বিএনপি মহাসচিব মির্জা ফখরুল ইসলাম আলমগীর বলেছেন, একটা বেনজীর নয়, একটা আজিজ নয়-এরকম অসংখ্য বেনজীর ও আজিজ তৈরি করেছে আওয়ামী লীগ। চতুর্দিকে দেখবেন, আওয়ামী লীগের সমর্থপুষ্ট একেকটা রাক্ষস হয়ে উঠেছে। মাফিয়াচক্র তৈরি হয়েছে, যারা গোটা দেশটাকে গিলে খাচ্ছে।
মঙ্গলবার বিকালে চট্টগ্রাম নগরীর ইঞ্জিনিয়ার্স ইনস্টিটিউশন মিলনায়তনে ‘জাতিসত্তার রূপকার, রাষ্ট্রনায়ক জিয়াউর রহমান’ শীর্ষক সেমিনারে প্রধান অতিথির বক্তব্যে তিনি এ কথা বলেন। সাবেক রাষ্ট্রপতি জিয়াউর রহমানের ৪৩তম শাহাদতবার্ষিকী উপলক্ষ্যে ‘চট্টগ্রাম ফোরাম’ এ সেমিনারের আয়োজন করে।
চট্টগ্রাম নগর বিএনপির আহ্বায়ক ডা. শাহাদাত হোসেনের সভাপতিত্বে সেমিনারে ধারণাপত্র উপস্থাপন করেন বাংলদেশ ফেডারেল সাংবাদিক ইউনিয়নের (বিএফইউজে) মহাসচিব ও বাংলাদেশ সম্মিলিত পেশাজীবী পরিষদের সদস্যসচিব কাদের গণি চৌধুরী।
চিকিৎসক ও সমাজকর্মী ডা. এসএম সারোয়ার আলমের উপস্থাপনায় সেমিনারে বিশেষ অতিথির বক্তব্য দেন বিএনপি চেয়ারপারসনের উপদেষ্টা গোলাম আকবর খোন্দকার, এসএম ফজলুল হক, বিএনপির চট্টগ্রাম বিভাগীয় সাংগঠনিক সম্পাদক মাহবুবের রহমান শামীম, সাংবাদিক ও প্রাবন্ধিক সৈয়দ আবদাল আহমেদ, কেন্দ্রীয় শ্রম সম্পাদক এএম নাজিম উদ্দীন, খাগড়াছড়ি বিএনপির সভাপতি আবদুল ওয়াদুদ ভুঁইয়া, চট্টগ্রাম নগর বিএনপির সদস্যসচিব আবুল হাশেম বক্কর প্রমুখ।
মির্জা ফখরুল বলেন, আওয়ামী লীগ সব সময়ই গণতন্ত্রবিরোধী। তারা সব সময়ই একনায়কত্ব ও বাকশালে বিশ্বাস করে। তারা গণতন্ত্রের একটা অবয়বে আবার বাকশাল করতে চায়। সেভাবে তারা তাদের শাসনকে আবার নিয়ে আসতে চায়। এজন্য ১৫ বছর ধরে সম্পূর্ণ বেআইনিভাবে বিনা ভোটে জনগণের কোনো ম্যান্ডেট ছাড়াই শুধু রাষ্ট্রযন্ত্রকে দখল করে ক্ষমতা দখল করে আছে। ১৯৭১ সালে আমরা যারা যুদ্ধ করেছি, আমাদের স্বপ্নগুলোকে খান খান করে দিয়ে শুধু একটা দল ও কিছু ব্যক্তিকে লুটপাটের সুযোগ-সুবিধা করে দিয়ে দেশে লুটের ও চুরির রাজত্ব তৈরি করেছে।
তিনি বলেন, আজ বলতে লজ্জা হয়, পুলিশবাহিনীর সাবেক প্রধান ও র্যাবের সাবেক প্রধান, তার বিরুদ্ধে প্রতিদিন হাজার হাজার দুর্নীতির খবর বের হচ্ছে। বাংলাদেশে এমন কোনো এলাকা নেই, যেখানে সে জায়গা কেনেনি, দখল করেনি। এমনকি হিন্দু সম্প্রদায়ের জায়গা পর্যন্ত দখল করে নিয়েছে। সরকার ওই চোরকে, ওই ডাকাতকে বাঁচার জন্য গোপনে বিদেশ পাঠিয়ে দিয়েছে। আমাদের সেনাবাহিনী, যাদের ওপর দেশের সব মানুষের আস্থা রয়েছে, আমরা সবাই ভরসা করি; সেই সেনাবাহিনীর সাবেক সেনাপ্রধানের ওপর মার্কিন স্যাংশন আসে। এবং ওখানে বলে দেওয়া হয় কী কী কারণে তার ওপর স্যাংশন দেওয়া হয়েছে। এর মধ্যে দুর্নীতি একটি। দ্বিতীয় কারণ, মানুষের গণতান্ত্রিক অধিকারে বাধা দেওয়া। এগুলো তারা (আওয়ামী লীগ) তৈরি করেছে।
মির্জা ফখরুল বলেন, শহিদ রাষ্ট্রপতি জিয়াউর রহমানের স্বপ্ন ছিল একটা সুখী-সমৃদ্ধ গণতান্ত্রিক বাংলাদেশের। কিন্তু এরা আমাদের দিচ্ছে একটা দুর্নীতি মাফিয়াযুক্ত এবং আইনের শাসন ও নির্বাচনব্যবস্থাকে ধ্বংস করে দিয়ে ডামি ও মধ্যরাতের নির্বাচন। মানুষ বেশিদিন এটা সহ্য করবে না, করছেও না। মানুষ প্রতিবাদ করছে, লড়াই-সংগ্রাম করছে। ১৫ বছর ধরে আমরা এ ভয়াবহ দানবের বিরুদ্ধে লড়াই করছি। শহিদ জিয়ার আরাধ্য কাজগুলো যা এখনো শেষ হয়নি, সেগুলো শেষ করার জন্য, দেশকে সত্যিকার অর্থে একটা গণতান্ত্রিক রাষ্ট্রে পরিণত করার জন্য সবাইকে আরও বেশি ত্যাগ স্বীকার করে তীব্র আন্দোলন গড়ে তুলতে হবে। এখন প্রয়োজন দুর্বার জাতীয় ঐক্য।
বিএনপি মহাসচিব বলেন, জিয়াউর রহমান চট্টগ্রাম থেকে স্বাধীনতার ঘোষণা দিয়েছিলেন। বহুদলীয় গণতন্ত্র প্রতিষ্ঠা করেছিলেন। বাকশাল করার পর আওয়ামী লীগকে বিভক্ত করে দেওয়া হয়েছিল। শহিদ রাষ্ট্রপতি জিয়াউর রহমান যখন একদল থেকে বহুদলীয় গণতন্ত্র প্রতিষ্ঠা করেছিলেন, তখন দরখাস্ত করে বাংলাদেশ আওয়ামী লীগকে নিবন্ধিত করা হয়েছে। অর্থাৎ আওয়ামী লীগের তখন দ্বিতীয় জš§ হয়েছে। এটা আওয়ামী লীগ একেবারেই মনে করতে চায় না।