২৮ এপ্রিল ২০২৪, রবিবার, ০১:৩৫:৫১ অপরাহ্ন
রোজার পণ্যমূল্য সুনির্দিষ্ট করার উদ্যোগ
  • আপডেট করা হয়েছে : ১১-০৩-২০২৪
রোজার পণ্যমূল্য সুনির্দিষ্ট করার উদ্যোগ

কারসাজি বন্ধে রোজানির্ভর পণ্যমূল্য সুনির্দিষ্ট করে দেওয়ার উদ্যোগ নিয়েছে সরকার। এ লক্ষ্যে আমদানিকৃত পণ্যের প্রকৃত মূল্য এবং বাজারে বিক্রয়মূল্যের পার্থক্য পর্যালোচনা করা হচ্ছে। পাশাপাশি অসাধু ব্যবসায়ীরা যাতে সরবরাহের স্বাভাবিক গতি ব্যাহত করতে না পারেন, সেই লক্ষ্যে জোরদার করা হয়েছে মনিটরিং কার্যক্রম। এছাড়া অবৈধ মজুতদারদের সিন্ডিকেট ভাঙতে আলু, চালসহ কয়েকটি পণ্যের ওপর আমদানি শুল্ক কমানো যায় কি না, এ বিষয়েও পরীক্ষা-নিরীক্ষা করা হচ্ছে।


নিত্যপ্রয়োজনীয় পণ্যের বাজার ঘিরে অসাধু ব্যবসায়ীদের তৎপরতা বন্ধে এসব সিদ্ধান্ত নেওয়া হয় দেশের সামষ্টিক অর্থনৈতিক অবস্থা পর্যালোচনাসংক্রান্ত অর্থ মন্ত্রণালয়ের বৈঠকে। অর্থমন্ত্রী আবুল হাসান মাহমুদ আলীর সভাপতিত্বে সম্প্রতি ওই বৈঠক অনুষ্ঠিত হয়। বৈঠকে উল্লিখিত সিদ্ধান্ত বাস্তবায়নে তদারকির দায়িত্ব দেওয়া হয় যৌথভাবে বাণিজ্য ও কৃষি মন্ত্রণালয়কে। বৈঠকের কার্যবিবরণী এবং সংশ্লিষ্টদের সঙ্গে আলাপ করে পাওয়া গেছে এসব তথ্য।


জানতে চাইলে বাণিজ্য প্রতিমন্ত্রী আহসানুল ইসলাম টিটু রোববার সন্ধ্যায় যুগান্তরকে বলেন, বিভিন্ন এসএস কোডের বিপরীতে পণ্য আমদানি হচ্ছে। আমরা দেখব নিত্যপণ্য কোন কোন এসএস কোডে আমদানি হচ্ছে। এরপর পণ্যের আমদানি মূল্যের সঙ্গে ভ্যাট, কর যোগ করে একটি দাম বের করা হবে। এসব কাজ শেষে আমরা পণ্যের মূল্য নির্ধারণ করে দেব। এ বিষয়ে আমরা এখন কাজ করছি। পরবর্তী সময়ে দাম নির্ধারণের পর কেউ মূল্যের চেয়ে বেশি রাখলে তার বিরুদ্ধে ব্যবস্থা নেওয়া হবে।


একই দিন সকালে বাণিজ্য প্রতিমন্ত্রী আহসানুল ইসলাম টিটু সাংবাদিকদের বলেছেন, রমজান উপলক্ষ্যে দাম নিয়ন্ত্রণে রাখতে আমরা বিভিন্ন বাজারে মনিটরিং বাড়াব। পণ্যের দাম নিয়ন্ত্রণে রাখার জন্য কাওরান বাজারে আজ থেকে আমাদের স্পেশাল টিম কাজ করবে। কোনোভাবেই যেন কোনো ব্যবসায়ী বাজার অস্থিতিশীল করতে না পারে, সেদিক আমরা প্রতিনিয়ত মনিটরিং করে যাব। তিনি আরও বলেন, কোনো মিল মালিক যদি বেশি দামে মাল বিক্রির চেষ্টা করে, অবশ্যই ভোক্তা অধিদপ্তরকে বিষয়টি জানাতে হবে। আমরা ওইসব মিলের বিরুদ্ধে ব্যবস্থা নেব।


নতুন সরকার দায়িত্ব নেওয়ার পর এটি প্রথম রমজান। কিন্তু অসাধু ব্যবসায়ীরা এ রোজা ঘিরে অস্থির করে তুলছে নিত্যপ্রয়োজনীয় পণ্যের বাজারকে। এরই মধ্যে দেশের সার্বিক অর্থনীতি পরিস্থিতি পর্যালোচনায় অর্থমন্ত্রী সংশ্লিষ্টদের নিয়ে বৈঠক করেছেন। সেখানেও আলোচনায় উঠে আসে দ্রব্যমূল্য পরিস্থিতি।


বৈঠকে বাংলাদেশ ব্যাংকের গভর্নর আব্দুর রউফ তালুকদার বলেন, আসন্ন রমজান বিবেচনায় ইতোমধ্যে জাতীয় রাজস্ব বোর্ড (এনবিআর) নিত্যপ্রয়োজনীয় পণ্যের শুল্কহার হ্রাস করার উদ্যোগ নিয়েছে। বাজার মনিটরিং কার্যক্রম অব্যাহত রাখার ওপর গুরুত্বারোপ করেন তিনি।


প্রসঙ্গত, এ বৈঠকের আগে ৮ ফেব্রুয়ারি চার ধরনের পণ্যের ওপর আমদানি শুল্ক কমানোর প্রজ্ঞাপন জারি করে জাতীয় রাজস্ব বোর্ড। পণ্যগুলো হলো চাল, ভোজ্যতেল, চিনি ও খেজুর।


সিদ্ধ ও আতপ চালের আমদানি শুল্ক পুরোপুরি প্রত্যাহার করা হয়েছে। একই সঙ্গে সিদ্ধ ও আতপ চাল আমদানিতে নিয়ন্ত্রণমূলক শুল্ক বা রেগুলেটরি ডিউটি ২৫ থেকে কমিয়ে ৫ শতাংশ করা হয়েছে। এ সুবিধা চাল আমদানিকারকরা পাবেন ১৫ মে পর্যন্ত। দেশে পরিশোধিত সয়াবিন ও পাম তেলের উৎপাদন ও ব্যবসা পর্যায়ের মূল্য সংযোজন কর বা মূসক বা ভ্যাট পুরোপুরি তুলে নেওয়া হয়েছে। এ সুবিধা তারা পাবেন ১৫ এপ্রিল পর্যন্ত। বিদেশ থেকে পরিশোধিত ও অপরিশোধিত সয়াবিন তেল এবং পাম তেল আমদানি পর্যায়ে ১৫ শতাংশ ভ্যাট কমিয়ে ১০ শতাংশ করা হয়েছে। আমদানিকারকরা এ সুবিধা পাবেন ১৫ এপ্রিল পর্যন্ত। খেজুরের আমদানি শুল্ক ১০ শতাংশ কমানো হয়েছে। আগে আমদানি শুল্ক ছিল ২৫ শতাংশ। আমদানিকারকরা এ সুবিধা পাবেন ৩০ মার্চ পর্যন্ত।


পরিশোধিত ও অপরিশোধিত উভয় ধরনের চিনির আমদানি শুল্ক কমানো হয়েছে। অপরিশোধিত চিনি আমদানিতে প্রতি মেট্রিক টনে আমদানি শুল্ক কমিয়ে এক হাজার টাকা করা হয়েছে। আগে যা ছিল দেড় হাজার টাকা। আর পরিশোধিত চিনি আমদানিতে টনপ্রতি আমদানি শুল্ক কমিয়ে করা হয়েছে দুই হাজার টাকা, আগে যা ছিল তিন হাজার টাকা। এ শুল্ক ছাড় পাওয়া যাবে ৩১ মার্চ পর্যন্ত।


এ বৈঠকের পর নতুন করে এখন পর্যন্ত আর কোনো পণ্যের শুল্কহার কমানো হয়নি। আবার শুল্ক কমানোর কোনো প্রভাব বাজারে পড়েনি। বিশেষ করে চিনির মূল্য বেড়েছে অস্বাভাবিক হারে। বেড়েছে খেজুরের দামও। টিসিবির হিসাবে এক মাসের ব্যবধানে মাঝারি মানের চালের দাম ১ দশমিক ৮৯, ছোলা ২ দশমিক ৪৪, অ্যাংকর ডাল ১৩ দশমিক ৩৩, আলু ৭ দশমিক ১৪, পেঁয়াজ ৫, চিনি ৫ দশমিক ৫৬ এবং খেজুর বেড়েছে ৪ দশমিক ২৯ শতাংশ।


অর্থ মন্ত্রণালয়ের ওই বৈঠকে কেন্দ্রীয় ব্যাংকের গভর্নর অসাধু ব্যবসায়ীদের দিকে ইঙ্গিত করে বলেছেন, ‘এখন আমাদের দেখা দরকার আমদানিকৃত পণ্যদ্রব্যের লেন্ড কস্ট (যে দামে পণ্য আমদানি হয়েছে, তা দেশে প্রবেশ করে বন্দরে ভ্যাটসহ অন্যান্য ব্যয় শোধ করে যে মূল্য দাঁড়ায়) এবং বাজারের বিক্রয়মূল্যের পার্থক্য কত দাঁড়ায়, সেটি বের করতে হবে।


ওই বৈঠকে বাজার পরিস্থিতি তুলে ধরে বাণিজ্য সচিব (সিনিয়র) তপন কান্তি ঘোষ জানান, পণ্যের শুল্ক হ্রাসের ব্যাপারে প্রয়োজনীয় উদ্যোগ নিয়েছে এনবিআর। বাণিজ্য সচিব আলু ও চাল আমদানির ওপর শুল্ক হ্রাসের ওপর গুরুত্ব আরোপ করে বলেন, এটি মজুতকারীদের বিরুদ্ধে একটি বার্তা যাবে।


ওই বৈঠকে পণ্যের শুল্ক ছাড় নিয়ে কথা বলেন এনবিআর চেয়ারম্যান আবু হেনা মো. রহমাতুল মুনিম। তিনি বলেন, আসন্ন রমজান বিবেচনায় বিগত সভার সিদ্ধান্ত অনুযায়ী ইতোমধ্যে পণ্যে শুল্ক হ্রাসের পদক্ষেপ নেওয়া হয়েছে।


শেয়ার করুন