নারায়ণগঞ্জের রূপগঞ্জে লেকপাড়ে কালো পলিথিনে মোড়ানো সাত খণ্ড লাশের পরিচয় পাওয়া গেছে। লাশটি ফতুল্লার চাঁদ ডাইংয়ের মালিক পশ্চিম সস্তাপুর এলাকার ব্যবসায়ী জসিম উদ্দিন মাসুমের। এ ঘটনায় রুমা আক্তার (৩৮) নামের এক নারীকে গ্রেপ্তার করেছে পুলিশ।
বৃহস্পতিবার (১৪ নভেম্বর) দুপুরে বিষয়টি নিশ্চিত করেন নারায়ণগঞ্জ ‘গ’ সার্কেলের সিনিয়র সহকারী পুলিশ সুপার মো. মেহেদী ইসলাম।
জসিম উদ্দিন মাসুম নারায়ণগঞ্জ জেলার ফতুল্লা থানার পশ্চিম সস্তাপুর এলাকার মৃত আলেক চাঁনের ছেলে। এ ঘটনায় বৃহস্পতিবার জসিম উদ্দিন মাসুমের আরও তিন টুকরো লাশ উদ্ধার করা হয়।
জসিম উদ্দিন মাসুমের বড় ছেলে ওবায়দুল ইসলাম শিবু বলেন, তারা রাজধানীর বসুন্ধরা আবাসিক এলাকায় সপরিবারে বসবাস করতেন। সেখান থেকে গত ১০ নভেম্বর বিকেলে তার পিতা জসিম উদ্দিন মাসুম বাসা থেকে বের হয়ে নিজের গাড়িতে তিনি গুলশান যান। এরপর তিনি তার ব্যক্তিগত গাড়ি চালককে ছেড়ে দেন। চালককে তার পিতা জানিয়েছিলেন অন্য গাড়িতে তিনি নারায়ণগঞ্জের কারখানায় যাবেন। এরপর থেকেই তিনি নিখোঁজ হন। তবে রাতে বাসায় না ফেরায় ও মোবাইল বন্ধ থাকায় গত ১১ নভেম্বর গুলশান থানায় ওবায়দুল ইসলাম শিবু জিডি করেন।
জিডির তদন্তকারী কর্মকর্তা গুলশান থানার এসআই মোঃ রাশেদ বলেন, শিল্পপতি জসিম উদ্দিনের সর্বশেষ লোকেশন কাফরুলে দেখা গিয়েছিল। এরপর আর তার কোনো খোঁজখবর পাওয়া যাচ্ছিল না।
নিহতের বড় ছেলে আরও বলেন, দাড়ি, নখ ও বাম পায়ের কিছু চিহ্ন দেখে বাবার মরদেহ সনাক্ত করি। সেরা করদাতা হিসেবে আমার বাবা একাধিকবার কর-বাহাদুর পুরস্কার পেয়েছেন। তিনি একজন শিল্পপতি। চাঁদ ডায়িং ফ্যাক্টরিসহ আমাদের অনেক ব্যবসা প্রতিষ্ঠান রয়েছে। বাবার সঙ্গে কারও শত্রুতা রয়েছে বলে আমাদের জানা নেই। তবে পরিকল্পিতভাবে আমার বাবাকে হত্যা করা হয়েছে।
পুলিশ জানায়, চাঁদ ডাইংয়ের মালিক শিল্পপতি জসিম উদ্দিন মাসুমের লাশের সাত টুকরো উদ্ধারের পর বৃহস্পতিবার ডান পায়ের হাঁটুর নিচের অংশ, ডান পায়ের ঊরু ও বুকের পাজরের অংশ উদ্ধার করা হয়েছে। এছাড়া যকৃত, ফুসফুস, নাড়িভুঁড়ি উদ্ধার করা হয়েছে। এ ঘটনায় রুমা আক্তার (৩৮) নামের এক মহিলাকে পুলিশ আটক করেছে।
শিল্পপতি জসিম উদ্দিন মাসুমের চোখের নিচে ধারালো অস্ত্রের পাঁচটি আঘাতের চিহ্ন রয়েছে। এছাড়া মাথার তালুতে আঘাত রয়েছে। তার একাধিক দাঁত ভাঙ্গা ছিল। ধারণা করা হচ্ছে তাকে ধারালো অস্ত্রে অন্যত্র হত্যা শেষে টুকরো টুকরো অংশ পলিথিন ব্যাগে ভর্তি করে এখানে ফেলে রাখে। এ ব্যাপারে এসআই জাহাঙ্গীর আলম বাদী হয়ে রূপগঞ্জ থানায় হত্যা মামলা দায়ের করেছেন।
রূপগঞ্জ থানার ওসি লিয়াকত আলী বলেন, এটি একটি পরিকল্পিত হত্যাকাণ্ড। একাধিক ব্যক্তি এই হত্যাকাণ্ডে জড়িত থাকতে পারে। অন্যস্থানে হত্যার পর তার মরদেহ রূপগঞ্জে ফেলা হয়েছে। এ ঘটনায় রুমা আক্তার নামের এক নারীকে গ্রেপ্তার করা হয়েছে। মামলার তদন্তের স্বার্থে এখনই বিস্তারিত বলা যাচ্ছে না। তবে হত্যায় ব্যবহৃত ধারালো অস্ত্রসহ প্রয়োজনীয় সরঞ্জামাদি উদ্ধারে পুলিশ তৎপর রয়েছে।
উল্লেখ্য, গত বুধবার (১৩ নভেম্বর) সকালে কাঞ্চন-কুড়িল সড়কের পাশে লেকের পানিতে হাত ধোয়ার সময় দুর্গন্ধ পান স্থানীয় এক রিকশাচালক। পরে তিনি স্থানীয় আরও কয়েকজনকে ডাক দিলে পলিথিনে মোড়ানো ব্যাগগুলো দেখতে পান তারা। খবর পেয়ে পুলিশ এসে কালো রঙের তিনটি পৃথক পলিথিন ব্যাগে লাশের খণ্ডাংশগুলো উদ্ধার করে নারায়ণগঞ্জ জেনারেল হাসপাতালে পাঠায়।