। ১৯৯৭-২০০০ পর্যন্ত এক লাফে ৯৫০ কোটি টাকা সাদা হয়, আয়কর আদায় হয় ১৪১ কোটি টাকা। পরের ৭ বছর অর্থাৎ ২০০১-০৭ পর্যন্ত ৮২৭ কোটি টাকা, ২০০৭-০৯ পর্যন্ত এক হাজার ৬৮২ কোটি টাকা, ২০০৯-১৩ পর্যন্ত এক হাজার ৮০৫ কোটি টাকা ও ২০১৩-২০ পর্যন্ত ১১ হাজার ১০৭ কোটি টাকা মূল ধারার অর্থনীতিতে প্রবেশ করে। এ থেকে সরকার রাজস্ব পায় যথাক্রমে ১০২ কোটি, ৯১১ কোটি, ২৩০ কোটি ও এক হাজার ৭৩ কোটি টাকা।