রাজশাহী জেলা প্রশাসনের আয়োজনে বৈষম্যবিরোধী ছাত্র আন্দোলনের সমন্বয়ক ছাত্র-ছাত্রীদের সঙ্গে মতবিনিময় সভা অনুষ্ঠিত হয়েছে।
শনিবার (১০ আগস্ট) দুপুর সাড়ে ১২টায় জেলা প্রশাসকের সম্মেলনকক্ষে আয়োজিত সভায় সভাপতিত্ব করেন জেলা প্রশাসক শামীম আহমেদ।
এ সময় জেলা প্রশাসক সমন্বয়কদের বিভিন্ন দাবি-দাওয়ার কথা মনোযোগ দিয়ে শোনেন ও সার্বিক সহযোগিতা দেওয়ার আশ্বাস দেন।
এ সময় সমন্বয়করা বলেন, আমরা আন্দোলন করেছি স্বাধীন বাংলাদেশে একটি মুক্ত বিচারবিভাগের জন্য, যেখানে বল অপরাধীর বিচার হবে। যারা আমাদের ভাইদের আন্দোলনের সময় হত্যা ও আহত করেছে, তাদের অবশ্যই বিচার চাই। এ আন্দোলনে ছাত্র-জনতা বাকস্বাধীনতা, নিরপেক্ষ সরকার ও ন্যায়ভিত্তিক রাষ্ট্র প্রতিষ্ঠার জন্য প্রাণ দিয়েছে। আমরা চাই এমন রাষ্ট্র গঠন করতে যেখানে দুর্নীতি, চাঁদাবাজি ও বৈষম্য থাকবে না।
তারা আরও বলেন, আমরা আন্দোলন করেছি- দেশকে ৫৩ বছরের কলঙ্ক মুক্ত করে ন্যায় বিচার প্রতিষ্ঠা করতে। এ আন্দোলনকে ব্যবহার করে কোনো রাজনৈতিক দলকে সুবিধা নিতে দেওয়া হবে না। এক্ষেত্রে দ্রুত সময়ের মধ্যে পুলিশকে সক্রিয় করা, আইনশৃঙ্খলা পরিস্থিতি স্বাভাবিক করা, অবৈধ অস্ত্র উদ্ধার করা, শিক্ষার্থীদের সড়ক ব্যবস্থাপনার কাজে যানবাহন দেওয়া ব্যবস্থা করতে হবে। এ ব্যাপারে আমরা জেলা প্রশাসনের সহযোগিতা কামনা করছি।
এ সময় রাজশাহী জেলা প্রশাসক শামীম আহমেদ শিক্ষার্থীদের বলেন, আমরা এখন একটা কঠিন সময় পার করছি। সবাইকে নিজ নিজ অবস্থান থেকে সতর্ক থেকে কাজ করতে হবে। শিক্ষার্থীদের সবগুলো দাবিই যৌক্তিক। আমরা এসব দাবিই সমর্থন করি। তবে আমাদের কিছু সীমাবদ্ধতা আছে। তাই পর্যায়ক্রমে সবগুলো দাবি পূরণ করা হবে।
তিনি আরও বলেন, জেলার মোহনপুর থানাসহ নগরীর অনেক থানায় ভাঙচুর ও অগ্নিসংযোগ করা হয়েছে। গাড়ি পোড়ানো হয়েছে। তাই এখন যানবাহন সংকট দেখা দিয়েছে। তবুও আমরা আইন-শৃঙ্খলা স্বাভাবিক করতে, সাধারণ মানুষের জীবনের নিরাপত্তা দিতে নিরলসভাবে কাজ শুরু করেছি। এখনও তা অব্যাহত আছে।
জেলা প্রশাসক বলেন, রাজশাহীতে সরকারি স্থাপনাসহ জনগণের জানমালের নিরাপত্তা রক্ষা করা নাগরিক হিসেবে আমাদের প্রত্যেকের দায়িত্ব। এ ব্যাপারে জেলা প্রশাসন দায়িত্বশীল ভূমিকা পালন করছে। কিন্তু শিক্ষার্থীসহ সর্বস্তরের মানুষকেই সরকারের স্থাপনাগুলো রক্ষায় এগিয়ে আসতে হবে। কারণ এগুলো মূলত জনগণেরই সম্পদ।
মতবিনিময় সভায় সেনাবাহিনীর লেফটেন্যান্ট কর্নেল শামীম আহমেদ জানান, আইন-শৃঙ্খলা বাহিনী, শিক্ষার্থী, সাধারণ জনগণসহ সবার সম্মিলিত প্রচেষ্টায় স্বপ্নের সোনার বাংলা গড়তে হবে। এক্ষেত্রে প্রতিটি পদক্ষেপে আমাদের ব্রেইন ও হার্টের সমন্বয়ে কাজ করতে হবে। তাহলে দ্রুততম সময়ের মধ্যে কাঙ্ক্ষিত লক্ষ্যে পৌঁছাতে পারবো। মাদকের ব্যাপারে বাংলাদেশ সেনাবাহিনীর জিরো টলারেন্স রয়েছে। আইন-শৃঙ্খলা পরিস্থিতি জোরদার করতে বাংলাদেশ সেনাবাহিনী দিনরাত নিরলসভাবে কাজ করছে। এক্ষেত্রে ছাত্র-ছাত্রীরা বিভিন্নভাবে আমাদের সহযোগিতা করছে। এছাড়া সব থানার মাধ্যমে জনগণকে সেবা দিয়ে যাচ্ছে বাংলাদেশ সেনাবাহিনী।
সভায় পুলিশ সুপার মো. সাইফুর রহমান, আরএমপির বিশেষ পুলিশ সুপার মুহম্মদ আব্দুর রকিব উপস্থিত ছিলেন।
এছাড়া স্থানীয় সরকারের উপ-পরিচালক আশরাফুল ইসলাম, রাজশাহীর অতিরিক্ত জেলা প্রশাসক (সার্বিক) কল্যাণ চৌধুরী, অতিরিক্ত জেলা প্রশাসক (রাজস্ব) সরকার অসীম কুমার, অতিরিক্ত জেলা প্রশাসক টুকটুক তালুকদার, সহকারী কমিশনার (ভূমি) অভিজিত সরকার, নেজারত ডেপুটি কালেক্টর অয়ন ফারহান শামসসহ জেলা প্রশাসনের ঊর্ধ্বতন কর্মকর্তারা উপস্থিত ছিলেন।