২০ ফেব্রুয়ারী ২০২৫, বৃহস্পতিবার, ১০:৩১:০৮ অপরাহ্ন
দিল্লিতে ভারত-বাংলাদেশ সীমান্ত বৈঠক আজ, গুরুত্ব পাবে যেসব বিষয়
  • আপডেট করা হয়েছে : ১৮-০২-২০২৫
দিল্লিতে ভারত-বাংলাদেশ সীমান্ত বৈঠক আজ, গুরুত্ব পাবে যেসব বিষয়

ছাত্র-জনতার গণঅভ্যুত্থানে শেখ হাসিনা সরকারের পতনের পর থেকেই বাংলাদেশের সঙ্গে ভারতের সম্পর্ক ভালো যাচ্ছে না। দুই দেশের মধ্যে ক্রমবর্ধমান উত্তেজনার প্রেক্ষাপটে বাংলাদেশের সীমান্তরক্ষী বাহিনী বর্ডার গার্ড বাংলাদেশের (বিজিবি) একটি উচ্চপর্যায়ের প্রতিনিধি দল সোমবার ভারতের রাজধানী নয়াদিল্লিতে পৌঁছেছে। 


এই প্রতিনিধি দল ভারতীয় সীমান্ত সুরক্ষা বাহিনীর (বিএসএফ) সঙ্গে দ্বিবার্ষিক মহাপরিচালক (ডিজি) পর্যায়ের বৈঠকে অংশ নেবে। 


আজ মঙ্গলবার এই বৈঠক অনুষ্ঠিত হবে।


এনডিটিভির প্রতিবেদনে বলা হয়েছে, বিএসএফ সদর দপ্তরে বিজিবি ও বিএসএফ—এর মধ্যে ৫৫ তম মহাপরিচালক পর্যায়ের সীমান্ত সমন্বয় সম্মেলন অনুষ্ঠিত হবে। বিএসএফ—এর এক কর্মকর্তা জানান, বাংলাদেশি প্রতিনিধি দলটি ভারতের স্বরাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ের কয়েকজন জ্যেষ্ঠ কর্মকর্তার সঙ্গেও সাক্ষাৎ করতে পারেন।


ভারতীয় প্রতিনিধি দলের নেতৃত্বে রয়েছেন বিএসএফ—এর মহাপরিচালক (ডিজি) দালজিত সিং চৌধুরী, এবং বাংলাদেশি প্রতিনিধি দলের নেতৃত্ব দিচ্ছেন বিজিবি মহাপরিচালক মেজর জেনারেল মোহাম্মদ আশরাফুজ্জামান সিদ্দিকী। 


এর আগে, ২০২৩ সালের মার্চ মাসে ঢাকায় এই দ্বিবার্ষিক আলোচনার সর্বশেষ সংস্করণ অনুষ্ঠিত হয়েছিল।


ভারতীয় সংবাদমাধ্যম এনডিটিভিকে নাম প্রকাশ না করা শর্তে দেশটির এক জ্যেষ্ঠ কর্মকর্তা বলেন, ‘সীমান্তে বিশ্বাসের অভাবের কারণে ভারত ও বাংলাদেশ একে অপরকে দোষারোপ করছিল। তবে এই বৈঠকের মাধ্যমে দুই দেশের মধ্যে সেই ফাঁক পূরণের প্রচেষ্টা চালানো হচ্ছে।’


নাম প্রকাশে অনিচ্ছুক ওই কর্মকর্তা আরও জানান, ভারত আলোচনার টেবিলে বাংলাদেশের অভ্যন্তরে সক্রিয় ভারতীয় বিচ্ছিন্নতাবাদী গোষ্ঠীগুলোর কার্যক্রম, বিএসএফ সদস্যদের ওপর সাম্প্রতিক হামলা এবং ভারতীয় নাগরিকদের ওপর বাংলাদেশি নাগরিকদের আক্রমণের বিষয়টি তুলবে।


তিনি জানান, সীমান্ত অপরাধ এবং একক সারির কাঁটাতারের বেড়া নির্মাণের বিষয়টিও আলোচনায় আসবে। তিনি বলেন, ‘সীমান্ত অবকাঠামো আরও শক্তিশালী করতে হবে যাতে (ভারতীয়) বাহিনী আরও কার্যকরভাবে সীমান্ত পাহারা দিতে পারে। তাই সমন্বিত সীমান্ত ব্যবস্থাপনা পরিকল্পনার কার্যকর বাস্তবায়ন এবং বিভিন্ন আস্থা বৃদ্ধি করে এমন পদক্ষেপের ওপর গুরুত্ব দেওয়া হবে।’


২০২৪ সালের আগস্টে শেখ হাসিনা নেতৃত্বাধীন আওয়ামী লীগ সরকার ক্ষমতাচ্যুত হওয়ার পর এটি দুই দেশের মধ্যে প্রথম বৈঠক। ফলে উভয় সীমান্তরক্ষী বাহিনীর জন্যই এই আলোচনার গুরুত্ব অনেক বেশি। এই বিষয়ে অপর এক কর্মকর্তা জানান, ‘এটি একটি দ্বিবার্ষিক প্রক্রিয়া। গত বছরের নভেম্বর মাসে এই আলোচনা হওয়ার কথা ছিল, কিন্তু বাংলাদেশের অনুরোধে তা স্থগিত করা হয়েছিল।’


এই বৈঠকের তাৎপর্য আরও বেড়েছে কারণ গত কয়েক মাস ধরে ভারত ক্রমাগত উদ্বেগ প্রকাশ করে আসছে যে, বাংলাদেশের অন্তর্বর্তীকালীন সরকার পাকিস্তানের সঙ্গে ঘনিষ্ঠতা বাড়াচ্ছে। নাম প্রকাশ না করার শর্তে ভারতের স্বরাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ের জ্যেষ্ঠ এক কর্মকর্তা ব্যাখ্যা করেন, ‘শেখ হাসিনার সরকারকে ক্ষমতাচ্যুত করার পর থেকে বাংলাদেশ পাকিস্তানের প্রতি কূটনৈতিক উষ্ণতা বাড়িয়েছে। এই পরিবর্তন ভারতের জন্য উদ্বেগের কারণ হয়ে দাঁড়িয়েছে এবং ভারত বিভিন্ন কূটনৈতিক প্ল্যাটফর্মে বিষয়টি তুলে ধরেছে।’


ভারত আরও উদ্বেগ প্রকাশ করেছে যে, বাংলাদেশে বিশেষ করে হিন্দুদের বিরুদ্ধে সহিংসতার ঘটনা বাড়ছে এবং ভারত কূটনৈতিকভাবে বিষয়টি সমাধানের চেষ্টা চালিয়ে যাচ্ছে। এক কর্মকর্তা বলেন, ‘সীমান্তজুড়ে সর্বোচ্চ মাত্রার সতর্কতা বজায় রাখা হচ্ছে এবং আমরা এই বিষয়গুলোও বৈঠকে তুলব।’


ভারত ও বাংলাদেশের মধ্যে ৪,০৯৬ কিলোমিটার দীর্ঘ সীমান্ত আছে। বাংলাদেশের সঙ্গে ভারতের পাঁচটি রাজ্যের সীমান্ত আছে। পশ্চিমবঙ্গের সঙ্গে সবচে বেশি সীমান্ত বাংলাদেশের, ২ হাজার ২১৭ কিলোমিটার, ত্রিপুরার সঙ্গে ৮৫৬ কিলোমিটার, মেঘালয়ের সঙ্গে ৪৪৩ কিলোমিটার, আসামের সঙ্গে ২৬২ কিলোমিটার এবং মিজোরামের সঙ্গে ৩১৮ কিলোমিটার।


শেয়ার করুন