২২ নভেম্বর ২০২৪, শুক্রবার, ০১:১৫:১৩ পূর্বাহ্ন
শুধু রাজধানীতেই দিনে ৫০০ মোবাইল চুরি ও ছিনতাই
  • আপডেট করা হয়েছে : ০১-০৬-২০২৪
শুধু রাজধানীতেই দিনে ৫০০ মোবাইল চুরি ও ছিনতাই

ঢাকায় অপ্রতিরোধ্য হয়ে উঠেছে মোবাইল চোর ও ছিনতাই সিন্ডিকেট। এ চক্রের তৎপরতায় নগরীর বিভিন্ন এলাকায় প্রতিদিন শত শত মোবাইল সেট খোয়া যাচ্ছে। চুরি ও ছিনতাই হওয়া এসব মোবাইল বিক্রি হচ্ছে গুলিস্তান, মিরপুরসহ বিভিন্ন এলাকায়, এমনকি অভিজাত বিভিন্ন মার্কেটে। এছাড়া অনলাইনেও বিক্রি হচ্ছে চুরি ছিনতাই হওয়া মোবাইল ফোন। চক্রের সদস্যরা এতটাই দক্ষ যে তারা মুহূর্তেই মুছে ফেলে ছিনতাই করা মোবাইল ফোনের সব প্রমাণ। যে কারণে আইনশৃঙ্খলা বাহিনীর সদস্যরাও এসব মোবাইল ফোন উদ্ধার করতে হিমশিম খান।


পুলিশ কর্মকর্তারা জানিয়েছেন, কেউ ছিনতাইয়ের শিকার হলে সঙ্গে সঙ্গে সংশ্লিষ্ট থানায় তা অবহিত করতে হবে। দেরি করলেই সর্বনাশ। প্রতিটি মোবাইল ছিনতাই সিন্ডিকেটের সঙ্গে জড়িত রয়েছে মোবাইল সার্ভিসিংয়ে দক্ষ সদস্য। ছিনতাই হওয়া মোবাইল সেট তাদের হাতে পৌঁছলেই আর উদ্ধার করা সম্ভব হয় না। এরা কয়েক সেকেন্ডের মধ্যে এসব সেটের আইএমইআই (ইন্টারন্যাশনাল মোবাইল ইকুইপমেন্ট আইডেনটিটি) নম্বর বদলে ফেলে। তখন আর শনাক্ত করা যায় না এই সেটগুলো। সংশ্লিষ্ট সূত্র জানায়, যেসব সেটে হাই সিকিউরিটি লক থাকে, সেগুলোর বিভিন্ন অংশ খুলে বিক্রি করা হয়। আর দামি সেটগুলো অনলাইনে বিক্রির পাশাপাশি পাচার করা হয় পার্শ্ববর্তী দেশে।


গোয়েন্দা সূত্রে জানা গেছে, চুরি ও ছিনতাই হওয়া মোবাইল সেটগুলো সরাসরি চলে যায় নগরীর গুলিস্তান, মিরপুর এবং পার্শ্ববর্তী এলাকার বিভিন্ন মার্কেটে। এরপর সেসব মোবাইলের আইএমইআই নম্বর পালটানো হয়। চক্রের সদস্যরা দামি মোবাইল সেটের লক খুলতে আবার ব্যবহার করছে হাই সিকিউরিটি লেজার প্যাটার্ন। চীন থেকে আমদানি করা এ বিশেষ প্রযুক্তি মোবাইলের আইসির সঙ্গে যুক্ত করে প্যারালাল নতুন প্যাটার্ন তৈরি করা হয়, যা সহজে নতুন সিকিউরিটি লক সৃষ্টি করে।


সূত্রমতে, রাজধানীতে মোবাইল ফোন ছিনতাইয়ের ২০টি চক্র সক্রিয় রয়েছে। এসব চক্রে পাঁচজন কিংবা এর অধিক সদস্য থাকে। তাদের প্রত্যেকেরই দলনেতা থাকে। দলনেতারা প্রত্যেক সদস্যকে দিনে পাঁচ থেকে সাতটি মোবাইল সেট ছিনতাইয়ের টার্গেট দেন। এই হিসাবে প্রতিদিন নগরীতে কমপক্ষে ৫০০ মোবাইল সেট ছিনতাই হয়।


ডিবি সূত্রে জানা গেছে, রাজধানীর বিভিন্ন এলাকায় ২৩টি মোবাইল চোর ও ছিনতাই চক্র সক্রিয় রয়েছে। এর মধ্যে উত্তরা, আবদুল্লাহপুর, বনানী, গুলশান, ভাটারা এলাকায় সক্রিয় রয়েছে তিনটি ছিনতাইকারী চক্র। শ্যামলী, আদাবর, মোহাম্মদপুর, ধানমন্ডি, মিরপুর ও গাবতলী এলাকায় মোবাইল ফোন ছিনতাই করে চারটি চক্র। এসব চক্রের পাঁচজনের বেশি সদস্য রয়েছে। হাতিরঝিল, রামপুরা, মগবাজার ও মালিবাগ এলাকায় তিন থেকে চারটি চক্র রয়েছে। শাহবাগ, মৎস্য ভবন ও নিউমার্কেট এলাকায় সক্রিয় রয়েছে অন্তত পাঁচটি চক্র। কাওরান বাজার ও এর আশপাশ এলাকায় তিনটির বেশি রয়েছে চুরি ও ছিনতাই চক্র। এসব সিন্ডিকেটে পথশিশু ও ভাসমান লোকজন জড়িত। কমলাপুর, যাত্রাবাড়ী, বাবুবাজার ব্রিজ এলাকায় আরও চার থেকে পাঁচটি চক্র মোবাইল ফোন ছিনতাইয়ের সঙ্গে জড়িত বলে জানিয়েছে ঢাকা মহানগর গোয়েন্দা পুলিশ।


এদিকে আইনশৃঙ্খলা বাহিনী নগরীর বিভিন্ন এলাকায় অভিযান চালিয়ে এ চক্রের সদস্যদের গ্রেফতার করছে। শনিবার র্যাব-১ এর একটি দল মোবাইল ছিনতাই সিন্ডিকেটের দুটি গ্রুপের আট সদস্যকে গ্রেফতার করেছে।


র্যাব-১ এর এএসপি মাহফুজুর রহমান বলেন, বিমানবন্দর ও উত্তরা এলাকায় এ চক্রের সদস্যরা বিভিন্ন মানুষকে ফাঁদে ফেলে মোবাইল সেট ও অন্যান্য মালামাল ছিনতাই করত।


সংশ্লিষ্টরা জানান, এই ছিনতাইকারীরা পথচারীদের ভয়ভীতি দেখিয়ে ছিনতাই করে। আবার গাড়ির জানালার পাশে বসে কথা বলা অবস্থায় মোবাইল থাবা দিয়ে পালিয়ে যায়।


পুলিশের রমনা বিভাগের উপপুলিশ কমিশনার আশরাফ হোসেন জানান, মোবাইল চুরি ও ছিনতাইয়ের সঙ্গে সংশ্লিষ্টরা অধিকাংশই মাদকাসক্ত। তারা বড়দের পাল্লায় পড়ে বা অনেক সময় নিজেদের আয়ের উদ্দেশ্যে ছিনতাই ও চুরি করে থাকে।


ডিএমপির জনসংযোগ বিভাগের উপ-কমিশনার মো. ফারুক হোসেন বলেন, চুরি ও ছিনতাই রোধে ডিএমপি কমিশারের নির্দেশনা অনুযায়ী জিরো টলারেন্স নীতি অবলম্বন করছে পুলিশ। কেউ চুরি ছিনতাইয়ের শিকার হলে সঙ্গে সঙ্গে থানা পুলিশকে অবহিত করার পরামর্শ দেন তিনি।


শেয়ার করুন