০৬ জানুয়ারী ২০২৫, সোমবার, ০১:৪৬:০৩ অপরাহ্ন
চাল, তেলের দাম আরও বেড়েছে
  • আপডেট করা হয়েছে : ০৪-০১-২০২৫
চাল, তেলের দাম আরও বেড়েছে

দেশে এখন আমনের ভরা মৌসুম হলেও চালের দাম প্রতিনিয়ত বাড়ছে। গত প্রায় এক মাসের বেশি সময় ধরে নিত্যপ্রয়োজনীয় এই পণ্যটির বাজার চড়া। দাম বাড়ার তালিকায় আরো রয়েছে বোতলজাত সয়াবিন তেল, ব্রয়লার মুরগি, আমদানিকৃত পেঁয়াজও। এদিকে বিভিন্ন নিত্যপণ্যের বাজারদরের এ পরিস্থিতিতে কম ভ্যাটের অন্তত ৪৩ ধরনের পণ্য ও সেবার ওপর ভ্যাট বাড়িয়ে ১৫ শতাংশ আরোপের সিন্ধান্ত নিতে যাচ্ছে অন্তর্বর্তী সরকার। উচ্চ মূল্যস্ফীতির এ সময়ে মূল্য সংযোজন কর বা ভ্যাট বাড়ানোর ফলে সাধারণ ভোক্তার ওপর নতুন করে ব্যয়ের চাপ তৈরি হতে পারে এমন আশঙ্কা করা হচ্ছে।


সংশ্লিষ্ট সূত্র জানিয়েছে, চাল, ডাল, তেলসহ সব নিত্যপ্রয়োজনীয় পণ্য আমদানিতে ডিউটি (শুল্ক) জিরো করে দেওয়া হয়েছে। এছাড়া, চাহিদা অনুযায়ী এসব পণ্য ঠিকমতো আমদানি হচ্ছে কি না, তা মনিটর করা হচ্ছে। চালের দাম বৃদ্ধি প্রসঙ্গে ব্যবসায়ীরা বলেছেন, মিল পর্যায়ে চালের দাম বেড়েছে। যার প্রভাব পড়েছে পাইকারী ও খুচরা বাজারে। তবে মিলাররা দাবি করেছেন, ধানের দাম বাড়ায় চালের দাম বেড়েছে। গতকাল শুক্রবার রাজধানীর বিভিন্ন খুচরাবাজারে খোঁজ নিয়ে দেখা যায়, সপ্তাহের ব্যবধানে মানভেদে প্রতি কেজি চালে দুই থেকে চার টাকা পর্যন্ত বেড়ে মাঝারি মানের চাল পাইজাম/লতা ৫৮ থেকে ৬৫ টাকা ও সরু জাতের চাল নাজিরশাইল/মিনিকেট চার টাকা বেড়ে তা ৭০ থেকে ৮৪ টাকায় বিক্রি হচ্ছে। সরকারের বিপণন সংস্থা ট্রেডিং করপোরেশন অব বাংলাদেশও (টিসিবি) তাদের বাজারদরের প্রতিবেদনে চালের দাম বাড়ার বিষয়টি তুলে ধরেছে।


এ প্রসঙ্গে দেশের উত্তরাঞ্চলের চালের মোকাম সিরাজগঞ্জের রায়গঞ্জের ব্যবসায়ী মেসার্স অন্তিম সেমি অটো রাইস মিলের স্বত্বাধিকারী গোলাম মোস্তফা  মোকামগুলোতে এবার ধানের দাম গত বছরের তুলনায় প্রতি মণে ২০০ থেকে ২৫০ টাকা বেশি। যার প্রভাব পড়েছে চালের দামের ওপর। 


তিনি বলেন, গত বছর মোটা ধানের মণ ছিল ১ হাজার ১০০ টাকা। এবার তা ১ হাজার ৩০০ থেকে ১ হাজার ৩৫০ টাকা। একইভাবে সরু ধানের মণ ২০০ টাকা বেড়ে এবার ১ হাজার ৫০০ থেকে ১ হাজার ৯০০ টাকায় বিক্রি হচ্ছে। এই মোকামের আরেক ব্যবসায়ী থ্রি স্টার সেমি অটো রাইস মিলের স্বত্বাধিকারী জহুরুল ইসলাম বলেন, গত বছর বন্যার কারণে হাওরাঞ্চলের ধানের সংগ্রহ ব্যাহত হয়েছে। যা ধানের মোট উত্পাদনে নেতিবাচক প্রভাব ফেলেছে। চালের দাম বৃদ্ধির জন্য মোকামে চাহিদা অনুযায়ী ধানের সংকটের কথা বলেছেন বগুড়া শেরপুরের আজিম বয়লারের স্বত্বাধিকারী হানিফ উদ্দিন। 


 এবার আলুর দাম পাওয়ায় মজুতদাররা আলু বিক্রি করে প্রচুর পরিমাণে ধান মজুত করেছেন। ফলে মোকামে চাহিদা অনুযায়ী ধানের সরবরাহ নেই। এর প্রভাবে গত এক মাসের ব্যবধানে শেরপুর মোকামে প্রতি কেজি চালের দাম মানভেদে ৫ থেকে ১০ টাকা পর্যন্ত বেড়েছে বলে তিনি জানান। এদিকে গত এক সপ্তাহের ব্যবধানে খুচরাবাজারে এক লিটারের বোতলজাত সয়াবিন তেলের দামও বেড়েছে। সরকারের বিপণন সংস্থা ট্রেডিং করপোরেশন অব বাংলাদেশের (টিসিবি) তথ্য বলছে, সপ্তাহের ব্যবধানে প্রতি লিটার বোতলজাত সয়াবিন তেলে ৫ টাকা বেড়ে তা ১৭৩ থেকে ১৭৫ টাকায় বিক্রি হচ্ছে। 


এছাড়া, কেজিতে ১০ টাকা বেড়ে ব্রয়লার মুরগি ২০০ থেকে ২১০ টাকায় বিক্রি হচ্ছে। সোনালি মুরগির কেজিতে ২০ থেকে ৩০ টাকা বেড়ে তা ৩৩০ থেকে ৩৪০ টাকায় বিক্রি হচ্ছে। নিত্যপণ্যের এই চড়া দামে গত বছরের আট মাস খাদ্য মূল্যস্ফীতি ছিল দুই অঙ্কের ঘরে। চলতি বছরের শুরুতে শুধু শাকসবজি ছাড়া অন্য নিত্যপণ্যের দামে খুব বেশি সুখবর নেই। এ পরিস্থিতিতে কম ভ্যাটের অন্তত ৪৩ ধরনের পণ্য ও সেবার ওপর ভ্যাট বাড়িয়ে ১৫ শতাংশ আরোপের সিদ্ধান্ত নিতে যাচ্ছে অন্তর্বর্তী সরকার। যা ভোক্তার ওপর নতুন করে ব্যয়ের চাপ তৈরি হতে পারে এমন আশঙ্কা করা হচ্ছে। 


এ প্রসঙ্গে অর্থ উপদেষ্টা ড. সালেহউদ্দিন আহমেদ গত বৃহস্পতিবার সরকারি ক্রয়সংক্রান্ত উপদেষ্টা পরিষদ কমিটির বৈঠক শেষে সাংবাদিকদের জানান, এসব পণ্য ও সেবার ভ্যাট (মূল্য সংযোজন কর) বাড়ানো হলেও সেটি সামগ্রিক মূল্যস্ফীতিকে তেমন প্রভাবিত করবে না। তিনি বলেন, আমরা অত্যাবশ্যকীয় পণ্যের ডিউটি (শুল্ক) জিরো করে দিয়েছি। মূল্যস্ফীতি যেগুলো বেশি প্রভাব ফেলে, যেমন চাল, ডালসহ নিত্যপ্রয়োজনীয় পণ্য। আমরা যেসব পণ্যের দাম বাড়াচ্ছি, এগুলো আমাদের মূল্যস্ফীতি বাড়ানোর ক্ষেত্রে খুবই কম গুরুত্বপূর্ণ।


চড়া দামের সবজি এখন হাতের নাগালে


এদিকে চাল, তেলসহ বিভিন্ন পণ্যের দাম বাড়তি থাকলেও গত এক সপ্তাহের ব্যবধানে সবজির দাম বেশ কমেছে। মাসখানেক আগেও যে ফুলকপি ৫০ থেকে ৬০ টাকার নিচে পাওয়া যায়নি। তা এখন ১৫ থেকে ২০ টাকায় বিক্রি হচ্ছে। শুধু ফুলকপি নয়, বাঁধাকপি, শিম, মুলা, শালগম, লাউসহ অনেক সবজির দামই এখন ক্রেতাদের হাতের নাগালে। গতকাল বাজারে বিভিন্ন ধরনের সবজির মধ্যে বাজারভেদে প্রতিটি ফুলকপি ও বাঁধাকপি ১৫ থেকে ২৫ টাকা, লাউ ৪০ টাকা, প্রতি কেজি শিম ৩০ থেকে ৫০ টাকা, বেগুন ৩০ থেকে ৫০ টাকা, শালগম ২০ থেকে ২৫ টাকা, টম্যাটো ৬০ থেকে ৭০ টাকা, মুলা ২০ টাকা, আলু ৪০ থেকে ৫০ টাকা, কাঁচামরিচ ৬০ থেকে ৭০ টাকা, পেঁপে ২৫ থেকে ৩০ টাকা, করল্লা ৬০ টাকা, গাজর ৬০ টাকা কেজি দরে বিক্রি হচ্ছে। যা মাসখানেকের ব্যবধানে সবজিভেদে কেজিতে ২০ থেকে ৪০ টাকা পর্যন্ত কমেছে। তবে সপ্তাহের ব্যবধানে বাজারে আমদানিকৃত পেঁয়াজের দাম কেজিতে ১০ টাকা বেড়ে গতকাল তা ৬০ থেকে ৮০ টাকায় বিক্রি হয়। তবে নতুন দেশি মুড়িকাটা পেঁয়াজ আগের দর ৫০ থেকে ৬০ টাকার মধ্যেই বিক্রি হতে দেখা গেছে।


কাওরান বাজারের পেঁয়াজ বিক্রেতারা জানিয়েছেন, বর্তমানে বাজারে যে দামে দেশি নতুন পেঁয়াজ বিক্রি হচ্ছে, তার তুলনায় আমদানি করা পেঁয়াজের দাম বেশি পড়ে। এ কারণে ভারত থেকে পেঁয়াজ আমদানি কমেছে। ফলে আমদানিকৃত পেঁয়াজের দামটা বাড়তি।


শেয়ার করুন