০৩ ডিসেম্বর ২০২৪, মঙ্গলবার, ১১:০৭:৫৬ অপরাহ্ন
শিক্ষার্থীদের মূল্যায়ন পদ্ধতি নির্ধারণ নিয়ে হিমশিম অবস্থা
  • আপডেট করা হয়েছে : ২৭-০৬-২০২৪
শিক্ষার্থীদের মূল্যায়ন পদ্ধতি নির্ধারণ নিয়ে হিমশিম অবস্থা

নতুন পাঠ্যক্রমে পরীক্ষা ‘নেই’, নম্বর ‘নেই’; শিক্ষার্থীরা কিছু শিখছে না; লেখাপড়া থেকে দূরে যাচ্ছে ছেলেমেয়েরা- এমন সব অভিযোগ অভিভবকদের। এই পাঠ্যক্রমের বিরোধিতা করে সোশ্যাল মিডিয়ায় আলোচনা-সমালোচনা করেছেন অনেকেই। প্রকাশ্যে সভা-সমাবেশ করে আইনশৃঙ্খলা বাহিনীর কাছে আটকও হয়েছেন কতিপয় অভিভাবক। এ অবস্থায় শিক্ষাক্রম বাস্তবায়ন ও মূল্যায়ন পদ্ধতি ঠিক করতে একটি কমিটি গঠন করে শিক্ষা মন্ত্রণালয়।


শিক্ষাবর্ষের ছয় মাস অতিবাহিত হলেও নতুন কারিকুলাম বাস্তবায়নের ক্ষেত্রে নানাবিধ প্রতিবন্ধকতায় হিমশিম খাচ্ছেন মূল্যায়ন পদ্ধতির নির্ধারকরা। মূল্যায়ন পদ্ধতি নিয়ে আনুষ্ঠানিক-অনানুষ্ঠানিকভাবে প্রকাশ হওয়া এক-দুটি বিষয় নিয়েও তীব্র সমালোচনা করছেন অভিভাবকরা।


শিক্ষামন্ত্রী মহিবুল হাসান চৌধুরী গত ৫ জুন সচিবালয়ে মন্ত্রণালয়ের এক অনুষ্ঠানে বলেছেন, এসএসসিতে কেউ দুই বিষয়ে ফেল করলেও এইচএসসিতে ভর্তি হতে পারবে। কিন্তু তারা পূর্ণ সনদ পাবে না। তবে মাকর্শিট পাবে। পূর্ণ সনদ পেতে পরবর্তীকালে দুই বিষয়ে পরীক্ষা দিয়ে পাশ করতে হবে।


তার এই বক্তব্যের জের ধরে সোশ্যাল মিডিয়ায় তীব্র সমালোচনা করেছেন অভিভাবকরা। বিভিন্ন শিক্ষা প্রতিষ্ঠানের সোশ্যাল মিডিয়ার পেজে সরব হয়ে নানাবিধ মন্তব্য করেছেন তারা। অভিভাবকদের ভাষ্য- কোনো শিক্ষার্থী যদি ফেল করে ওপরের শ্রেণিতে ওঠার সুযোগ পায়, সে তো লেখাপড়ায় মনোযোগী হবে না।


শিক্ষা মন্ত্রণালয়ে গত ৫ জুন ছিল ‘এইচএসসি ও সমমান পরীক্ষা সুষ্ঠু ও সুন্দর পরিবেশে অনুষ্ঠানের লক্ষ্যে জাতীয় মনিটরিং ও আইনশৃঙ্খলা কমিটি’র সভা। সভাশেষে শিক্ষামন্ত্রীর কাছে জানতে চাওয়া হয়- কবে নতুন কারিকুলামের মূল্যায়ন পদ্ধতি চূড়ান্ত করে প্রকাশ করা হবে? এর জবাবে তিনি জানিয়েছেন বিষয়টি নিয়ে কাজ চলছে। চূড়ান্ত হওয়ার পর প্রকাশ করা হবে।


জানা গেছে, শিক্ষাক্রম বাস্তবায়ন ও মূল্যায়ন পদ্ধতি চূড়ান্তকরণ সংক্রান্ত কমিটির একটি প্রাথমিক প্রতিবেদন পেয়েছে শিক্ষা মন্ত্রণালয়। সেটি আরও সুচারুরূপে পরীক্ষা-নিরীক্ষা করছেন শিক্ষা বোর্ডের পরীক্ষা মূল্যায়ন বিশেষজ্ঞরা। তাদের মতামতের পরই চূড়ান্ত হবে নতুন কারিকুলামের মূল্যায়ন পদ্ধতি।


এ প্রসঙ্গে কমিটির নির্ভরশীল সূত্রে জানা গেছে, তাদের কাছে নতুন কারিকুলাম বাস্তবায়নের ক্ষেত্রে বেশ কিছু প্রতিবন্ধকতা দৃষ্টিগোচর হয়েছে। যেমন- ‘সব শিক্ষা প্রতিষ্ঠানে শিক্ষক-শিক্ষার্থী অনুপাত আদর্শ মানে নেই; শিক্ষাক্রম বাস্তবায়নের জন্য পর্যাপ্ত ও মানসম্মত শিক্ষকের অভাব; তথ্যপ্রযুক্তিসম্পন্ন ক্লাসরুম সুবিধা ও অডিও ভিজ্যুয়াল সুবিধার অপর্যাপ্ততা; পাবলিক মূল্যায়নে বিষয়ভিত্তিক প্রত্যবেক্ষকের (ইনভিজিলেটর) অপ্রতুলতা; যথাযথ শিখন পরিবেশের অভাব; অভিভাবক ও অংশীজনের শিক্ষাক্রম সম্পর্কে ধারণাগত অস্পষ্টতা; মূল্যায়ন কার্যক্রমে বিষয়বস্তুনির্ভর লিখিত পরীক্ষার স্বল্পতা; নৈপুণ্য অ্যাপ ব্যবহারে শিক্ষকদের দক্ষতা ও অভিজ্ঞতার অভাব; মূল্যায়ন কার্যক্রম পরিচালনায় শিক্ষকদের নির্ভরযোগ্যতা নিয়ে সংশয় ইত্যাদি।


জানা গেছে, শিখনকালীন অভিজ্ঞতা ও কার্যক্রমভিত্তিক মূল্যায়ন শতকরা ৫০ ভাগ এবং লিখিত মূল্যায়ন ৫০ ভাগ রাখার প্রস্তাব আছে কমিটির। অর্থাৎ মূল্যায়নের অর্ধেক নম্বর শিক্ষকদের ওপর ছেড়ে দেওয়া হয়েছে।


এ প্রসঙ্গে মতিঝিল আইডিয়াল স্কুল অ্যান্ড কলেজের সপ্তম শ্রেণির এক শিক্ষার্থীর অভিভাবক অ্যাডভোকেট অহিদুল ইসলাম বলেন, নিজ নিজ স্কুলশিক্ষকদের কাঁধে পুরো মূল্যায়নের সুযোগ থাকলে এর অপব্যবহারের সুযোগও বাড়বে। কোনো শিক্ষার্থীকে পছন্দ-অপছন্দ হলে এর রেশ থাকবে ওই শিক্ষার্থীর ফলে। এমনকি শিক্ষার্থীদের ব্ল্যাকমেইল করে শিক্ষকরা কোচিংয়ে পড়তে বাধ্য করবেন। কেননা, তার কাছেই পরীক্ষার নম্বর। এমনিতে স্কুলশিক্ষকদের কাছে প্রাইভেট কোচিং করার প্রবণতা আছে। প্রত্যক্ষ-প্ররোক্ষ একটা ভয় থাকে অভিভাবকদের মধ্যে যে সন্তানের ফল খারাপ হবে।


নতুন মূল্যায়ন সম্পর্কে জানতে চাইলে একটি বোর্ড চেয়ারম্যান নাম না প্রকাশ করার শর্তে বলেন, এটি এখনো চূড়ান্ত হয়নি। তবে বিদ্যমান পদ্ধতি থেকে একেবারে ভিন্ন হচ্ছে- এতটুকু বলতে পারি। বোর্ডগুলো পরীক্ষা গ্রহণ করে থাকে, সে ক্ষেত্রে পরীক্ষকদের দায়িত্ব, পরীক্ষক নিয়োগ এবং কেন্দ্র পর্যবেক্ষক প্রাপ্তি নিয়ে যেসব প্রস্তাব আসছে, সে বিষয়ে আমরা মতামত দিয়েছি। তিনি বলেন, নতুন কারিকুলাম অনুযায়ী লেখাপড়া এবং মূল্যায়নের ক্ষেত্রে অবকাঠামো উন্নয়ন খুবই জরুরি। নতুন কারিকুলাম বাস্তবায়নে শিক্ষক-শিক্ষার্থীর অনুপাত কমাতে হবে। আর সে কারণে অনেক শিক্ষক নিয়োগ দেওয়া প্রয়োজন। এসব সমস্যার সমাধান রাতারাতি সম্ভব না। সে কারণেই সুন্দর একটি কারিকুলাম বাস্তবায়নে কিছু প্রতিবন্ধকতা থেকেই যাবে, যা ধীরে ধীরে মোকাবিলা করতে হবে।


উল্লেখ্য, জাতীয় শিক্ষাক্রম রূপরেখার আলোকে ২০২৩ শিক্ষাবর্ষে প্রথম, ষষ্ঠ ও সপ্তম শ্রেণিতে নতুন পাঠদান শুরু হয়। চলতি বছর ২০২৪ শিক্ষাবর্ষে দ্বিতীয়, তৃতীয়, অষ্টম ও নবম শ্রেণিতে নতুন শিক্ষাক্রম বাস্তবায়ন শুরু হয়েছে।


শেয়ার করুন