শেখ হাসিনা পদত্যাগ করে ভারতে পালায়ন করেছেন। বিমানে দিল্লি গেছেন তিনি। তার অবতরণে যে সংকট সৃষ্টি হয়েছে, তার জন্য দিল্লি একেবারেই প্রস্তুত ছিল না।
সোমবার রাতে প্রধানমন্ত্রী নরেন্দ্র মোদির সভাপতিত্বে ক্যাবিনেটের নিরাপত্তা বিষয়ক কমিটি বাংলাদেশ নিয়ে আলোচনা করতে জরুরি বৈঠকেও বসেছিল। সেখানে পররাষ্ট্রমন্ত্রী এস জয়শঙ্কর, স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী অমিত শাহ, অর্থমন্ত্রী নির্মলা সীতারামনসহ সিনিয়র কর্মকর্তারা সবাই উপস্থিত ছিলেন। বাংলাদেশ নিয়ে ভারত ঠিক কী করবে, ওই বৈঠকে সে ব্যাপারেও কোনো নির্দিষ্ট সিদ্ধান্ত নেওয়া যায়নি।
দিল্লিতে একাধিক পর্যবেক্ষক বিবিসি বাংলাকে জানিয়েছেন, সামগ্রিকভাবে এই পরিস্থিতি ভারত সরকারকে একটা ‘ক্যাচ টোয়েন্টি টু সিচুয়েশন’ বা চরম উভয় সংকটে ফেলে দিয়েছে, এ কথা মনে করার যথেষ্ঠ কারণ আছে।
আর এই বিপদটা আসছে দু’দিক থেকে – এক, ব্যক্তি শেখ হাসিনার ক্ষেত্রে দিল্লি কী পদক্ষেপ নেবে আর দুই, বাংলাদেশের ভেতরে যা ঘটছে সেটাকেই বা দিল্লি কীভাবে অ্যাড্রেস করবে।
যেমন, শেখ হাসিনাকে দীর্ঘকালীন ভিত্তিতে রাজনৈতিক আশ্রয় দেওয়াটা ভারতের উচিত হবে কিনা, তা নিয়েও ভারতে দুরকম মতামত শোনা যাচ্ছে। অনেকে যেমন এর পক্ষে যুক্তি দিচ্ছেন, আবার এর বিপক্ষেও মত দিচ্ছেন কেউ কেউ।
আবার বাংলাদেশের ভেতরে এই মুহূর্তে যে ধরনের পরিস্থিতির খবর আসছে, সেখানে দিল্লির কী করণীয় আছে তা নিয়েও পর্যবেক্ষক ও বিশ্লেষকদের মধ্যে স্পষ্ট দ্বিমত আছে।
দিল্লিতে বর্তমানে অন্য আর একটি মতবাদ হল, ভারত যদি বাংলাদেশের এই পরিস্থিতি দেখেও চুপচাপ হাত গুটিয়ে থাকে তাহলে ঘরের পাশে আর একটি মৌলবাদী শক্তির উত্থান অবধারিত, এমন কী লক্ষ লক্ষ হিন্দু শরণার্থীর ধাক্কা সামলানোর জন্যও ভারতকে প্রস্তুত থাকতে হতে পারে।
সরকারিভাবে ভারত অবশ্য এখনো ‘ওয়েট অ্যান্ড ওয়াচ’ – অর্থাৎ পরিস্থিতির দিকে সতর্ক নজর রাখার কৌশল নিয়েই এগোচ্ছে, কিন্তু এই পাল্টাপাল্টি যুক্তিতর্কগুলো ভারতকে যে প্রবল দ্বিধাদ্বন্দ্বে ফেলেছে তাতে কোনো সংশয় নেই।
শেখ হাসিনা ও বাংলাদেশ পরিস্থিতি প্রসঙ্গে এই যুক্তিগুলো কী, এই প্রতিবেদনে সেটাই তুলে ধরার চেষ্টা করা হয়েছে।
সোমবার বিকালে যখন শেখ হাসিনার গতিবিধি নিয়ে তখনও চরম অনিশ্চয়তা, ঢাকায় ভারতের হাই কমিশনার ছিলেন এমন একজন সাবেক শীর্ষস্থানীয় কূটনীতিবিদকে মেসেজ করেছিলাম, শেখ হাসিনা হেলিকপ্টারে ঢাকা ছেড়েছেন জানতে পারছি, আপনি কিছু শুনেছেন?