বাংলাদেশের জন্য উৎপাদিত বিদ্যুৎ নিজ দেশে বিক্রিতে বিশেষ ছাড় চেয়েছে ভারতীয় শিল্পগোষ্ঠী আদানি। ঝাড়খণ্ডের গোড্ডা পাওয়ার প্ল্যান্ট থেকে উৎপাদিত বিদ্যুৎ বিক্রিতে আমদানি শুল্কমুক্তির সুবিধা অব্যাহত রাখার দাবি জানিয়েছে প্রতিষ্ঠানটি।
ভারতীয় সংবাদমাধ্যম দ্য হিন্দু বিজনেস লাইন-এর বরাতে জানা যায়, বাংলাদেশ ঠিকমতো বকেয়া পরিশোধ না করায় আদানি পাওয়ার ঝামেলায় পড়েছে। গত সেপ্টেম্বরে বকেয়ার পরিমাণ দাঁড়ায় ৭৯০ মিলিয়ন ডলার। তবে বাংলাদেশ ইতোমধ্যে কিছু বকেয়া পরিশোধ করেছে এবং প্রক্রিয়া চলমান রয়েছে।
আদানির দাবি, আমদানি শুল্কমুক্ত সুবিধা না পেলে ভারতের অভ্যন্তরীণ বাজারে তাদের বিদ্যুতের দাম বেড়ে যাবে, যা গ্রাহকদের কাছে বিক্রি করা সম্ভব হবে না। এ কারণে ভারতের বাণিজ্য মন্ত্রণালয়ের কাছে বিশেষ ছাড় চেয়েছে তারা।
২০২৩ সালে ভারতের বিদ্যুৎ মন্ত্রণালয় আদানিকে অভ্যন্তরীণ বাজারে বিদ্যুৎ বিক্রির অনুমতি দিলেও গোড্ডা পাওয়ার প্ল্যান্ট বিশেষ অর্থনৈতিক অঞ্চলে অবস্থিত হওয়ায় এই বিক্রিতে আইনি বাধা সৃষ্টি হচ্ছে। যদি বিশেষ ছাড় না দেওয়া হয়, তাহলে বিদ্যুৎ আমদানি পণ্য হিসেবে গণ্য হবে এবং কর আরোপ করা হবে।
২০১৭ সালের ৫ নভেম্বর আদানি পাওয়ার ও বাংলাদেশ বিদ্যুৎ উন্নয়ন বোর্ডের (বিপিডিবি) মধ্যে বিদ্যুৎ ক্রয় চুক্তি (পিপিএ) স্বাক্ষরিত হয়। চুক্তি অনুযায়ী, বাংলাদেশ ২৫ বছরের জন্য গোড্ডায় উৎপাদিত বিদ্যুতের পুরোটাই কিনতে বাধ্য।
অস্ট্রেলিয়া-ভিত্তিক ওয়াচডগ ‘আদানি ওয়াচ’ ২০২৩ সালের শুরুতে চুক্তির বিস্তারিত প্রকাশ করে। এতে উল্লেখ করা হয়, আদানির কাছ থেকে বিদ্যুৎ কেনার জন্য বাংলাদেশ বাজারমূল্যের চেয়ে অন্তত পাঁচগুণ বেশি দামে বিদ্যুৎ কিনছে।
একটি বেসরকারি গবেষণা প্রতিবেদনে বলা হয়েছে, ২৫ বছরে আদানির ক্যাপাসিটি চার্জ বাবদ বাংলাদেশকে ১১ বিলিয়ন ডলার পরিশোধ করতে হবে। এই অর্থ দিয়ে তিনটি পদ্মা সেতু বা নয়টি কর্ণফুলী টানেল নির্মাণ সম্ভব।
চুক্তির শর্ত অনুযায়ী, বাংলাদেশ সরকার আদানিকে ২৫ বছরের জন্য সার্বভৌম গ্যারান্টি দিয়েছে। বিশেষজ্ঞরা এই দীর্ঘমেয়াদি শর্তের কার্যকারিতা ও আর্থিক প্রভাব নিয়ে প্রশ্ন তুলেছেন।