কোহিনুর শেখের (৫৭) বাড়ি রাজশাহীর পদ্মার চরে। কোরবানির হাটে বিক্রির জন্য তিনি বছরে তিন থেকে চারটা গরু পালন করেন। স্থানীয়ভাবে বিক্রি করলে ব্যবসায়ীরা নগদ টাকা দেন না। কেউ কেউ লোকসানের কথা বলে পুরো দাম দিতে চান না। আবার ব্যাপারী প্রভাবশালী হলে টাকা তুলতে সালিস–দরবারও করতে হয়। এমন অভিজ্ঞতার কারণে প্রতিবছর তাঁর মতো তিন–চার ব্যবসায়ী রাজশাহী থেকে সরাসরি ট্রাক ভাড়া করে গরু নিয়ে ঢাকায় যান। এবারও আদর–যত্নে পালন করা গরু বিক্রি করে সুদিনের স্বপ্ন দেখছিলেন।
গত শনিবার (৩১ মে) দিবাগত রাতে সড়ক দুর্ঘটনায় কোহিনুর শেখের সেই স্বপ্ন ভেঙে গেছে। তাঁর গরুর ট্রাক টাঙ্গাইলে থেমেছিল। পেছন থেকে একটি সবজির ট্রাক এসে ধাক্কা দেয়। এতে ঘটনাস্থলেই তাঁর মৃত্যু হয়। গতকাল রোববার বিকেলে তাঁর লাশ দাফন করা হয়েছে। কিন্তু গরু এখনো বিক্রি হয়নি।
ভাগনে রেজাউল করিমের কাছ থেকেই মামা কোহিনুর শেখের বিষয়ে জানা গেল। তিনি জানান, তাঁদের বাড়ি রাজশাহীর বাঘা উপজেলার নীচ পলাশী ফতেপুর গ্রামে। তাঁর মামার তিন ছেলেমেয়ে। দুই মেয়ের বিয়ে হয়ে গেছে। ছেলে আরিফুল ইসলামের বয়স ১৫–১৬ হবে।
কোহিনুর শেখ নিবন্ধিত জেলে। পদ্মা নদীতে মাছ ধরে ও কৃষিকাজ করে জীবিকা নির্বাহ করতেন। এক দশকের বেশি সময় ধরে গরু পালন করেন। রেজাউল জানান, গত মৌসুমে পেঁয়াজ চাষ করে কোহিনুরের লোকসান হয়েছে। এই গরুর পেছনেও তাঁর ঋণ আছে। তিনি মারা যাওয়ার তাঁর পরিবার একেবারে সর্বস্বান্ত হয়ে গেল।
কোহিনুরের ছেলে আরিফুলও বাবার সঙ্গে গরুর ট্রাকেই ছিল। সে চালকের পাশে ছিল। আর তার বাবাসহ তিন ব্যবসায়ী গরুর সঙ্গে ট্রাকের ওপরে ছিলেন। তিনি জানান, দীর্ঘ যাত্রাপথে গরুর গায়ে মাঝেমধ্যে পানি ছিটাতে হয়। লেজ টেনে দিতে হয়। তা ছাড়া শুয়ে পড়ে। একটা গরু শুয়ে পড়লে অন্য গরুর আর দাঁড়ানোর জায়গা থাকে না। সে জন্যই গরুর সঙ্গে দাঁড়িয়ে যেতে হয়।
কোহিনুর শেখের সঙ্গে ট্রাকে থাকা মোবারক হোসেন (৫৫) জানান, ট্রাকের পেছনের তিনিসহ দেলোয়ার হোসেন ও কোহিনুর শেখ বসা ছিলেন। দিবাগত রাত সোয়া একটার দিকে ট্রাকটি মির্জাপুর থানার দেওহাটা এলাকায় স্কুলের কাছে পার্কিং ছিল। সেখানে পেছন থেকে সবজিবোঝাই অপর একটি ঢাকাগামী ট্রাক জোরে ধাক্কা দিলে কোহিনুর শেখ গুরুতর আহত হন। পরে আহত অবস্থায় তাঁকে স্থানীয় হাসপাতালে নেওয়া হলে চিকিৎসক মৃত ঘোষণা করেন। সেখানে দেলোয়ার ও তিনিও প্রাথমিক চিকিৎসা নিয়েছেন। কোহিনুর শেখের বড় জামাতা দুলাল হোসেন ঢাকায় পোশাক কারখানায় চাকরি করেন। খবর পেয়ে তিনি ঘটনাস্থলে এসে লাশ বাড়িতে নিয়ে আসেন। গতকাল বিকেলে স্থানীয় গোরস্তানে লাশ দাফন করা হয়েছে।
আজ সোমবার বিকেলে রেজাউল করিম জানান, সকালে কোহিনুরের ছেলে আরিফুল ও জামাতা দুলাল হোসেন গরু বিক্রি করতে ঢাকায় গেছেন। তাঁরা তখনো গরুর কাছে পৌঁছাতে পারেননি। দুর্ঘটনার পরে দুটি ট্রাকই পুলিশ জব্দ করেছিল। গরুগুলো পুলিশের জিম্মায় অন্য ব্যবসায়ীদের সঙ্গে ঢাকায় পাঠানো হয়েছে।
গোড়াই হাইওয়ে থানা–পুলিশের উপপরিদর্শক (এসআই) শাহ আলম বলেন, সড়ক দুর্ঘটনায় দুটি ট্রাক উদ্ধার করে থানায় নেওয়া হয়েছে। অভিযোগ না থাকায় কোহিনুর শেখের মরদেহ দাফনের অনুমতি দেওয়া হয়েছে। এ বিষয়ে একটি অপমৃত্যুর (ইউডি) মামলা করা হয়েছে।