২২ নভেম্বর ২০২৪, শুক্রবার, ১২:৪৬:৪৮ পূর্বাহ্ন
রিমালের তাণ্ডবে বিপর্যস্ত উপকূল
  • আপডেট করা হয়েছে : ২৮-০৫-২০২৪
রিমালের তাণ্ডবে বিপর্যস্ত উপকূল

প্রবল ঘূর্ণিঝড় রিমালের তাণ্ডবে বিপর্যস্ত হয়ে পড়েছে দেশের উপক‚লীয় অঞ্চল। জোয়ার-জলোচ্ছ্বাসে বাঁধ ভেঙে বিভিন্ন স্থানে গ্রামের পর গ্রাম তলিয়ে গেছে। লাখ লাখ মানুষ পানিবন্দি হয়ে পড়েছে। বিধ্বস্ত হয়েছে লাখো ঘরবাড়ি, গাছপালা, শিক্ষাপ্রতিষ্ঠান ও দোকানপাট। ভেসে গেছে শাকসবজিসহ নানারকম ফসল, মাছের ঘের ও গবাদিপশু। আট জেলায় পানিতে ডুবে, গাছ পড়ে, ঘর ও দেওয়ালচাপায় ১৪ জনের মৃত্যু হয়েছে। এর মধ্যে ভোলায় চারজন, পটুয়াখালীতে তিনজন, বরিশালে দুজন এবং চট্টগ্রাম, কুমিল্লা, খুলনা, সাতক্ষীরা ও লক্ষীপুরে একজন করে মারা গেছেন। 


ভোলা, বরিশাল, নোয়াখালী, লক্ষীপুর, চাঁদপুরে দুদিন ধরে নৌযোগাযোগ বন্ধ। বিভিন্ন স্থানে রাস্তাঘাট ডুবে সড়ক যোগাযোগও বিচ্ছিন্ন হয়ে গেছে। বিদ্যুৎহীন সাতক্ষীরা, পিরোজপুর, পটুয়াখালী ও ভোলাসহ অন্তত দশ জেলার অনেক এলাকা। অবর্ণনীয় দুর্ভোগের শিকার দুর্গত এলাকার মানুষ। অনেকে গৃহহীন হয়ে মানবেতর দিন কাটাচ্ছেন। এদিকে রিমালের প্রভাবে সোমবার রাজধানীসহ দেশের বিভিন্ন স্থানে ভারি বৃষ্টি হয়েছে। এতে ঢাকাসহ অনেক এলাকায় ভয়াবহ জলাবদ্ধতা দেখা দিয়েছে। 


সোমবার বিকাল ৫টায় আবহাওয়া অধিদপ্তরের আবহাওয়াবিদ মো. ওমর ফারুক যুগান্তরকে বলেন, রিমাল যশোরের পাশে অবস্থান করছে। এটি বর্তমানে সে অর্থে এগোচ্ছে না, এক জায়গাতেই অবস্থান করছে। রোববার রাত থেকেই সেখানে আছে। আমরা আশা করছি মঙ্গলবার দেশের পূর্ব অংশের আবহাওয়ার উন্নতি হবে। বাকি অংশ হয়তো এদিন সন্ধ্যার পর ভালো হতে পারে। 


এদিন সচিবালয়ে দুর্যোগ ব্যবস্থাপনা ও ত্রাণ প্রতিমন্ত্রী মো. মহিববুর রহমান সাংবাদিকদের বলেছেন, রিমালের আঘাতে ছয় জেলায় ১০ জনের মৃত্যু হয়েছে। ঘূর্ণিঝড়ের তাণ্ডবে আংশিক এবং সম্পূর্ণ মিলে এক লাখ ৫০ হাজার ৪৭৫টি ঘরবাড়ি বিধ্বস্ত হয়েছে। 


মোট ১৯টি জেলা ক্ষতিগ্রস্ত হয়েছে জানিয়ে প্রতিমন্ত্রী বলেন, এর মধ্যে রয়েছে খুলনা, সাতক্ষীরা, বাগেরহাট, ঝালকাঠি, বরিশাল, পটুয়াখালী, পিরোজপুর, বরগুনা, ভোলা, ফেনী, কক্সবাজার, চট্টগ্রাম, নোয়াখালী, চাঁদপুর, নড়াইল, গোপালগঞ্জ, শরীয়তপুর ও যশোর। ক্ষতিগ্রস্ত উপজেলার সংখ্যা ১০৭টি এবং ইউনিয়ন ও পৌরসভার সংখ্যা ৯১৪টি।

মহিববুর রহমান বলেন, ঘূর্ণিঝড়ে ৩৭ লাখ ৫৮ হাজার ৯৬ জন মানুষ ক্ষতিগ্রস্ত হয়েছেন। সম্পূর্ণভাবে বিধ্বস্ত হয়েছে ৩৫ হাজার ৪৮৩টি ঘরবাড়ি এবং আংশিক বিধ্বস্ত হয়েছে এক লাখ ১৪ হাজার ৯৯২টি।


ত্রাণ প্রতিমন্ত্রী আরও বলেন, ঘূর্ণিঝড় সতর্কবার্তার প্রেক্ষিতে উপক‚লীয় এলাকাগুলোতে নয় হাজার ৪২৪টি আশ্রয়কেন্দ্র খোলা হয়েছে। এসব আশ্রয়কেন্দ্র ও স্থানীয় শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানে আট লাখের বেশি লোক আশ্রয় নিয়েছেন। গরু-মহিষ, ছাগল-ভেড়াসহ আশ্রিত পশুর সংখ্যা ৫২ হাজার ১৪৬টি।


ব্যুরো ও প্রতিনিধিদের পাঠানো খবর


বরিশাল : নগরের রূপাতলী লিলি পেট্রোল পাম্পসংলগ্ন এলাকায় সোমবার ভোর ৪টায় দেওয়াল ধসে দুজন মারা গেছেন। তারা হলেন হোটেল মালিক লোকমান হোসেন ও কর্মচারী মোকছেদুর রহমান। তাদের বাড়ি পটুয়াখালীর বড়বিঘাই গ্রামে। ২৫ নম্বর ওয়ার্ডের কাউন্সিলর সুলতান মাহমুদ বলেন, নির্মাণাধীন তিনতলা ভবনের ছাদের ওপরের দেওয়াল বৃষ্টি ও ঝড়ো বাতাসে ধসে পড়ে পাশের টিনশেড খাবার হোটেলের ওপর। এতে তারা মারা যান। এদিকে একটানা বৃষ্টিতে তলিয়ে গেছে নগরের বেশির ভাগ এলাকা। পলাশপুর, নবগ্রাম, সাগরদিসহ কয়েকটি এলাকায় পানিবন্দি হয়ে পড়েছে হাজার হাজার মানুষ। নগরের বিভিন্ন এলাকায় ভেঙে পড়েছে কাঁচা ঘরবাড়ি। উপড়ে ও ভেঙে পড়েছে অনেক গাছ। বগুড়া রোড, সদর রোডসহ বহু এলাকায় ভেঙে পড়েছে দোকান ও প্রতিষ্ঠানের সাইনবোর্ড। 


ভোলা ও বোরহানউদ্দিন : ঘর ও গাছচাপা পড়ে এক শিশুসহ তিনজনের মৃত্যু হয়েছে। দৌলতখান পৌরসভায় রোববার রাতে ঘরের ওপর গাছ পড়ে মাইশা (৪) নামে এক প্রতিবন্ধী শিশুর মৃত্যু হয়। সে পৌরসভার ২ নম্বর ওয়ার্ডের মো. মনিরের ছেলে। বোরহানউদ্দিনে সোমবার সকালে গাছের ডাল ভেঙে মো. জাহাঙ্গীর (৫০) নামে এক কৃষকের পেটে ঢুকে যায়। এতে তিনি ঘটনাস্থলেই মারা যান। লালমোহনে ঘরচাপায় মারা গেছেন মনেজা খাতুন (৫৫) নামে এক নারী। এদিকে বোরহানউদ্দিনে ২ শতাধিক ঘড়বাড়ি বিধ্বস্ত হয়েছে। মেঘনার বেঁড়িবাধসংলগ্ন ২টি ইউনিয়নের ৫ শতাধিক পরিবার পানিবন্দি হয়ে পড়েছে। সোমবার বন্যার পানিতে নিজের ঘেরের মাছ চলে যাওয়া দেখতে গিয়ে বিষাক্ত সাপের কামড়ে সাইদ মাঝি (৬০) নামে এক ব্যক্তির মৃত্যু হয়েছে। সাইদ মাঝি পক্ষিয়া ৮নং ওয়ার্ডের বাসিন্দা। 


নোয়াখালী, হাতিয়া ও নোয়াখালী উত্তর : হাতিয়ায় ১৪টি গ্রাম জোয়ারের পানিতে প্লাবিত হয়েছে। এতে প্রায় ৪০ হাজার মানুষ পানিবন্দি হয়ে পড়েছেন। জোয়ারের পানিতে ভেসে গেছে ঘরবাড়ি ও আসবাবপত্র। গ্রামগুলো হলোÑনিঝুমদ্বীপ ইউনিয়নের মোল­া গ্রাম, মুন্সি গ্রাম, আদর্শ গ্রাম, বান্দাখালী গ্রাম, ডুবাইয়ের খাল গ্রাম, ইসলামপুর গ্রাম, আনন্দগুচ্ছ গ্রাম, বাতায়ন গ্রাম, বসুন্ধরা গ্রাম, ধানসিঁড়ি গ্রাম, পূর্বাচল গ্রাম, হরণী ইউনিয়নের চর ঘাসিয়া, বয়ারচর গ্রাম নলচিরা ইউনিয়নের তুফানিয়া গ্রাম, তমরদ্দি ইউনিয়নের পশ্চিম তমরদ্দি গ্রাম। হাতিয়ার বাসিন্দা তানবীর হুসাইন বলেন, রাতে আশ্রয়কেন্দ্রে ছিলাম। সকালে ফিরে দেখি বাড়িঘর সব জোয়ারের পানিতে ভেসে গেছে। আশ্রয়কেন্দ্রেও খাবার শেষ। আমরা কষ্টে আছি। নোয়াখালী সদরের একাংশ, সেনবাগ, বেগমগঞ্জ, চাটখিল, হাতিয়ায় রোববার রাত থেকে সোমবার বিকাল সাড়ে ৫টায় এ রিপোর্ট লেখা পর্যন্ত বিদ্যুৎ ছিল না। এতে সীমাহীন দুর্ভোগে পড়েন বাসিন্দারা। 


মনপুরা (ভোলা) : জোয়ারের তোড়ে ৪ স্থানে বেড়িবাঁধ ভেঙে ৪-৫ ফুট পানিতে তলিয়ে গেছে ১০ গ্রাম। এতে পানিবন্দি হয়ে পড়েছে অন্তত ৫০ হাজার মানুষ। হাজিরহাট ইউনিয়নের সোনারচরের পূর্বপাশে বেড়িবাঁধ, ৪নং দক্ষিণ সাকুচিয়া ইউনিয়নের দখিনা হাওয়া সি-বিচসংলগ্ন বেড়িবাঁধ, সূর্যমুখীর উত্তর পাশ ও দক্ষিণ পাশের বেড়িবাঁধ জোয়ারের তোড়ে ভেঙে যায়। সোমবার মেঘনার পানি বিপৎসীমার ১১২ সেন্টিমিটার ওপর প্রবাহিত হয়। পানি উন্নয়ন বোর্ড (পাউবো) ডিভিশন-২ এর নির্বাহী প্রকৌশলী হাসান মাহমুদ জানান, মনপুরায় ২২০০ মিটার বেড়িবাঁধের ক্ষতি হয়েছে। মূল পাকা সড়ক ভেঙে যাওয়ায় উপজেলা সদর থেকে বিচ্ছিন্ন হয়ে পড়েছে ৩নং উত্তর সাকুচিয়া ও ৪নং দক্ষিণ সাকুচিয়া ইউনিয়ন। সবচেয়ে নাজুক অবস্থা উপজেলা থেকে বিচ্ছিন্ন বেড়িবাঁধহীন নবগঠিত কলাতলী ইউনিয়ন। সেখানে ৫-৬ ফুট জোয়ারের পানিতে পুরো ইউনিয়ন প্লাবিত হয়েছে বলে জানান ইউপি চেয়ারম্যান আলাউদ্দিন হাওলাদার। 


কয়রা (খুলনা) : রোববার রাতে মহেশ্বরীপুর ইউনিয়নের সিংহেরকোনা, মহারাজপুর ইউনিয়নের দশহালিয়া ও দক্ষিণ বেদকাশি ইউনিয়নের ৩নং ওয়ার্ডের বেলাল গাজীর বাড়ির সামনের বাঁধ ভেঙে গেছে। 


এতে অন্তত ২০টি গ্রাম প্লাবিত হয়েছে। সুতিবাজার, ৪নং কয়রা ক্লোজার, ৬নং কয়রা, কাটকাটা, গাববুনিয়া, খাশিটানা, গোলখালী, ২নং কয়রা গেটের গোড়া, লোকা, হরিণখোলা, চোরামুখা, মঠবাড়ী, তেঁতুলতলারচরসহ আরও অনেক এলাকার পাউবোর বেড়িবাঁধ উপচে লোকালয়ে পানি প্রবেশ করেছে। উপজেলার ৭টি ইউনিয়নে ২ হাজার ঘরবাড়ি সম্পূর্ণ বিধ্বস্ত হয়েছে। আংশিক ক্ষতিগ্রস্ত হয়েছে আরও কয়েক হাজার। 


পিরোজপুর : জেলার বিভিন্ন স্থানে শত শত গাছ ভেঙে পড়েছে। রোববার রাত ১১টা থেকে সোমবার বিকালে এ রিপোর্ট লেখা পর্যন্ত বিদ্যুৎহীন ছিল পিরোজপুরের প্রায় ৩ লাখ গ্রাহক। স্বাভাবিকের চেয়ে ৪-৬ ফুট বেশি উচ্চতার জোয়ারের চাপে মঠবাড়িয়ার বেড়িবাঁধে ভাঙন দেখা দিয়েছে। প্লাবিত হয়েছে শতাধিক গ্রাম। জেলা ও উপজেলা শহরের রাস্তাঘাট ৩-৪ ফুট পানিতে তলিয়ে গেছে। 


চরফ্যাশন (ভোলা) : বিচ্ছিন্ন দ্বীপ ঢালচর, চরপাতিলা, চরকুকরি মুকরি ও মজিবনগরসহ বিভিন্ন স্থানে প্রায় ৫০ হাজার মানুষ পানিবন্দি। ঢালচরে বেড়িবাঁধ ভেঙে তলিয়ে গেছে বিস্তীর্ণ এলাকা। ২ হাজার ঘরবাড়ি সম্পূর্ণ এবং ৩ হাজার আংশিক বিধস্ত হয়েছে। মিনাবাজার মাধ্যমিক বিদ্যালয়, গফুরপুর নিæ মাধ্যমিক বিদ্যালয়, ঢালচর ইসলামিয়া দাখিল মাদ্রাসাসহ কয়েকটি শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানের ঘরও ভেঙে গেছে। 


সাতক্ষীরা : শ্যামনগরে পানি উন্নয়ন বোর্ডের বেড়িবাঁধের কয়েকটি স্থানে ফাটল দেখা দিয়েছে। মুন্সীগঞ্জ ও বুড়িগঙ্গালিনী ইউনিয়নে কোথাও ঘরের ছাউনি উড়ে গেছে। কোথাও গাছ ভেঙে পড়েছে। বুড়িগোয়ালিনী ইউনিয়নের দাতিনাখালি গ্রামে কয়েকটি কাঁচা ঘরবাড়ি ভেঙে পড়েছে। শ্যামনগর থেকে কালীগঞ্জগামী সড়কের দুপাশের বেশ কিছু গাছ ভেঙে যোগাযোগ ব্যাহত হয়েছে। এদিকে বিদ্যুতের লাইনে গাছপালা উপড়ে পড়ে জেলার ৬ লাখের বেশি মানুষ বিদ্যুৎহীন হয়ে পড়েছে। শ্যামনগর, কালীগঞ্জ ও আশাশুনির অধিকাংশ এলাকায় রোববার সারাদিনই বিদ্যুৎ ছিল না। রোববার শ্যামনগর উপজেলার গাবুরা ইউনিয়নের নাপিতখালীতে আশ্রয়কেন্দ্রে যাওয়ার পথে শওকাত মোড়ল (৬৫) নামে এক বৃদ্ধের মৃত্যু হয়েছে। শওকাত মোড়ল গাবুরা ইউনিয়নের নাপিতখালী গ্রামের মৃত নরিম মোড়লের ছেলে। 


চাঁদপুর : উত্তাল মেঘনার বিশাল ঢেউ আছড়ে পড়ে শহর রক্ষা বাঁধে ভাঙন দেখা দিয়েছে। এতে শহরের পুরানবাজার রনাগোয়াল, হরিসভা মন্দির, বাকালী পট্টি মাছবাজার ও তালুকদার বাড়ি এলাকার ৮-১০টি বসতঘর বিলীন হয়ে গেছে। এদিকে দুদিন ধরে চাঁদপুর-ঢাকা ও বিভিন্ন রুটের লঞ্চসহ নৌযান চলাচল বন্ধ রয়েছে। জেলার সদর উপজেলার রাজরাজেশ্বর, হাইমচরের ঈশানবালা, মাঝেরচর, চরমনিপুর, বাখরপুর, ইব্রাহিমপুর, মতলবের জহিরাবাদ, ফরাজীকান্দি বোরোচর এলাকার কাঁচা রাস্তা বৃষ্টিতে নষ্ট হয়েছে, বহু গাছপালা উপড়ে পড়েছে। ক্ষতিগ্রস্ত হয়েছে কাঁচা ঘরবাড়ি। বিআইডব্লিউটিসি চাঁদপুর হরিণা ফেরিঘাটের ম্যানেজার (বাণিজ্য) ফয়সাল চৌধুরী জানান, পরবর্তী নির্দেশনা না পাওয়া পর্যন্ত ফেরি চলাচল বন্ধ থাকবে।


পটুয়াখালী, রাঙ্গাবালী, কলাপাড়া ও দুমকি দ. : পাঙ্গাশিয়া ইউনিয়নের ৯ নম্বর ওয়ার্ড নলদোয়ানী স্লুইসগেট এলাকায় ঘরের ওপর গাছ পড়ে জয়নাল হাওলাদার (৭০) নামে একজনের মৃত্যু হয়েছে। এছাড়া ফায়ার সার্ভিস মিডিয়া সেল জানিয়েছে, বাউফলে গাছচাপায় আব্দুল করিম খান নামে এক ব্যক্তি মারা গেছেন। তার লাশ উদ্ধার করা হয়েছে। এর আগে রোববার দুপুরে কলাপাড়া উপজেলার ধূলাসর ইউনিয়নের কাউয়ারচরে জোয়ারের পানিতে ভেসে গিয়ে মো. শরীফুল ইসলাম (২৪) নামে এক যুবকের মৃত্যু হয়েছে।   

দুমকিতে পানি উন্নয়ন বোর্ডের ওয়াপদা বেড়িবাঁধ ভেঙে পাঙ্গাশিয়া ইউনিয়নের অনেক গ্রাম প্লাবিত হয়েছে। উপজেলায় শতাধিক কাঁচাঘর ভেঙে গেছে। ভেঙে পড়েছে গাছপালা। কলাপাড়ার নীলগঞ্জ ইউনিয়নের জালালপুর, পশ্চিম হাজীপুর, নবীপুর, খ্রিষ্টানপলি­, ফতেহপুরসহ পাঁচটি গ্রাম প্লাবিত হয়েছে। একই ইউনিয়নের গৈয়াতলা ও নিচকাটা জলকপাট এলাকার বন্যা নিয়ন্ত্রণ বাঁধের ওপর দিয়ে পানি লোকালয়ে প্রবেশ করেছে। এদিকে জোয়ারের পানিতে জেলা শহরের ৮০ শতাংশ এলাকা প্লাবিত হয়েছে। শহরের অন্তত ৫০ শতাংশ ব্যবসাপ্রতিষ্ঠান ও বসতঘরে পানি। রাঙ্গাবালীতে অন্তত ৬ হাজার ঘরবাড়ি, শিক্ষাপ্রতিষ্ঠান ক্ষতিগ্রস্ত হয়েছে। পানিবন্দি হয়ে পড়েছে হাজারো মানুষ। 


কুমিল্লা : প্রবল বাতাসে নির্মাণাধীন ভবনের দেওয়াল ধসে পঞ্চম শ্রেণির শিক্ষার্থী সাইফুল ইসলাম সাগরের মৃত্যু হয়েছে। সোমবার জেলার সদর দক্ষিণ উপজেলার নোয়াগাঁও চৌমুহনী এলাকায় নুর আইডিয়াল স্কুলে এ ঘটনা ঘটে। সাগর সদর দক্ষিণ উপজেলার শাকতলা গ্রামের অলি হোসেনের ছেলে। 


চট্টগ্রাম : ভারি বর্ষণে নির্মাণাধীন ভবনের সীমানা দেওয়াল ধসে সাইফুল ইসলাম হƒদয় (২৮) নামে এক রিকশাচালকের মৃত্যু হয়েছে। এছাড়া দুই পথচারী সামান্য আহত হয়েছেন। সোমবার সকাল সাড়ে ৮টার দিকে নগরীর বায়েজিদ বোস্তামি থানার টেক্সটাইল গেট আবাসিক এলাকায় এ দুর্ঘটনা ঘটে। 


খুলনা : তিন উপজেলায় অন্তত ছয়টি পয়েন্টে বেড়িবাঁধ ভেঙে লোকালয় প্লাবিত হয়েছে। এছাড়া বিভিন্ন স্থানে অন্তত ৬০টি পয়েন্ট দিয়ে বাঁধ উপচে পানি ঢুকেছে লোকালয়ে। ভেসে গেছে ফসল। কৃষকের ঘের ও বাড়িঘর। ঝড় থেমে যাওয়ায় সোমবার সাইক্লোন শেল্টারগুলোতে আশ্রয় নেওয়া মানুষ ফিরতে শুরু করেছে ঘরে। তবে এসব এলাকায় ভারি বৃষ্টিতে বিপর্যস্ত হয়ে পড়েছে জনজীবন। গাছ পড়ে খুলনায় একজনের মৃত্যু হয়েছে। এদিকে বটিয়াঘাটা উপজেলার গাওঘরা ইউনিয়নে রোববার রাতে গাছ পড়ে লাল চাঁদ মোড়ল (৩৬) নামে একজনের মৃত্যু হয়েছে। 


লক্ষীপুর ও রামগঞ্জ : রামগঞ্জের চণ্ডীপুর ইউনিয়নের চাঙ্গিরগাঁও গ্রামে সোমবার বিকালে ঘরচাপায় পুষ্প (৭) নামে এক স্কুলছাত্রীর মৃত্যু হয়েছে। এ সময় ঘরে থাকা শিশুর নানি হোসনেয়ারা বেগম আহত হয়েছেন। তাকে উপজেলা স্বাস্থ্য কমপ্লেক্সে ভর্তি করা হয়েছে। 


আমতলী (বরগুনা) : পশুরবুনিয়া, ঘোপখালী, পশ্চিম সোনাখালী, সোনাউডা বাঁধ এবং আঙ্গুলকাটা স্লুইসগেট ভেঙে ও ইসলামপুর গ্রামের বাঁধ গড়িয়ে লোকালয়ে পানি প্রবেশ করেছে। এতে আড়পাঙ্গাশিয়া, আঠারোগাছিয়া, হলদিয়া, আমতলী সদর ও গুলিশাখালী ইউনিয়ন পানিতে তলিয়ে গেছে। ওই পাঁচ ইউনিয়নের অন্তত ৫০ হাজার  মানুষ পানিবন্দি হয়ে পড়েছে। উপজেলায় হাজারো ঘর আংশিক এবং তিন শতাধিক পুরোপুরি বিধ্বস্ত।


মোংলা (বাগেরহাট) : চিলা, জয়মনি, কানাইনগর, বুড়িরডাঙ্গা বাঁধ ভেঙে নিæাঞ্চল প্লাবিত হয়েছে। তলিয়ে গেছে সুন্দরবন। এতে এ বনের জীববৈচিত্র্যের ব্যাপক ক্ষতি হয়েছে। দুবলারচরসহ বনবিভাগের বিভিন্ন স্টেশন ও টহল ফাঁড়ির আবাসন বিধ্বস্তসহ পন্টুন ও জেটি ক্ষতিগ্রস্ত হয়েছে। 


কক্সবাজার : জেলার উপক‚লবর্তী নিæাঞ্চলের অন্তত ৩০ গ্রাম প্লাবিত হয়েছে। এর মধ্যে কক্সবাজার পৌরসভার ১ নম্বর ওয়ার্ডের নাজিরাটেক, কুতুবদিয়াপাড়া, সমিতিপাড়া, মোস্তাকপাড়া, ফদনার ডেইল, নুনিয়ারছড়া, মহেশখালী উপজেলার ধলাঘাটা ও মাতারবাড়ী ইউনিয়নের অধিকাংশ এলাকা এবং সেন্টমার্টিন দ্বীপের কিছু এলাকা। 


রায়পুর (লক্ষীপুর) : কমলনগরের নাসিরগঞ্জে ১০০ মিটারের বেশি বেড়িবাঁধ ভেঙে গেছে। মেঘনা উপক‚লীয় উত্তর চরবংশী, দক্ষিণ চরবংশী, উত্তর চরআবাবিল, দক্ষিণ চরআবাবিল ও চরমোহনা ইউপির বেড়িবাঁধের পশ্চিমের এলাকাগুলো চরাঞ্চলের নিম্নাঞ্চল প্লাবিত হয়েছে। এতে পানিবন্দি অবস্থায় চরম দুর্ভোগের মধ্যে রয়েছে মেঘনা উপক‚লীয় ৫টি ইউনিয়নের মানুষ।


নিয়ামতপুর (নওগাঁ) : সড়কের ধারে গাছচাপায় গুরুতর আহত হয়েছেন বেনীপুর সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয়ের প্রধান শিক্ষক মো. সালাহ্ উদ্দীন। সোমবার সকাল সাড়ে ৮টার দিকে উপজেলার চন্দননগর ইউনিয়নের বামইন-বেনীপুর সড়কের তৌফিকের মোড়ে এ ঘটনা ঘটে। 


মীরসরাই (চট্টগ্রাম) : ফেনাফুনি এলাকায় গাছ পড়ে তামরিজ একাডেমি নামে একটি বিদ্যালয় দুমড়ে-মুচড়ে গেছে। মধ্যম ওয়াহেদপুর এলাকায় সংবাদকর্মী মাঈনউদ্দিনের বসতঘর ভেঙে গেছে। 


শেয়ার করুন