শীত মানেই ত্বকের সমস্যা। শীতে বাতাসের কারণে শীতের তীব্রতা তো আছেই, শুষ্কতা এবং আদ্রতার অভাবে ত্বককে রুক্ষ, খসখসে এবং নিষ্প্রাণ করে তোলে।
ত্বক তার প্রাকৃতিক উজ্জ্বলতা হারাতে থাকে; সাথে নানা সমস্যা শুষ্কতা, ফাটল, রুক্ষভাব এবং কালচে দাগ দেখা দেয়। এ সমস্যা থেকে মুক্তি পেতে রয়েছে ঘরোয়া সমাধান। যা হতে পারে সহজ এবং প্রাকৃতিক উপাদানের মাধ্যমে। জেনে নেয়া যাক উপায়গুলো কি-
মধু
মধু শীতকালে ত্বককে নরম এবং আর্দ্র রাখার জন্য অত্যন্ত কার্যকরী। প্রাকৃতিক ময়শ্চারাইজার হিসেবে কাজ করে, যা ত্বকে আর্দ্রতা প্রদান করে এবং শুষ্কতা দূর করে। মধু ত্বকের ন্যাচারাল গ্লো ফিরিয়ে আনতে সাহায্য করে। শীতের সময় যখন ত্বক আর্দ্রতার অভাবে সান্ধ্য ও ক্লান্ত হয়ে পড়ে, তখন মধু ব্যবহার করলে ত্বক হয়ে ওঠে কোমল, স্বাস্থ্যকর এবং উজ্জ্বল।
এছাড়া শীতকালীন একটি সহজ প্রাকৃতিক ওষুধ হলো কমলার রসের সঙ্গে মধু মিশিয়ে ত্বকে লাগানো। এটি ত্বকের ময়শ্চারাইজেশন বাড়ায় এবং ত্বকের পিগমেন্টেশন দূর করতে সাহায্য করে।
আবার মধু ও টকদই মিশিয়ে একটি প্যাক তৈরি করে ত্বকে লাগানোও বেশ কার্যকরী। এটি ত্বকের শুষ্কতা দূর করে এবং উজ্জ্বলতা ফিরিয়ে আনে।
বেসন
সাধারণত আমাদের ঘরোয়া রান্নার একটি অপরিহার্য উপাদান বেসন। কিন্তু অনেকে জানেন না, তা ত্বকচর্চারও এক গুরুত্বপূর্ণ উপাদান। শীতকাল ছাড়া বছরের অন্য সময়েও ত্বকে মসৃণতা আনতে এবং ত্বকের উজ্জ্বলতা বাড়াতে বেসন কার্যকরী। এটি ত্বকের মৃত কোষগুলো পরিষ্কার করতে সাহায্য করে এবং ত্বককে মসৃণ ও উজ্জ্বল করে তোলে।
বেসন, টকদই, হলুদ মিশিয়ে একটি প্যাক তৈরি করে ত্বকে ব্যবহার করলে তা ত্বকের শুষ্কতা দূর করে ও উজ্জ্বলতা আনে। অন্যদিকে, বেসন এবং কাঁচা দুধ মিশিয়ে একটি পেস্ট তৈরি মেশালে তা ত্বককে গভীরভাবে পুষ্টি দেয় এবং ত্বকের আর্দ্রতা বজায় রাখে। বেসন ত্বককে নরম এবং সজীব করে তোলে।
অ্যালোভেরা
অ্যালোভেরা হলো এক প্রাকৃতিক মহাওষুধ। যা শীতকালে ত্বকের জন্য অত্যন্ত উপকারী। অ্যালোভেরার জেলটি ভিটামিন, খনিজ এবং অ্যান্টিঅক্সিডেন্ট সমৃদ্ধ। এটি ত্বককে আর্দ্র রাখে এবং শুষ্কতা, দানাযুক্ত ত্বক প্রশমিত করতে সাহায্য করে। অ্যালোভেরা ত্বকের ক্ষত বা ফাটলও দূর করে এবং শীতের মধ্যে ত্বককে নরম ও মসৃণ রাখে।
অ্যালোভেরা জেল এবং মধু মিশিয়ে এটি ত্বকে লাগাতে পারেন। এটি ত্বকের আর্দ্রতা বজায় রাখে এবং ত্বককে সজীব করে তোলে। এছাড়া, অ্যালোভেরা ত্বকের চুলকানি ও রাশ দূর করতে সাহায্য করে এবং ত্বককে প্রশান্তি দেয়।
টমেটো
শীতকালীন সহজলভ্য তরকারি। শীতে ত্বকের ওষুধ হিসেবে কাজে লাগাতে পারেন।
টমেটো একটি প্রাকৃতিক উপাদান যা ত্বকের বিভিন্ন সমস্যা দূর করতে সাহায্য করে। টমেটো ত্বকের অতিরিক্ত তেল নিয়ন্ত্রণ করতে এবং ত্বকের পিগমেন্টেশন দূর করতে কার্যকরী। এতে অ্যান্টিঅক্সিডেন্ট গুণ রয়েছে যা ত্বকের ক্লান্তি ও শুষ্কতা কাটিয়ে ত্বককে উজ্জ্বল করে তোলে। শীতের সময় ত্বকে অ্যান্টি-এজিং প্রভাবও সৃষ্টি করতে পারে টমেটো।
টমেটোর রস এবং মুলতানি মাটি মিশিয়ে একটি প্যাক তৈরি করুন। এটি ত্বককে গভীরভাবে পরিষ্কার করে এবং ত্বকের কালচে ভাব দূর করতে সাহায্য করে। আপনি টমেটোর রস সরাসরি ত্বকে ব্যবহার করেও উজ্জ্বলতা পেতে পারেন
পানি পান করুন
পানির অভাবে শীতকালে ত্বক শুষ্ক হতে পারে, আর্দ্রতা হারিয়ে যেতে পারে। এটি মূলত ত্বককে ভিতর থেকে শুকিয়ে ফেলে। এর ফলে ত্বকে শুষ্কতা এবং রুক্ষতা সৃষ্টি হয়। তাই, শীতকালে আমাদের ত্বকের ভিতর থেকে হাইড্রেটেড থাকা অত্যন্ত জরুরি। সারাদিন প্রচুর পানি পান করুন, এতে ত্বকের আর্দ্রতা বজায় থাকবে।
এছাড়া, শীতকালে সূর্যের ক্ষতিকারক রশ্মি থেকেও ত্বককে সুরক্ষিত রাখতে সানস্ক্রিন ব্যবহার অত্যন্ত জরুরি। সঠিক সানস্ক্রিন ত্বকের বয়স বাড়ানো, ত্বকের পিগমেন্টেশন এবং সানবার্ন প্রতিরোধ করতে সাহায্য করে। স্নানের পরে নিয়মিত ভালো ময়শ্চারাইজার ব্যবহার করতে হবে যাতে ত্বক আর্দ্র এবং সজীব থাকে।
শীতকালে ত্বকের সঠিক যত্ন নেওয়া অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ। ঘরোয়া প্রতিকারগুলো ত্বককে আর্দ্র ও স্বাস্থ্যকর রাখতে সহায়তা করে, যাতে ত্বক শীতের তীব্রতা মুক্ত থাকতে পারে। মধু, বেসন, অ্যালোভেরা, টমেটো এবং প্রচুর পানি পান করার মাধ্যমে আপনি আপনার ত্বককে সুন্দর এবং উজ্জ্বল রাখতে পারবেন। তবে সবচেয়ে গুরুত্বপূর্ণ হল ত্বককে ভালবাসা, যত্ন নেওয়া এবং সঠিকভাবে প্রাকৃতিক উপাদানগুলি ব্যবহার করা।