বৈষম্যবিরোধী ছাত্র আন্দোলনে গত ৫ আগস্ট প্রধানমন্ত্রীর পদ থেকে পদত্যাগ করে ভারতে পালিয়ে যান শেখ হাসিনা। বর্তমানে সেখানেই অবস্থান করছেন তিনি। আওয়ামী সরকারের পতনের পর ৮ আগস্ট নোবেলজয়ী ড. মুহাম্মদ উইনূসের নেতৃত্বে অন্তর্বর্তীকালীন সরকার গঠন হয়।
জুলাই-আগস্টে গণহত্যার ঘটনায় রাজধানীর উত্তরা পূর্ব থানায় বেসরকারি টেলিভিশন চ্যানেল গান বাংলার প্রধান নির্বাহী কৌশিক হোসেনের বিরুদ্ধে একটি মামলা হয়। ইশতিয়াক মাহমুদ নামে একজন ব্যবসায়ী হত্যাচেষ্টার এ মামলাটি করেন।
মামলার এজাহারে বলা হয়, বৈষম্যবিরোধী আন্দোলনের বিপক্ষে থেকে গান বাজনার মাধ্যমে আওয়ামী লীগ, যুবলীগ, ছাত্রলীগসহ বিভিন্ন সন্ত্রাসী ক্যাডারদের উৎসাহ ও ছাত্র-জনতার আন্দোলনকে নস্যাৎ করার চেষ্টা করেন গান বাংলার প্রধান নির্বাহী তাপস।
গত ১৮ জুলাই বৈষম্যবিরোধী ছাত্র-জনতার আন্দোলন চলাকালে আসামিদের ছোড়া গুলিতে বাদীর পেটে গুলি লাগে। গুরুতর আহত হয়ে রাজধানীর এভারকেয়ার হাসপাতালে থেকে অপারেশনের মাধ্যমে তার পেটের গুলি বের করা হয়। এ ঘটনায় গত ২৯ সেপ্টেম্বর ইশতিয়াক মাহমুদ বাদী হয়ে উত্তরা পূর্ব থানায় হত্যাচেষ্টার অভিযোগে মামলা করেন। মামলায় সাবেক আইজিপি চৌধুরী আব্দুল্লাহ আল মামুনসহ ১২৬ জনকে আসামি করা হয়। এ মামলায় তাপস এজাহারভুক্ত ৯ নম্বর আসামি।
এরপর গত সোমবার (৩ নভেম্বর) উত্তরা থেকে তাপসকে গ্রেফতার করা হয়। ঢাকা মহানগর পুলিশের উত্তরা বিভাগের উপপুলিশ কমিশনার (ডিসি) রওনক জাহান তাপসকে গ্রেফতারের বিষয়টি নিশ্চিত করেন। এদিকে তাপসকে গ্রেফতারে শেখ হাসিনাকে দায়ী করেছেন তার মা মেহের নিগার চঞ্চল। শেখ হাসিনা আমাকে একা করে দিয়েছেন বলেও জানান তাপসের মা।
তিনি বলেন, ২০১২ সালে ঢাকা স্টেডিয়ামে একটি গানের অনুষ্ঠান থেকে তাপসকে তুলে নেওয়া হয়। তারপর থেকে এই ১২ বছরে পাঁচ মিনিট করে ১২ বারও তার দেখা পাইনি আমি। সেই তখন থেকে শেখ হাসিনা আমাকে একা করে দিয়েছেন। ওই সময় তাকে তুলে নেওয়ার এক বছর পর যেখানে পেয়েছি, তা আর বলতে চাই না বলেও জানান মেহের নিগার চঞ্চল।
তাপসকে গ্রেফতারের ব্যাপারে দেশবাসীর কাছে ক্ষমা চান তিনি। সেই সঙ্গে শেখ হাসিনা সরকারের অপরাজনীতি নিয়েও কথা বলেছেন মেহের নিগার। তিনি বলেন, অপরাজনীতির জন্য ১৯৭৪ সাল থেকে আওয়ামী লীগের রাজনীতির সঙ্গে নেই আমি। এ ছাড়া হত্যা মামলার ব্যাপারে তাপসের মা বলেন, এই সন্ত্রাসী কার্যক্রমের সঙ্গে তাপস জড়িত না। আর যতটুকু শেখ হাসিনার সঙ্গে জড়িত, আমি বলব— সে যদি বিপদগামী হয়েই থাকে তার জন্য শেখ হাসিনা দায়ী।
যদিও সুনির্দিষ্ট অভিযোগের ভিত্তিতে উত্তরাপূর্ব থানা পুলিশ তাকে গ্রেফতার করেছে। তার বিরুদ্ধে একাধিক মামলা রয়েছে। এসব মামলায় গ্রেফতারের পর তাকে আদালতে হাজির করে সাত দিনের রিমান্ডের আবেদন করে পুলিশ। কিন্তু শুনানির সময় তদন্ত কর্মকর্তা আদালতে উপস্থিত হতে না পারায় শুনানির তারিখ পেছানোর আবেদন করে পুলিশ। পরে তাপসের রিমান্ড ও জামিন শুনানির জন্য বুধবার (৬ নভেম্বর) ধার্য করেন আদালত।