১৯ সেপ্টেম্বর ২০২৪, বৃহস্পতিবার, ১১:১১:২৭ অপরাহ্ন
সাংবাদিক নির্যাতন করা সেই নাজিমকে করা হলো ইউএনও
  • আপডেট করা হয়েছে : ০৮-০৯-২০২৪
সাংবাদিক নির্যাতন করা সেই নাজিমকে করা হলো ইউএনও

সাংবাদিক আরিফুল ইসলাম রিগানকে মধ্যরাতে ঘরের দরজা ভেঙে তুলে নিয়ে গিয়ে নির্যাতনকারী কুড়িগ্রাম জেলা প্রশাসনের তৎকালীন রেভিনিউ ডেপুটি কালেক্টর (আরডিসি) নাজিম উদ্দিনকে কিশোরগঞ্জ জেলার ইটনা উপজেলা নির্বাহী অফিসার (ইউএনও) হিসেবে পদায়ন করা হয়েছে।


শনিবার (৭ সেপ্টেম্বর) ঢাকা বিভাগীয় কমিশনারের কার্যালয়ের সিনিয়র সহকারী কমিশনার কাউছার হামিদ স্বাক্ষরিত এক প্রজ্ঞাপনে তাকে ইটনার ইউএনও হিসেবে পদায়ন করা হয়। বিভাগীয় কমিশনারের কার্যালয়ের ওয়েবসাইটে প্রজ্ঞাপনটি প্রকাশ করা হয়েছে। 


আরিফুল ইসলাম রিগান অনলাইন নিউজ পোর্টাল বাংলা ট্রিবিউনের কুড়িগ্রাম প্রতিনিধি।


আইনজীবীরা বলছেন, আইনের দৃষ্টিতে পলাতক আসামিকে ইউএনও হিসেবে পদায়ন করা সম্পূর্ণ বেআইনি। এমন সিদ্ধান্ত আদালত অবমাননার শামিল।


জানা যায়, কুড়িগ্রামের তৎকালীন জেলা প্রশাসক সুলতানা পারভীনের নামে সরকারি পুকুরের নামকরণ নিয়ে সংবাদ প্রকাশের জেরে ২০২০ সালের ১৩ মার্চ দিবাগত মধ্যরাতে সাংবাদিক আরিফকে তার শোবার ঘরের দরজা ভেঙে তুলে নিয়ে যান জেলা প্রশাসনের কয়েকজন ম্যাজিস্ট্রেট ও আনসার সদস্যরা। তৎকালীন আরডিসি নাজিম উদ্দিনের নেতৃত্বে আরিফকে পেটাতে পেটাতে গাড়িতে তুলে জেলা শহরের পূর্ব প্রান্তে ধরলা নদীর তীরে ক্রসফায়ারের উদ্দেশে নিয়ে যাওয়া হয়। সেখান থেকে ফিরিয়ে জেলা প্রশাসকের কার্যালয়ে নিয়ে বিবস্ত্র করে নির্যাতন করা হয়। আরিফের ঘরে আধা বোতল মদ ও দেড়শো’ গ্রাম গাঁজা পাওয়ার অভিযোগ এনে মধ্যরাতে মোবাইল কোর্ট বসিয়ে এক বছরের কারাদণ্ড ও ৫০ হাজার টাকা অর্থদণ্ড দিয়ে রাতেই কারাগারে পাঠানো হয়।


এ ঘটনায় দেশজুড়ে প্রতিবাদের ঝড় উঠলে একদিনের মাথায় জামিনে মুক্তি পান আরিফ। পরে তৎকালীন ডিসি সুলতানা পারভীন, আরডিসি নাজিম উদ্দিন, এনডিসি রাহাতুল ইসলাম ও নির্বাহী ম্যাজিস্ট্রেট রিন্টু বিকাশ চাকমাকে প্রত্যাহার করে জনপ্রশাসন মন্ত্রণালয়। তাদের বিরুদ্ধে বিভাগীয় কার্যধারা শুরু করে। অভিযোগ প্রমাণ হওয়ায় সুলতানা পারভীনকে দুই বছরের জন্য বেতন বৃদ্ধি (ইনক্রিমেন্ট) স্থগিত, এনডিসি রাহাতুল ইসলামের তিনটি ইনক্রিমেন্ট কর্তন, আরডিসি নাজিম উদ্দিনকে নিম্নধাপে নামিয়ে দেওয়া এবং রিন্টু বিকাশ চাকমাকে চাকরিচ্যুত করার সিদ্ধান্ত নেয় জনপ্রশাসন মন্ত্রণালয়। তবে তারা রাষ্ট্রপতির কাছে দাপ্তরিক দায়মুক্তি নিয়ে চাকরিতে বহাল রয়েছেন। 


২০২০ সালে সংঘটিত ঘটনার পর নির্যাতনের শিকার সাংবাদিক আরিফ কুড়িগ্রাম সদর থানায় এজাহার দিলে সে বছর ৩১ মার্চ হাইকোর্টের নির্দেশে ডিসি সুলতানা পারভীন ও আরডিসি নাজিমসহ অভিযুক্তদের বিরুদ্ধে হত্যাচেষ্টা ও নির্যাতনের অভিযোগে মামলা রেকর্ড হয়। গত ৪ বছরেও সেই মামলা আলোর মুখ দেখেনি। মামলাটি বর্তমানে রংপুর পিবিআইয়ের কাছে তদন্তাধীন। গত চার বছরে ওই মামলার কোনও আসামি আদালতে আত্মসমর্পণও করেনি। বরং আইন-আদালতকে ‘বৃদ্ধাঙ্গুলি দেখিয়ে’ তাদের প্রত্যেককেই বিভিন্ন দায়িত্বে পোস্টিং দেয় জনপ্রশাসন মন্ত্রণালয়।


শেয়ার করুন