বেশি রাজস্ব আয় করেও লক্ষ্যমাত্রা পূরণ করতে পারছে না জাতীয় রাজস্ব বোর্ড (এনবিআর)। গত অর্থবছরের একই সময়ের তুলনায় ১৪ দশমিক ৭৯ শতাংশ রাজস্ব প্রবৃদ্ধি অর্জন করার পরও লক্ষ্য পূরণ করা সম্ভব হচ্ছে না। বরং ঘাটতি ছাড়িয়ে গেছে ২৬ হাজার ২৬৩ কোটি টাকা। চলতি ২০২৩-২৪ অর্থবছরের প্রথম ১০ মাসে বার্ষিক লক্ষ্যমাত্রার ৭০ শতাংশ রাজস্ব আদায় হয়েছে। মূল লক্ষ্যমাত্রার তুলনায় ঘাটতি ৪৬ হাজার ২৬৩ কোটি টাকা কম। এনবিআরের রাজস্ব প্রতিবেদন পর্যালোচনা করে এ তথ্য জানা যায়।
আন্তর্জাতিক মুদ্রা তহবিলের চাপ রয়েছে রাজস্ব আয় বাড়ানোর। করছাড় কমানোর শর্তও রয়েছে। আদায়ে কড়াকড়ি আরোপের কথাও বলছে সংস্থাটি। এনবিআর এসব শর্তে রাজি থাকলেও রাজস্ব আয়ে এর প্রতিফলন এখনো নেই। তবে চলতি বাজেট বাস্তবায়নেই অনেকটা পথ পিছিয়ে রয়েছে সংস্থাটি। এমন প্রেক্ষাপটে আসছে বাজেটের আরও বড় লক্ষ্যমাত্রা কীভাবে পূরণ হবে তা নিয়েও শঙ্কা রয়েছে।
এনবিআরের তথ্য বলছে, গত জুলাই-এপ্রিল পর্যন্ত সব মিলিয়ে ২ লাখ ৮৭ হাজার ৩২১ কোটি টাকার শুল্ক-কর আদায় হয়েছে। এই সময় সংস্থাটির রাজস্ব আদায়ের লক্ষ্য ছিল ৩ লাখ ১৩ হাজার ৫৮৪ কোটি টাকা। গত ১০ মাসে মাসওয়ারি হিসাবে গড়ে ২৮ হাজার ৭৩২ কোটি টাকা রাজস্ব আদায় হয়েছে। চলতি অর্থবছরে সব মিলিয়ে ৪ লাখ ৩০ হাজার কোটি টাকা রাজস্ব আদায়ের লক্ষ্য দেওয়া হয়েছিল এনবিআরকে। পরে বড় অঙ্কের ঘাটতি পড়ে যাওয়ায় লক্ষ্যমাত্রা সংশোধন করে তা ৪ লাখ ১০ হাজার কোটি টাকা করা হয়েছে।
এনবিআর এ পর্যন্ত আমদানি পর্যায়ে ৮২ হাজার ৬৪৮ কোটি টাকা, ভ্যাটে ১ লাখ ১১ হাজার ৫২৭ কোটি টাকা ও আয়করে ৯৩ হাজার ১৪৩ কোটি টাকা আদায় করতে পেরেছে। লক্ষ্যমাত্রা পূরণ থেকে এর মধ্যে আয়কর আদায়ে সর্বোচ্চ ১৯ দশমিক ৩৩ শতাংশ, ভ্যাটে ১৩ দশমিক ৭৯ শতাংশ ও আমদানি পর্যায়ে ১১ দশমিক ৩৫ শতাংশ প্রবৃদ্ধি অর্জন হয়েছে।
এনবিআরের এক কর্মকর্তা বলেন, রাজস্ব আদায় আগের চেয়ে বেশিই করছে এনবিআর। তবে লক্ষ্যমাত্রার চেয়ে কিছুটা কম। লক্ষ্যমাত্রা একটু বাড়িয়েই ধরা হয়। তবে এটিও অর্জনের খুব কাছেই থাকবে এনবিআর। অর্থবছরের শেষ সময়ে রাজস্ব আদায় বাড়ে।
এফবিসিসিআইয়ের সাবেক সিনিয়র ভাইস প্রেসিডেন্ট মোস্তফা আজাদ চৌধুরী বাবু বলেন, ‘অনেক ব্যবসায়ী অনেক লাভ করছে, তাদের কোনো আয়কর ফাইল নেই। উপজেলা পর্যায়ে এমন এমন ব্যবসায়ী আছে, যাদের কোনো ফাইল নেই। সরকার তো সেই পথে হাঁটছে না।
আমি মনে করি, প্রতিটি উপজেলায় আয়কর অফিস করা উচিত। প্রয়োজনে কর শুমারি করা উচিত। দেশের গ্রোথ সেন্টারগুলোতে বিপুলসংখ্যক সক্ষম করদাতা রয়েছে, তাদেরকে করের আওতায় আনা যায়। সেটা করা হচ্ছে না। কর্মকর্তারা সহজ পথে হাঁটছেন। কষ্ট করে করদাতা খুঁজে বের করে কর আদায় করার কাজটি করছে না।’