০৯ জানুয়ারী ২০২৫, বৃহস্পতিবার, ০৮:৫৮:৫৮ অপরাহ্ন
প্লাস্টিক বোতলের একাধিক ব্যবহার গ্রামেই বেশি
  • আপডেট করা হয়েছে : ০৮-০১-২০২৫
প্লাস্টিক বোতলের একাধিক ব্যবহার গ্রামেই বেশি

দোকান থেকে পানি, জুস কিংবা অন্য কোনো পণ্যসামগ্রী কিনে ব্যবহার করার পরে, তা ফেলে দেওয়ার কথা থাকলেও আমরা কেউই তা ফেলি না। সেই বোতল ব্যবহার করা হয় একাধিকবার। এমনও দেখা গেছে, একটি কোমল পানীয়র বোতল দিনের পর দিন অন্য দৈনন্দিন কাজে ব্যবহার করা হচ্ছে। এই বোতলগুলো একবার ব্যবহারযোগ্য—এটা প্রায় সবাই জেনেও ঐ বোতলগুলো আমরা ফেলে দিই না। ফলে স্বাস্থ্যঝুঁকি বাড়ছে; বাড়ছে পরিবেশের জন্য দীর্ঘমেয়াদি ঝুঁকি। সম্প্রতি এক গবেষণায় দেখা গেছে—একবার ব্যবহার্য প্লাস্টিকের বোতলের ব্যবহার শহরের তুলনায় গ্রামেই বাড়ছে।


এনভায়রনমেন্ট অ্যান্ড সোশ্যাল ডেভেলপমেন্ট অর্গানাইজেশনের (এসডো) ‘একবার ব্যবহারযোগ্য প্লাস্টিক বোতলের পরিবেশগত প্রভাব : দূষণ ও স্বাস্থ্যঝুঁকি’ শীর্ষক প্রকাশিত গবেষণায় এমন তথ্য উঠে এসেছে। দেখা গেছে, গ্রামে পানির নানা উৎস থাকলেও প্লাস্টিকের বোতলের ব্যবহার বাড়ছে। শহরে পানির বোতল এবং গ্রামে কোমল পানীয়ের বোতল বেশি ব্যবহৃত হচ্ছে।


শহর ও গ্রামে প্লাস্টিকের বোতল ব্যবহারের চিত্র তুলে ধরে গবেষণা প্রতিবেদনে বলা হয়, দেশের প্রায় ৮৩ দশমিক ৬ শতাংশ মানুষ প্রতিনিয়ত একবার ব্যবহারযোগ্য প্লাস্টিক বোতল ব্যবহার করেন। প্রায় ৫১ শতাংশ শহরের ভোক্তা এবং ৪২ শতাংশ গ্রামীণ ভোক্তা প্লাস্টিক বোতল মাত্র একবার ব্যবহারের পর ফেলে দেন। অধিকাংশ ভোক্তা বোতল একাধিকবার ব্যবহার করেন। শহরে ৪৭ শতাংশ সপ্তাহে, ১৮ শতাংশ দৈনিক এবং গ্রামে ৩৯ দশমিক ৩ শতাংশ মানুষ সপ্তাহে প্লাস্টিক বোতল কেনেন। এর মধ্যে ২৫০ মিলির বোতল বেশি ব্যবহার হয়, যা শহরে ৩৪ শতাংশ এবং গ্রামে ৫৬ দশমিক ৭ শতাংশ। শহরাঞ্চলে ২৫ শতাংশ বিক্রেতা প্রতিদিন ২১ থেকে ৩০টি একবার ব্যবহারযোগ্য প্লাস্টিক বোতল বিক্রি করেন। আর গ্রামে একেক জন খুচরা বিক্রেতা বিক্রি করেন ১০ থেকে ২০টি বোতল।


এসডোর চেয়ারপারসন সৈয়দ মার্গুব মোর্শেদ বলেছেন, প্লাস্টিক বর্জ্য কমানো, পুনর্ব্যবহারযোগ্য ব্যবস্থা উন্নত করা এবং প্রতিবেশ রক্ষায় সম্মিলিত পদক্ষেপ নেওয়া জরুরি। প্লাস্টিক বোতলের স্বাস্থ্য ও পরিবেশগত ক্ষতি তুলে ধরে গবেষণায় বলা হয়, একবার ব্যবহারযোগ্য প্লাস্টিক বোতল ৪৫০ বছর পর্যন্ত পরিবেশে টিকে থাকে, যা পরবর্তীকালে পরিবেশ ও খাদ্যচক্রে প্রবেশ করে মাইক্রোপ্লাস্টিক এবং বিষাক্ত রাসায়নিক ছড়ায়।


জাহাঙ্গীরনগর বিশ্ববিদ্যালয়ের রসায়ন বিভাগের সাবেক চেয়ারম্যান এবং এসডোর সিনিয়র টেকনিক্যাল অ্যাডভাইজার অধ্যাপক ড. মো. আবুল হাশেম বলেন, একবার ব্যবহারযোগ্য প্লাস্টিক বোতলের পরিবেশগত এবং স্বাস্থ্যঝুঁকি উপেক্ষা করা যায় না। মাইক্রোপ্লাস্টিকের মতো রাসায়নিক আমাদের খাদ্যচক্রে প্রবেশ করছে, যা মানব স্বাস্থ্য এবং জীববৈচিত্র্যের জন্য ঝুঁকি সৃষ্টি করছে।


এসডোর মহাসচিব ড. শাহরিয়ার হোসেন বলেন, বাংলাদেশের বর্জ্য ব্যবস্থাপনা বিপুল পরিমাণ প্লাস্টিক বর্জ্য সামলাতে হিমশিম খাচ্ছে। এ সংকট মোকাবিলায় নীতিনির্ধারক, ব্যবসায়ী এবং সাধারণ জনগণের মধ্যে সহযোগিতা প্রয়োজন, যাতে টেকসই বিকল্প এবং দায়িত্বশীল ভোক্তা আচরণকে উত্সাহিত করা যায়। এসডোর নির্বাহী পরিচালক সিদ্দিকা সুলতানা বলেন, একবার ব্যবহারযোগ্য প্লাস্টিক বোতলের সংকট মোকাবিলায় সচেতনতা বৃদ্ধি অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ। এই প্রতিবেদনের মাধ্যমে আমরা প্রতিটি স্তরে পদক্ষেপ গ্রহণে উৎসাহিত করতে চাই, যাতে পরিবেশবান্ধব সমাধান গ্রহণ, বর্জ্য সংগ্রহকারীদের সহায়তা এবং পরিবেশ ও স্বাস্থ্য রক্ষায় কঠোর নীতি প্রয়োগ করা যায়।


শেয়ার করুন