ছাত্র-জনতার গণঅভ্যুত্থানে ক্ষমতাচ্যুত হয়ে ভারতে থাকা সাবেক প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার বিরুদ্ধে বাংলাদেশে গণহত্যার অভিযোগে আন্তর্জাতিক অপরাধ ট্রাইব্যুনাল থেকে গ্রেপ্তারি পরোয়ানা এসেছে। তাকে দেশে ফিরিয়ে বিচারের মুখোমুখি করতে প্রয়োজনীয় সব পদক্ষেপ নেওয়ার ঘোষণাও দিয়েছে অন্তর্বর্তী সরকার। তবে আন্তর্জাতিক সম্পর্ক বিশ্লেষকরা মনে করে, পরোয়ানা জারি করে বা প্রয়োজনীয় পদক্ষেপ নিলেও হাসিনার ফেরা, না ফেরার বিষয়টি অনেকাংশেই নির্ভর করছে ভারত সরকারের সিদ্ধান্তের ওপর।
সম্প্রতি আন্তর্জাতিক অপরাধ ট্রাইব্যুনাল শেখ বিরুদ্ধে গ্রেপ্তারি পরোয়ানা জারি করেছেন। পররাষ্ট্র উপদেষ্টা মো. তৌহিদ হোসেন হাসিনাকে ভারত থেকে ফিরিয়ে আনার ঘোষণা দেন।
ওইদিনই ভারতের পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ের ব্রিফিংয়ে একজন সাংবাদিক বিষয়টি নিয়ে দেশটির অবস্থান জানতে চান। ভারতের পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ের মুখপাত্র রণধীর জয়সওয়াল বলেন, সাবেক প্রধানমন্ত্রীর (শেখ হাসিনা) ভারতে চলে আসার বিষয়ে আগেই জানানো হয়েছিল, নিরাপত্তার কারণে অল্প সময়ের নোটিশে তিনি ভারতে চলে এসেছিলেন। এখনো আছেন, থাকবেন।
বিশ্লেষকরা বলছেন, ভারতের পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ের মুখপাত্রের বক্তব্য থেকে এটা স্পষ্ট যে, হাসিনার ব্যাপারে ভারতের অবস্থানের তেমন পরিবর্তন হয়নি। তাই বাংলাদেশের অন্তর্বর্তী সরকার হাসিনাকে ফেরত চাইলেই ভারত তাকে ফিরিয়ে দেবে- তা নাও হতে পারে।
আন্তর্জাতিক সম্পর্ক বিশ্লেষক ও ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের সাবেক অধ্যাপক ড. ইমতিয়াজ আহমেদ গণমাধ্যমকে বলেন, চুক্তি অনুযায়ী আইনগতভাবে ভারতের কাছে বাংলাদেশ অনুরোধ করতেই পারে। কিন্তু এখানে ভারতেরও রাজনৈতিক বোঝাপড়ার অনেক বিষয় আছে। এখানে ভারত সরকার না চাইলে কিছুই হবে না। আমাদের সরকার চেষ্টা চালিয়ে যাবে। কিন্তু ভারত সরকার যদি না চায় তাহলে তাকে (হাসিনা) ফেরত আনা সম্ভব নয়। তারা তো স্পষ্ট করে বলেছে, সে এখানেই আছে, এখানেই থাকবে। তাকে ফেরত দেওয়া, না দেওয়ার বিষয়ে বল পুরোপুরি ভারতের কোর্টে।
তিনি আরও বলেন, এ ব্যাপারে নিশ্চয়ই শেখ হাসিনার নিজেরও একটা সিদ্ধান্ত আছে। সেটা তো এখনো কেউ জানে না। যেহেতু তাকে ভারত সরকার আশ্রয় দিয়েছে, সবকিছু আসলে ভারতের ওপরই নির্ভর করবে। বিষয়টা অনেকটা কানাডায় আশ্রয় নেওয়া বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমান হত্যায় ফাঁসির দণ্ডপ্রাপ্ত আসামি নূর চৌধুরীর মতো। কানাডা তাকে ফেরত দিতে চাচ্ছে না। এ ক্ষেত্রে কিছু করারও নেই। এখানেও বিষয়টা অনেকটা তেমন। যতক্ষণ ভারত না চাইবে, ততক্ষণ সম্ভব নয়। আমাদের সরকার তো চেষ্টা করবেই। চেষ্টা দেখাতেও হবে। সরকার যদি কিছু না করে, সেটাও একটা রাজনৈতিক বিষয় হয়ে যাবে, যে সরকার কিছুই করছে না।
কূটনীতি বিশ্লেষক ও সাবেক রাষ্ট্রদূত ড. এম হুমায়ুন কবির গণমাধ্যমকে বলেন, বন্দি বিনিময় চুক্তি অনুযায়ী আমরা তাকে ফেরত আনার অনুরোধ করতেই পারি। কিন্তু সেটা রাখা হবে কি হবে না সেটা ভারতীয় এবং তার নিজের (শেখ হাসিনার) সিদ্ধান্তের ওপর নির্ভর করছে। শেখ হাসিনা যদি মনে করেন তিনি দেশে এসে আইনি প্রক্রিয়া মোকাবিলা করবেন কিংবা যদি চান যে তিনি ভারতেই থাকবেন, তাহলে ভারত সরকারের সহায়তা চাইবেন। আইন অনুযায়ী আইনি প্রক্রিয়া চলবে। আমাদের দিক থেকে ভারতের কাছে যতটুকু আইনি সহায়তা পাওয়া দরকার, সে ব্যাপারে তাদের কাছে অনুরোধ করা হবে। তবে এখানে দুটি বিষয় আছে- শেখ হাসিনার নিজের মতামত এবং এ ব্যাপারে ভারত সরকারের অবস্থান এবং এই দুইটা বিষয় এখনো অনিশ্চিত। বাংলাদেশের পক্ষ থেকে ভারতের কাছে অনুরোধ করা হবে। কিন্তু এরপর কী হবে সেটা এ মুহূর্তে নিশ্চিত করে বলা যাচ্ছে না। তাই আমাদের অপেক্ষা করতে হবে।