০১ নভেম্বর ২০২৫, শনিবার, ১২:৪৯:০৮ অপরাহ্ন
নির্মল বায়ুর শহরের খ্যাতি হারিয়েছে রাজশাহী
  • আপডেট করা হয়েছে : ২১-১০-২০২৫
নির্মল বায়ুর শহরের খ্যাতি হারিয়েছে রাজশাহী

বাংলাদেশের ‘সবচেয়ে পরিচ্ছন্ন ও সবুজ নগরী’ আখ্যা পাওয়া রাজশাহী এখন অন্যতম দূষণের নগরী। ২০১৬ সালে নির্মল বায়ুর জন্য আন্তর্জাতিক স্বীকৃতি পেয়েছিল এই শহর। সাম্প্রতিক সময়ে বায়ুদূষণে ঢাকাকেও ছাড়িয়ে গেছে রাজশাহী।


সুইজারল্যান্ডভিত্তিক পরিবেশ পর্যবেক্ষণ সংস্থা আইকিউএয়ারের তথ্য অনুযায়ী, গতকাল সোমবার সকালে বাংলাদেশের আটটি বিভাগীয় শহরের মধ্যে সবচেয়ে খারাপ বায়ুমান রেকর্ড হয়েছে রাজশাহীতে–১৬৭। তালিকায় দুই নম্বরে রয়েছে খুলনা–১৫৭। এ ছাড়া ঢাকায় ১৫২, রংপুরে ১৩৭, বরিশালে ১১৪, ময়মনসিংহে ১১৩, সিলেটে ৮২ ও চট্টগ্রামের বায়ুমান ৭৩।


২০১৬ সালে যুক্তরাজ্যের দ্য গার্ডিয়ান পত্রিকায় প্রকাশিত এক প্রতিবেদনে বলা হয়েছিল, বাতাসে ভাসমান মানবদেহের জন্য ক্ষতিকর কণা দ্রুত কমিয়ে আনার ক্ষেত্রে বিশ্বে সবচেয়ে এগিয়ে আছে রাজশাহী শহর। বিশ্ব স্বাস্থ্য সংস্থার (ডব্লিউএইচও) উপাত্তের ভিত্তিতে প্রতিবেদনটি প্রকাশ হয়। তবে ৯ বছর পর রাজশাহী শহরের বাতাসের অবস্থা আর তেমন নেই।

আইকিউএয়ারের মানদণ্ড অনুযায়ী, স্কোর শূন্য থেকে ৫০-এর মধ্যে থাকলে বায়ুর মান ‘ভালো’ বলে বিবেচিত হয়। ৫১ থেকে ১০০ হলে মাঝারি বা ‘সহনীয়’ ধরা হয়। ১০১ থেকে ১৫০ স্কোরকে ‘সংবেদনশীল গোষ্ঠী’র (অসুস্থ বা শিশু-বৃদ্ধ) জন্য অস্বাস্থ্যকর ধরা হয়। স্কোর ১৫১ থেকে ২০০ পর্যন্ত থাকলে সে বাতাস ‘অস্বাস্থ্যকর’। স্কোর ২০১ থেকে ৩০০ হলে ‘খুবই অস্বাস্থ্যকর’ এবং ৩০১ এর বেশি হলে তা ‘দুর্যোগপূর্ণ’ বলে বিবেচিত হয়।


বায়ুদূষণ মানবদেহে ভয়াবহ প্রভাব ফেলে। বাতাসে থাকা সূক্ষ্ম কণিকা ও বিষাক্ত গ্যাস শ্বাসপ্রশ্বাসের মাধ্যমে ফুসফুসে ঢুকে শ্বাসকষ্ট, হাঁপানি ও ফুসফুসের ক্যান্সারের ঝুঁকি বাড়ায়। দীর্ঘমেয়াদি দূষণের প্রভাবে হৃদরোগ, স্ট্রোক, এমনকি অকালমৃত্যুও ঘটতে পারে। শিশু ও বয়স্কদের ক্ষেত্রে এর ক্ষতি বেশি।

পরিবেশবিদরা বলছেন, সবচেয়ে ক্ষতিকর ধুলা হলো ফাইন পার্টিকুলার ম্যাটার (পিএম ২.৫), যা গাড়ি, কলকারখানা, ইটভাটা ও নির্মাণকাজ থেকে নির্গত হয়। রাজশাহীতে ইটভাটা কম এবং কলকারখানা সীমিত হলেও যানবাহনের কালো ধোঁয়া ও নির্মাণকাজের ধুলার কারণে দূষণ বাড়ছে। 

রাজশাহী বিশ্ববিদ্যালয়ের পরিবেশ বিজ্ঞান ইনস্টিটিউটের সভাপতি অধ্যাপক গোলাম মোস্তফা বলেন, শহরে চলমান নির্মাণকাজের কারণে রাস্তার বালু উড়ছে, ব্যাটারিচালিত অটোরিকশাও ধুলা ছড়াচ্ছে। বিভিন্ন যানবাহনের কালো ধোঁয়া বাতাস দূষিত করছে। কিন্তু কার্যকর কোনো পদক্ষেপ নেই।

রাজশাহী মহানগর পুলিশের ট্রাফিক বিভাগের উপকমিশনার নূরে আলম সিদ্দিকী বলেন, ‘বড় গাড়ির কালো ধোঁয়া বের হলে আমরা ব্যবস্থা নিই। আমরা এমন গাড়িকে ফিটনেস সনদ না দেওয়ার জন্য বাংলাদেশ সড়ক পরিবহন কর্তৃপক্ষকে (বিআরটিএ) জানাই।’


এ বিষয়ে বিআরটিএ রাজশাহী কার্যালয়ের সহকারী পরিচালক আবুল কালাম আজাদ বলেন, ‘ফিটনেস সনদ দেওয়ার সময় গাড়ি চালু করে দেখি। যদি কালো ধোঁয়া না পাই ছেড়ে দিই। কালো ধোঁয়া পেলে যন্ত্রাংশ পরীক্ষা করি। সরাসরি গাড়ির ধোঁয়া পরীক্ষার জন্য দেশের কোথাও কোনো যন্ত্র নেই। এসব যন্ত্রের অভাবে বিআরটিএ কাজ করতে পারে না।’

এদিকে গতকাল দুপুরে রাজশাহী সিটি করপোরেশনের (রাসিক) জরুরি বৈঠকে নির্মাণাধীন ফ্লাইওভার ও সাধারণ বাড়ি নির্মাণের কারণে ধূলিকণা বৃদ্ধি নিয়ে আলোচনা হয়। ঊর্ধ্বতন কর্মকর্তারা প্রধান পরিচ্ছন্ন কর্মকর্তা শেখ মো. মামুন ডলাকে ধুলা কমানোর নির্দেশ দিয়েছেন। রাসিকের পরিবেশ উন্নয়ন কর্মকর্তা মাহমুদ-উল-হাসান বলেন, ফ্লাইওভার নির্মাণের কারণে ধুলা বেড়েছে। পানি ছিটিয়ে ধুলা কমানো সম্ভব কিনা, প্রকৌশল শাখাকে ঠিকাদারদের দিয়ে কাজ করানোর নির্দেশ দেওয়া হয়েছে।


শেয়ার করুন