১৯ সেপ্টেম্বর ২০২৪, বৃহস্পতিবার, ১০:৪২:৫৩ অপরাহ্ন
মূল্যস্ফীতি নিয়ন্ত্রণে বাজেটে সর্বোচ্চ অগ্রাধিকার
  • আপডেট করা হয়েছে : ০৪-০৬-২০২৪
মূল্যস্ফীতি নিয়ন্ত্রণে বাজেটে সর্বোচ্চ অগ্রাধিকার

মূল্যস্ফীতি, রিজার্ভ ও রাজস্ব আদায়ের বড় চ্যালেঞ্জ নিয়ে আগামী বৃহস্পতিবার ২০২৪-২৫ অর্থবছরের জন্য জাতীয় সংসদে প্রায় ৮ লাখ কোটি টাকার বাজেট প্রস্তাব পেশ করবেন অর্থমন্ত্রী আবুল হাসান মাহমুদ আলী, যা হবে দেশের ইতিহাসে সর্বোচ্চ আকারের বাজেট। সব চ্যালেঞ্জের উত্তরণ ঘটিয়ে আগামী অর্থবছরের বাজেটে মানুষের আশা-আকাঙ্ক্ষার প্রতিফলন দেখা যাবে বলে মনে করেন অর্থমন্ত্রী।


 


এটি হবে বর্তমান অর্থমন্ত্রী আবুল হাসান মাহমুদ আলীর প্রথম বাজেট উত্থাপন। ইতোমধ্যে সব প্রস্তুতি শেষ বলে অর্থ মন্ত্রণালয়ের একাধিক কর্মকর্তা জানিয়েছেন। 


বৈশ্বিক অর্থনৈতিক সংকট বিবেচনায় নিয়ে নতুন অর্থবছরের বাজেটে মূল্যস্ফীতি সাড়ে ছয় শতাংশের মধ্যে নামিয়ে আনার লক্ষ্যমাত্রা নির্ধারণসহ রিজার্ভ ও রাজস্ব আয় বাড়ানোর বিষয় সর্বোচ্চ অগ্রাধিকার দিয়েছে অর্থ মন্ত্রণালয়। মূল্য কমিয়ে নিত্যপণ্যের বাজারে স্বস্তি দিতে প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার বিশেষ নির্দেশনা রয়েছে।


এদিকে বাজার স্থিতিশীল রাখা এবং উচ্চ মূল্যস্ফীতির লাগাম টানতে অন্তত ৩০টি নিত্যপ্রয়োজনীয় পণ্য ও খাদ্যশস্য সরবরাহের ওপর উৎসে কর কমানো হচ্ছে। আসন্ন ২০২৪-২৫ অর্থবছরের বাজেটে এসব পণ্যে উৎসে কর ২ থেকে কমিয়ে ১ শতাংশ করা হতে পারে। অর্থ মন্ত্রণালয় সূত্রে এ তথ্য জানা গেছে। আগামী অর্থবছরের বাজেটে সরকারের শীর্ষ ১০ লক্ষ্যের মধ্যে সর্বোচ্চ অগ্রাধিকার পেয়েছে মূল্যস্ফীতি নিয়ন্ত্রণ।


এ বিষয় বিবেচনা করে অর্থ মন্ত্রণালয়ের অভ্যন্তরীণ সম্পদ বিভাগ এক্ষেত্রে কর আহরণে ছাড় দিতে যাচ্ছে। আগামী বাজেটে নিত্যপ্রয়োজনীয় পণ্য পেঁয়াজ, রসুন, মটর, ছোলা, চাল, গম, আলু, মসুর, ভোজ্য তেল, চিনি, আদা, হলুদ, শুকনা মরিচ, ভুট্টা, ময়দা, আটা, লবণ, গোলমরিচ, এলাচ, দারুচিনি, লবঙ্গ, খেজুর, তেজপাতা, পাট, তুলা, সুতা, সব ধরনের ফলসহ ৩০টি পণ্যে করছাড় দেওয়া হচ্ছে। এতে বিদ্যমান উচ্চমূল্য থেকে কম মূল্যে পণ্যগুলো ভোক্তারা কিনতে পারবে। অর্থমন্ত্রী আবুল হাসান মাহমুদ আলীও গণমাধ্যমে বলেছেন, আগামী অর্থবছরে মূল্যস্ফীতি নিয়ন্ত্রণে সর্বোচ্চ অগ্রাধিকার থাকবে। 


সংশ্লিষ্টরা বলছেন, প্রতি বছরই প্রস্তাবিত বাজেটের আকারসহ নির্ধারিত বিভিন্ন লক্ষ্যমাত্রা তার আগের বাজেটের সব লক্ষ্যমাত্রাকে ছাড়িয়ে যায়। এক্ষেত্রে প্রাক্কলিত লক্ষ্যমাত্রা অর্জন হোক বা না হোক কিংবা বাস্তবায়ন সক্ষমতার অভাব জেনেও শুধু রাজনৈতিক বিবেচনাপ্রসূত বারবার এই উচ্চাভিলাষী লক্ষ্য নির্ধারণের পথে হাঁটত সরকার। বিগত বাজেট পর্যালোচনায় এমন ধারাবাহিকতাই দেখেছেন বিশ্লেষকরা। তবে এবারই এ ধারার ব্যতিক্রম ঘটতে চলেছে বলে জানা যাচ্ছে। 


সংশ্লিষ্ট সূত্রগুলো বলছে, আসন্ন বাজেটের বেশিরভাগ সূচক বিবেচনা করেই প্রথমবারের মতো থাকছে না উচ্চাভিলাষী পরিকল্পনা। বরং বৈশ্বিক ও অভ্যন্তরীণ বাস্তবতাকে গুরুত্ব দিয়ে আগামী ২০২৪-২৫ অর্থবছরের প্রস্তাবিত বাজেটের আকার, ঘাটতি, জিডিপি প্রবৃদ্ধির হার, মূল্যস্ফীতির হার, জাতীয় বিনিয়োগ, সঞ্চয়, সরকারি পরিচালন ব্যয় এবং বার্ষিক উন্নয়ন কর্মসূচি (এডিপি) প্রাক্কলনে বেশ সংযত লক্ষ্য নির্ধারণ করতে যাচ্ছে সরকার।


এ প্রসঙ্গে জানতে চাইলে জাতীয় রাজস্ব বোর্ডের (এনবিআর) সাবেক চেয়ারম্যান ড. মোহাম্মদ আবদুল মজিদ প্রতিদিনের বাংলাদেশকে বলেন, ‘বাজেটের প্রতিটি খাতে হোমওয়ার্ক করতে হবে। সঠিকভাবে হিসাব-কিতাব করে দেখতে হবে কোন খাতে কত টাকা লাগবে। খরচ করার সক্ষমতা আছে কি না সেটিও দেখতে হবে। আন্দাজের ওপর বরাদ্দ দিয়ে পরে এদিক-সেদিক করার যে প্রবণতা সেটি বাজেটের লক্ষ্য অর্জন কিংবা বাস্তবায়ন কোনোটাই সম্ভব হয় না।


তিনি বলেন, ‘এটা যদি সঠিক হয়ে থাকে যে, ব্যয়ের সক্ষমতা বুঝে কিংবা সামগ্রিক পরিস্থিতি বিবেচনায় নিয়ে বাজেট তৈরি হচ্ছে তাহলে এটি খুবই ভালো খবর। এটি করতে পারলে সামগ্রিক অর্থনৈতিক কাঠামোতে একটি শৃঙ্খলা তৈরি হবে।’


বাজেট প্রণয়নে সংশ্লিষ্ট অর্থ বিভাগের কর্মকর্তারা জানান, শুধু বাজেটের আকারই নয়, বরং অর্থনীতির মানদণ্ড নির্ধারক বাজেটের সব সূচক নির্ধারণের ক্ষেত্রেই থাকবে সংযত পদক্ষেপ। অর্থাৎ যতটা সম্ভব শতভাগ বা তার অনেকটাই কাছাকাছি বাস্তবায়নযোগ্য বাজেট প্রণয়নের চেষ্টা চালিয়ে যাচ্ছেন সংশ্লিষ্টরা।


বাস্তবায়নযোগ্য বাজেট প্রণয়নের চেষ্টা প্রসঙ্গে জানতে চাইলে বিশ্বব্যাংকের ঢাকা কার্যালয়ের সাবেক মুখ্য অর্থনীতিবিদ ড. জাহিদ হোসেন প্রতিদিনের বাংলাদেশকে বলেন, ‘বর্তমানে একটি পারসেপশন তৈরি হয়েছে যে, বিরাট বাজেট না হলে কেমন দেখা যায়। এক্ষেত্রে বলা হয় অর্থনীতি বড় হচ্ছে। কিন্তু টার্গেট ঠিক আছে কি না, এটি বাস্তবায়নযোগ্য কি না তা দেখা হচ্ছে না। ফলে ঠিকমতো বাস্তবায়ন হচ্ছে না।’


তিনি বলেন, ‘বাস্তবায়নে সক্ষমতা বাড়ানোর জন্য খরচের ক্ষেত্রে অগ্রাধিকারমূলক বাজেট তৈরি করতে হবে। অর্থাৎ যেটি না হলেই নয় কিংবা না হলে খুব বেশি ক্ষতি হবে না সেটি বিবেচনায় নিতে হবে। যেহেতু একসঙ্গে সবদিকে নজর দেওয়া সম্ভব নয় তাই অগ্রাধিকারগুলো সুনির্দিষ্টভাবে চিহ্নিত থাকতে হবে। এরপর অগ্রাধিকারপ্রাপ্ত খাতে সময়মতো অর্থ ছাড় নিশ্চিত করতে হবে। অনেক সময় অর্থ ছাড়ে দীর্ঘসূত্রতা দেখা যায়। তাই অর্থায়নের জটিলতা দূর করতে হবে।’


ড. জাহিদ বলেন, ‘বাজেট তৈরিতে বিশ্বাসযোগ্যতা জরুরি। এমন কিছু ঘোষণা করা বা ওয়াদা করা উচিত নয় যেটি রাখতে পারব না। অর্থাৎ যেসব ক্ষেত্রে আগে থেকেই জানা যাচ্ছে এগুলো সম্ভব না এ ধরনের পলিসি করলে পুরো প্রক্রিয়াটি প্রশ্নবিদ্ধ হয়ে পড়ে। পলিসের ক্রেডিবিলিটি না থাকলে প্রয়োগ সম্ভব হয় না।’


তিনি বলেন, ‘মূলধনী ব্যয় এবং পরিচালন ব্যয়ের ভারসাম্য ঠিক রাখতে হবে। এমন যাতে না হয় যে স্কুল বানালাম কিন্তু শিক্ষক নেই। গাড়ি দিলাম কিন্তু তেল দিলাম না। এক্ষেত্রে সমন্বয়হীনতা দূর করতে হবে। দেখা যাচ্ছে স্বাস্থ্যকেন্দ্রের ল্যাব তৈরি করা হয় কিন্তু টেকনিশিয়ান নেই কেমিক্যাল নেই।’


শেয়ার করুন