বৈষম্যবিরোধী ছাত্র আন্দোলন চলাকালে গাজীপুরের কোনাবাড়ীতে গুলি করে কলেজছাত্র মো. হৃদয়কে (২০) হত্যার মামলায় পুলিশ কনস্টেবল মো. আকরাম হোসেন গ্রেপ্তার হয়েছেন। শুক্রবার (৬ সেপ্টেম্বর) কিশোরগঞ্জের পারাইল এলাকায় বিশেষ অভিযান চালিয়ে থেকে তাকে গ্রেপ্তার করা হয়। মো. আকরাম হোসেন গাজীপুর শিল্প পুলিশে কর্মরত ছিলেন।
কোনাবাড়ী থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা শাহ আলম জানান, কনস্টেবল আকরামকে আজ (শনিবার, ৭ সেপ্টেম্বর) বিকেলে ১০ দিনের রিমান্ড চেয়ে আবেদন করে আদালতের মাধ্যমে কারাগারে পাঠানো হয়েছে। এই ঘটনায় সোমবার রিমান্ডের শুনানি হবে।
গত কয়েকদিন আগে তাকে জেলার অবকাশকালিন জজ শামীমা আফরোজ জামিন দেন। প্রকাশ্যে গুলি করে হত্যাকাণ্ডে জড়িত আকরাম জামিন পাওয়ায় বিতর্ক শুরু হয়। রোববার (৫ জানুয়ারি) ছাত্র-জনতা জামিনের বিরোধিতা করে গাজীপুরে জেলা প্রশাসক কার্যালয়ের সামনে বিক্ষোভ প্রদর্শন করে। তারা বিচারকের অপসারণও দাবি করে।
প্রসঙ্গত, গত ৫ আগস্টের মর্মান্তিক ও হৃদয়বিদারক একটি ভিডিওতে দেখা যায়, কলেজপড়ুয়া একটি ছেলেকে ধরে আছে কয়েকজন পুলিশ সদস্য। চড়-থাপ্পড়, কিল- ঘুষি মারছে। কেউ কেউ আবার কলার ধরে লাঠি দিয়ে পেটাচ্ছে। একটু দূর থেকেই দৌড়ে এলো এক পুলিশ সদস্য। কাছে এসেই কলেজ শিক্ষার্থী হৃদয়ের পিঠে বন্দুক ঠেকিয়ে ট্রিগার টেনে দিলো। গুলির বিকট শব্দ। মাত্র ৩ সেকেন্ডেই মাটিতে লুটিয়ে পড়েন হৃদয়। ছটফট করে হাত-পা নাড়তে থাকেন। দাঁড়াতে চেষ্টা করেন। তবে পারেননি। একটু পরেই নিথর হয়ে যায় মাটিতে পড়ে থাকা হৃদয়ের দেহ। স্রোতের বেগে রক্ত বের হতে থাকে। অল্প সময়ে রাস্তা লাল হয়ে যায়। পরনের কাপড় ভিজে যায়। গুলি করেই পুলিশ সদস্যরা দৌড়ে সরে যায়। কিছুক্ষণ পর আবার তারা হৃদয়ের কাছে ফিরে আসে। এসে নিথর দেহ পা দিয়ে ঠেলে দেখতে থাকে মৃত্যু হয়েছে কি না। পরে ৪ জন পুলিশ সদস্য মিলে হৃদয়ের গুলিবিদ্ধ মরদেহ হাত-পা ধরে টেনে-হিঁচড়ে দূরে কোথায় নিয়ে যান। কোথায় নিয়ে যাওয়া হলো হৃদয়ের মৃতদেহ? কেউ জানে না এখনো।
নিহত হৃদয়ের লাশ তার স্বজনদের ফেরত দেয়নি পুলিশ। লাশ কোথায় রাখা হয়েছে। দাফন করা হয়েছে নাকি ফেলে দেয়া হয়েছে, তা এখনো জানতে পারেনি হৃদয়ের পরিবার। হৃদয়ের নিহতের ঘটনার একটি ভিডিও গত ৩০ আগস্ট ভাইরাল হয়। এতে দেশজুড়ে আলোচনা-সমালোচনা হয়।
গত ৬ সেপ্টেম্বর আকরামকে তার গ্রামের বাড়ি থেকে গ্রেপ্তার করে এই মামলার এজহারনামীয় আসামি দেখিয়ে আদালতের মাধ্যমে কারাগারে পাঠানো হয়। গ্রেপ্তারের পর মামলার অধিকতর তদন্তের জন্য আসামি আকরামের ১০ দিনের রিমান্ড চায় পুলিশ। তবে আদালত একদিনের রিমান্ড মঞ্জুর করেন। এরপরে অনেক চাঞ্চল্যকর ঘটনা ঘটে যায়। যা আর প্রকাশ্যে আসেনি।