০৭ জুলাই ২০২৪, রবিবার, ০৬:৫৯:০৩ অপরাহ্ন
সন্তানদের চেহারা ‘বিদেশিদের’ মতো, বিপাকে বাবা-মা
  • আপডেট করা হয়েছে : ২৬-০৬-২০২৪
সন্তানদের চেহারা ‘বিদেশিদের’ মতো, বিপাকে বাবা-মা

কুড়িগ্রামের ভুরুঙ্গামারী উপজেলায় একই পরিবারে জন্ম নেওয়া তিন সন্তানের মধ্যে জন্ম থেকেই দুই সন্তানের চেহারা হয়েছে বিদেশিদের মতো। 


হঠাৎ দেখে অনেকেই চমকে উঠলেও এলাকাবাসী সহজভাবে নিয়েছেন এই দুই ভাইকে। তবে প্রচণ্ড রোদে ভীষণ কষ্ট হয় এই দুই ভাইয়ের। চোখে ভীষণ চাপ পড়ে, চামড়ায় লালচে ও কালচে দাগ ওঠে। 


চিকিৎসকরা বলছেন, রোদে চোখে কালো চশমা এবং স্কিনের জন্য দক্ষ চিকিৎসকের পরামর্শ নিলে ভালো থাকবে তারা।


কুড়িগ্রাম জেলার সর্ব উত্তরের সীমান্তঘেঁষা ভূরুঙ্গামারী উপজেলার শিলখুড়ি ইউনিয়নের দক্ষিণ ঢলডাঙ্গা মাস্টারপাড়া গ্রামের দরিদ্র দর্জি আনোয়ার হোসেন। আপন খালোতো বোন নুরনাহারের সঙ্গে তার বিয়ে হয়। বিয়ের এক বছর পর জন্ম নেয় প্রথম সন্তান নাঈম ইসলাম কিন্তু তার ধবধবে চেহারা দেখে তারা একটু চমকে ওঠেন। সৃষ্টিকর্তার এই উপহারকে তারা মেনে নিতে বাধ্য হন। 

এরপর মেজো ছেলে রাকিব ইসলাম একজন সাধারণ বাঙালি ছেলের মতো জন্মগ্রহণ করে। তৃতীয় সন্তান বায়েজিদ ইসলাম বড় ভাই নাঈম ইসলামের মতো সাদা চেহারা নিয়ে জন্মগ্রহণ করে। দরিদ্র পরিবারে তৃতীয় সন্তান জন্ম নেওয়ার পর পরিবারের দারিদ্র্যতা দূরীকরণের জন্য তিনি ঢাকায় চলে যান কাজের উদ্দেশ্যে। এখন তিনি ঢাকাতেই দর্জির কাজ করে যে আয় করেন তাই দিয়েই কোনোরকমে সংসার চলছে। 


বড় ছেলে নাঈম ইসলাম ইন্টার পাশ করার পর বাবার দুর্দশা ঘোচাতে ঢাকায় গার্মেন্টসে চাকরি করতে যান। সেখানে এক বছর কাজ করার পর চোখে ক্ষীণ দেখার কারণে কাজকর্মে সমস্যা হওয়ায় ঈদুল ফিতরের এক সপ্তাহ পর গ্রামে ফিরে আসেন তিনি।


নাঈমের মা নুরনাহার বলেন, ছেলে দুটোর ভবিষ্যৎ নিয়ে খুব বিপাকে আছি। এখন আমরা আছি ওদের দুজনের দেখভাল করছি, আমরা মরে গেলে ওদের দুই ভাইয়ের কী হবে।

প্রতিবেশী সেকেন্দার আলী বলেন, নাঈম ছাত্রও ভালো। অভাবের কারণে পড়ালেখা চালিয়ে যেতে পারে না। এ বয়সে অনেকে সংসারের হাল ধরলেও স্বাস্থ্যগত সমস্যার কারণে সে ঘরবন্দি। কোনো ব্যক্তি প্রতিষ্ঠান যদি তার একটা চাকরির ব্যবস্থা করত পরিবারটির উপকার হতো।


নাঈম বলেন, আমার চেহারা এমন হওয়ার কারণে কাজ করতে পারি না। রোদে গেলে শরীরে ফোসকা পড়ে। চোখে ঠিকমতো দেখতে পাই না। ছায়ার ভিতরে কোনো কাজকর্মের ব্যবস্থা করে দিলে আমার উপকার হতো। 


তিনি আরও বলেন, আর্থিক কারণে চোখের ও স্কিনের ডাক্তার দেখানো সম্ভব হয়নি। পরিবারের দারিদ্র্যতা মেটাতে একটি চাকরি হলে খুব ভালো হতো। আমার এই চেহারা নিয়ে আমার কোনো আপসোস নেই। আমি এতেই খুশি।


কুড়িগ্রামের সাবেক সিভিল সার্জন ডা. এসএম আমিনুল ইসলাম বলেন, থাইরয়েড হরমোনজনিত সমস্যার কারণে তারা চর্মরোগে আক্রান্ত হয়েছে। এটিকে লিকোডারমা নামে অভিহিত করা হয়। এর ফলে চামড়ায় প্রদাহ হয়। চোখে চাপ সৃষ্টি হয়। এ সমস্যা নিরসনে চিকিৎসকদের তত্ত্বাবধানে থাকতে হবে।


শেয়ার করুন