১১ জানুয়ারী ২০২৫, শনিবার, ০২:৪৬:৩৭ অপরাহ্ন
আমদানি শুল্ক পুরোপুরি তুলে নেওয়ার পরও চালের দাম ঊর্ধ্বমুখী
  • আপডেট করা হয়েছে : ১১-০১-২০২৫
আমদানি শুল্ক পুরোপুরি তুলে নেওয়ার পরও চালের দাম ঊর্ধ্বমুখী

চালের বাজারে থামছেই না চালবাজি। ঊর্ধ্বমুখী প্রবণতার মধ্যেই, সপ্তাহ ব্যবধানে কেজিতে বেড়েছে আরও দুই থেকে চার টাকা পর্যন্ত। এ অবস্থায় বিপাকে পড়েছেন ক্রেতারা। অব্যাহত দামবৃদ্ধির কারণ হিসেবে সিন্ডিকেটের দৌরাত্ম্যকে দায়ী করছেন খুচরা বিক্রেতারা। আর পরিস্থিতি নিয়ন্ত্রণে মজুত আইনের কঠোর প্রয়োগের পরামর্শ অর্থনীতিবিদদের।


চালের বাজারে স্বস্তি ফেরাতে গত ২০ অক্টোবর এর ওপর বিদ্যমান আমদানি শুল্ক ২৫ শতাংশ থেকে কমিয়ে ১৫ শতাংশ, রেগুলেটরি শুল্ক ২৫ শতাংশ থেকে কমিয়ে ৫ শতাংশ এবং আগাম কর ৫ শতাংশ সম্পূর্ণ প্রত্যাহার করেছিল জাতীয় রাজস্ব বোর্ড (এনবিআর)। এতেও দাম না কমায় গত ৩১ অক্টোবর চাল আমদানিতে শুল্ক পুরোপুরি তুলে নেয় সরকার।


তবে এর কোনো প্রভাবই নেই বাজারে। আমনের ভরা মৌসুমে চালের ভরপুর সরবরাহ রাজধানীর পাইকারি কিংবা খুচরা মুদিখানায়। তারপরও বিক্রেতারা বলছেন, সবচেয়ে বেশি বিক্রি হওয়া মিনিকেট ও নাজিরশাইল চালের দাম গত সপ্তাহে কেজিতে বেড়েছে দুই থেকে চার টাকা। তিন সপ্তাহের হিসাবে যা ঠেকছে ৮ থেকে ১০ টাকায়।

 

দেশের প্রধান এই খাদ্যপণ্যের দাম নিয়ন্ত্রণের দাবি জানিয়ে সাধারণ মানুষ বলছেন, বাজার কাঠামো ঠিক রাখতে সরকার ব্যর্থ হলে বেকায়দায় পড়বেন ভোক্তারা। নাসিম নামে এক ক্রেতা বলেন, চালের দাম দিনে দিনে বাড়ছেই। যার প্রভাব সব শ্রেণির ভোক্তার ওপরই পড়ছে। মজুতদারদের সিন্ডিকেট ভেঙে দিতে হবে।

 

আর বিক্রেতাদের দাবি, গত ১৫-২০ দিন ধরে হু হু করে বাড়ছে চালের দাম। অযৌক্তিক দামের কবল থেকে দেশের মানুষকে বাঁচাতে খতিয়ে দেখতে হবে করপোরেট গ্রুপ ও মিলারের গুদাম হিসাব।

 

রাজধানীর কারওয়ান বাজারের বরিশাল রাইছ এজেন্সির বিক্রেতা জানান, বাজারে প্রতি কেজি মিনিকেট ৮০ টাকা, আটাইশ ৫৮-৬০ টাকা, মোটা স্বর্ণা ৫২-৫৬ টাকা, নাজিরশাইল ৭৬-৮২ টাকায় বিক্রি হচ্ছে। এছাড়া প্রতি কেজি পোলাও চাল বিক্রি হচ্ছে ১১৬-১১৮ টাকায়।

 

বাজারে এই নাজেহাল অবস্থার কথা শিকার করেছেন অন্তর্বর্তী সরকারের উপদেষ্টারাও। বাণিজ্য উপদেষ্টা শেখ বশিরউদ্দিন বৃহস্পতিবার (৯ জানুয়ারি) বলেন, রমজান সামনে রেখে সরকার বাজার স্থিতিশীল রাখার চেষ্টা করছে। তবে সরকারের হাতে কোনো আলাদিনের চেরাগ নেই, যার মাধ্যমে রাতারাতি বাজার নিয়ন্ত্রণ করা সম্ভব হবে। চালের বাজার নিয়ে কিছুটা শঙ্কা রয়েছে। বাজারে অন্য কোনো পণ্যে অসঙ্গতি নেই। চাল মজুতেও ঘাটতি নেই। এরপরেও চাল আমদানিতে ব্যবসায়ীদের উৎসাহ দেয়া হচ্ছে। আমদানি শুল্ক ৬৩ শতাংশ থেকে তিন শতাংশে নামানো হয়েছে। এছাড়া এপ্রিল মাসে বোরো ধান উঠলে চালের বাজার স্বাভাবিক হবে।

 

এ অবস্থায় বাজার নিয়ন্ত্রণে লোক দেখানো তদারকি ছেড়ে মজুত আইনের কঠোন প্রয়োগের পরামর্শ দিয়েছেন অর্থনীতিবিদরা। অর্থনীতিবিদ ড. মাহফুজ কবির বলেন, বাজার নিয়ন্ত্রণে মজুত আইনের কঠোর প্রয়োগ বর্তমানে সবচেয়ে ভালো উপায়। তা না করে খোঁজ বা ব্যবস্থা নিচ্ছি বলে বাজার নিয়ন্ত্রণ সম্ভব নয়। দুই-একজন অসাধু মিলারকে শাস্তি দেয়া হলে বাকিরা ভয় পাবে।

 

এদিকে, সাত দিনের ব্যবধানে আপেল, আঙুর, ড্রাগন, কমলার দাম বেড়েছে কেজিতে ১০০ টাকা পর্যন্ত। বিক্রেতারা বলছেন, শুল্ক বৃদ্ধির আলোচনার মধ্যে সপ্তাহজুড়েই ঊর্ধ্বমুখী রয়েছে আমদানি করা ফলের বাজার। আর মুদি দোকানিরা বলছে, এলাচের বাজার চড়া থাকলেও নতুন করে বাড়েনি ডাল আটা চিনির দাম। তবে আবারও সংকটে পড়া ভোজ্যতেল বাড়াচ্ছে দাম বৃদ্ধির আশঙ্কা।


শেয়ার করুন