জনপ্রশাসন সংস্কার কমিশনের খসড়া সুপারিশের বিরোধিতা করে আন্দোলন করছেন বিভিন্ন ক্যাডারের কর্মকর্তারা। আন্তঃক্যাডার দ্বন্দ্ব চরম আকার ধারণ করেছে।
এ পরিপ্রেক্ষিতে সরকারি আচরণ বিধিমালা লঙ্ঘন করলে কর্মকর্তা-কর্মচারীদের বিরুদ্ধে কঠোর ব্যবস্থা নেওয়া হবে বলে হুঁশিয়ারি দিয়েছে সরকার।
মঙ্গলবার এ বিষয়ে জনপ্রশাসন মন্ত্রণালয় থেকে বিজ্ঞপ্তি জারি করা হয়েছে।
এতে বলা হয়, জনসেবা প্রদান এবং রাষ্ট্রের প্রশাসনিক কার্যক্রম সুষ্ঠুভাবে পরিচালনার জন্য সরকারি কর্মচারীরা গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা পালন করে থাকে। সরকারি কর্মচারীদের সুশৃঙ্খল, দায়িত্বশীল ও পেশাদার আচরণের ওপর জনপ্রশাসনের সফলতা নির্ভর করে।
সম্প্রতি বিভিন্ন পদমর্যাদার কিছু সরকারি কর্মচারীর বিভিন্ন দাবি-দাওয়া নিয়ে সমাবেশ, অবস্থান ধর্মঘট, মানববন্ধন, কলম বিরতিসহ বিবিধ কর্মসূচি পালনের কারণে সরকারি কর্মচারীদের ভাবমূর্তি ক্ষুণ্ন হচ্ছে।
এতে আরও বলা হয়, ইদানিং লক্ষ্য করা যাচ্ছে যে, সরকারের কোনো কোনো সিদ্ধান্ত, আদেশ বা সংস্কার কার্যক্রমের বাস্তবায়ন সম্পন্ন হওয়ার আগেই বিবেচ্য বিষয়ে বিভিন্ন সামাজিক যোগাযোগমাধ্যমে বিরূপ মন্তব্যসহ বিবৃতি প্রকাশ করা হচ্ছে, যা ‘সরকারি কর্মচারী (আচরণ) বিধিমালা, ১৯৭৯’ এর পরিপন্থি। সরকারি কর্মচারী (আচরণ) বিধিমালার ৩০ নম্বর বিধিতে উল্লেখ করা হয়েছে, 'কোনো সরকারি কর্মচারী-
(এ) সরকারের অথবা কর্তৃপক্ষের কোনো সিদ্ধান্ত বা আদেশ পালনে জনসম্মুখে আপত্তি উত্থাপন করিতে বা যে কোনো প্রকারে বাধা প্রদান করিতে পারিবেন না, অথবা অন্য কোনো ব্যক্তিকে তাহা করার জন্য উত্তেজিত বা প্ররোচিত করিতে পারিবেন না।
(বি) সরকারের বা কর্তৃপক্ষের কোনো সিদ্ধান্ত বা আদেশ সম্পর্কে জনসম্মুখে কোনো অসন্তুষ্টি বা বিরক্তি প্রকাশ করিতে অথবা অন্যকে তাহা করার জন্য প্ররোচিত করিতে অথবা কোনো আন্দোলনে অংশগ্রহণ করিতে বা অন্যকে অংশগ্রহণ করার জন্য প্ররোচিত করিতে পারিবেন না।
(সি) সরকার বা কর্তৃপক্ষের কোনো সিদ্ধান্ত বা আদেশ পরিবর্তন, বদলানো, সংশোধন বা বাতিলের জন্য অনুচিত প্রভাব বা চাপ প্রয়োগ করিতে পারিবেন না।
(ডি) সরকারি কর্মচারীদের মধ্যে বা কোনো শ্রেণির সরকারি কর্মচারীদের মধ্যে যে কোনোভাবে অসন্তুষ্টি, ভুল বুঝাবুঝি বা বিদ্বেষের সৃষ্টি করিতে অথবা অন্যকে প্ররোচিত করিতে বা সৃষ্টির উদ্যোগ গ্রহণ করিতে পারিবেন না।
‘সরকারি কর্মচারী (আচরণ) বিধিমালা, ১৯৭৯’ এর যে কোনো বিধান লঙ্ঘন ‘সরকারি কর্মচারী (শৃঙ্খলা ও আপিল) বিধিমালা, ২০১৮’ এর আওতায় অসদাচরণ হিসেবে গণ্য হবে। কোনো সরকারি কর্মচারী এ বিধিমালার কোনো বিধান লঙ্ঘন করলে তিনি অসদাচরণের দায়ে শৃঙ্খলামূলক ব্যবস্থা গ্রহণের আওতায় আসবেন। সরকারি কর্মচারীদের শৃঙ্খলা বহির্ভূত আচরণের বিষয়ে সরকারের অবস্থান অত্যন্ত কঠোর বলে বিজ্ঞপ্তিতে উল্লেখ করা হয়েছে।
উপসচিব পুলের কোটা নিয়ে প্রশাসন ক্যাডারের কর্মকর্তারা গত ২২ ডিসেম্বর সচিবালয়ে নজিরবিহীন অবস্থান কর্মসূচি এবং ২৫ ডিসেম্বর বিয়াম মিলনায়তনে প্রতিবাদ সমাবেশ করেছেন।
উপসচিব পুলের কোটা বাতিল, কৃত্য পেশাভিত্তিক মন্ত্রণালয় প্রতিষ্ঠা এবং শিক্ষা ও স্বাস্থ্য ক্যাডারকে সিভিল সার্ভিসের বাইরে নিতে জনপ্রশাসন সংস্কার কমিশনের প্রস্তাবের প্রতিবাদে গত ২৪ ডিসেম্বর কলম বিরতি এবং ২৬ ডিসেম্বর মানববন্ধন করেছেন ২৫ ক্যাডারের কর্মকর্তারা। আগামী ৩ জানুয়ারি ঢাকায় সমাবেশ করে তাদের কর্মসূচি ঘোষণা করার কথা রয়েছে।