২১ নভেম্বর ২০২৪, বৃহস্পতিবার, ০৮:০২:৩৩ অপরাহ্ন
গরমে হাঁসফাঁস অবস্থা হাসপাতালের রোগীদের
  • আপডেট করা হয়েছে : ০৫-০৭-২০২২
গরমে হাঁসফাঁস অবস্থা হাসপাতালের রোগীদের

 রাজশাহী মেডিকেল কলেজ (রামেক) হাসপাতালের প্রায় সবদিকেই উঁচু উঁচু ভবন। বৈদ্যুতিক পাখা বন্ধ হয়ে গেলে বাতাস ঢোকার তেমন সম্ভাবনা নেই। তাই বিদ্যুৎ সরবরাহ বন্ধ হলে গরমে ছটফট করেন রোগীরা। গত তিন দিন ধরে ঘন ঘন লোডশেডিংয়ের কারণে রোগীদের কষ্ট বেড়েছে আরও বেশি। ওয়ার্ডে ওয়ার্ডে গরমে হাঁসফাঁস করছেন রোগীরা।

উত্তরের সবচেয়ে বড় এই হাসপাতালটিতে ওয়ার্ডের সংখ্যা ৫৭টি। ১ হাজার ২০০ শয্যার এ হাসপাতালে সব সময় আড়াই থেকে তিন হাজার রোগী ভর্তি থাকেন। রোগীদের সঙ্গে থাকেন স্বজনেরাও। লোডশেডিংয়ের কারণে সবাইকে চরম দুর্ভোগ পোহাতে হচ্ছে। হাসপাতাল কর্তৃপক্ষ অসহায়ের মত তা দেখলেও আপাতত করণীয় কিছু নেই।

হাসপাতালের ৩২ নম্বর ওয়ার্ডে রাখা হয় হৃদরোগীদের। ওয়ার্ডটিতে গিয়ে দেখা যায়, বিভিন্ন ইউনিটে বড় বড় এসি আছে। সিলিংয়ে ঝুলছে ফ্যানও। কিন্তু বিদ্যুৎ না থাকায় সবই বন্ধ। গরমে ছটফট করছেন হৃদরোগে আক্রান্তরা। স্বজনেরা হাতপাখা দিয়ে বাতাস করলেও গরম কাটছে না। আবার হাতপাখায় বাতাস করতে করতে স্বজনেরাও ক্লান্ত হয়ে পড়ছেন।

জুলমত আলী নামের এক রোগীর মেয়ে শাহিনূর খাতুন বলেন, ‘এখানে সবাই হৃদরোগে আক্রান্ত। অন্তত এই ওয়ার্ডটাতে জেনারেটরের মাধ্যমে বিদ্যুৎ সরবরাহ নির্বিঘ্ন করা দরকার। ১০-১৫ মিনিট পর পরই বিদ্যুৎ চলে যাচ্ছে। আবার আধাঘণ্টা পর আসছে। এভাবেই চলছে। চিকিৎসার জন্য এখানে হৃদরোগীদের রাখাটাই এখন চরম ঝুঁকিপূর্ণ হয়ে উঠেছে।’

নিচতলায় অর্থোপেডিক্স বিভাগের ৩১ নম্বর ওয়ার্ডে গিয়ে দেখা যায়, সেখানেও রোগীদের নাজেহাল অবস্থা। হাত-পা ভাঙা কিংবা দুর্ঘটনায় আহতদের এই ওয়ার্ডে চিকিৎসা দেওয়া হয়। চিকিৎসাধীন এক রোগীর ভাই শামসুল ইসলাম বলেন, ‘এই ওয়ার্ডটিতে সব সময় একটা গুমোট গন্ধ থাকে। ফ্যান বন্ধ হলে গন্ধ আরও বাড়ে। এতে ওয়ার্ডে থাকা কঠিন হয়ে পড়ে। গরমে রোগী, রোগীর সঙ্গে থাকা লোক সবারই একই অবস্থা। খুব কষ্ট হচ্ছে কয়দিন ধরে।’

হাসপাতালের পরিচালক ব্রিগেডিয়ার জেনারেল শামীম ইয়াজদানী বলেন, ‘বিদ্যুতের লোডশেডিংয়ের জন্য রোগীদের একটু কষ্টই হচ্ছে। আমাদের মোট ৫৭টা ওয়ার্ড। সব ওয়ার্ডে জেনারেটর দিয়ে ফ্যান চালানোর সুবিধা নেই। শুধু আইসিইউ, পোস্ট অপারেটিভ ওয়ার্ড কিংবা অপারেশন থিয়েটারগুলোতে জেনারেটরের সুবিধা পাওয়া যায়। ফলে লোডশেডিং হলে ওয়ার্ডের ফ্যানগুলো চলে না। রোগীদের স্বজনদের তখন হাতপাখাই ভরসা।’

তিনি বলেন, ‘হাসপাতাল হিসেবে অন্তত আমাদের যেন নিরবচ্ছিন্ন বিদ্যুৎ সরবরাহ করা হয় তার জন্য বিদ্যুৎ বিভাগকে অনুরোধ করেছিলাম। কিন্তু লাভ হয়নি। তারা বলেছে- এ এলাকাকে বাদ দিয়ে লোডশেডিং করা যাবে না। এখন দেখা যাক কতদিনে পরিস্থিতি স্বাভাবিক হয়।’

নর্দান ইলেকট্রিসিটি সাপ্লাই কোম্পানি (নেসকো) লিমিটেডের রাজশাহীর বিক্রয় ও বিতরণ বিভাগের প্রধান প্রকৌশলী আব্দুর রশিদ জানান, রাজশাহী শহরে এখন দৈনিক বিদ্যুতের সর্বোচ্চ চাহিদা ৯৬ মেগাওয়াট। কিন্তু জাতীয় গ্রিড থেকে পাওয়া যাচ্ছে ৬১ মেগাওয়াট। ঘাটতি পূরণের জন্য লোডশেডিং করতে হচ্ছে। গ্যাস সংকটের কারণে বিদ্যুৎ উৎপাদন ব্যহত হওয়ায় এ অবস্থা। পরিস্থিতি স্বাভাবিক হবে কবে সেটি তিনি জানেন না।

শেয়ার করুন