১৯ জানুয়ারী ২০২৫, রবিবার, ১২:৩৮:৫৪ পূর্বাহ্ন
শহিদরা জাতীয় সম্পদ, তাদের দলভুক্ত করতে চাই না
  • আপডেট করা হয়েছে : ১৮-০১-২০২৫
শহিদরা জাতীয় সম্পদ, তাদের দলভুক্ত করতে চাই না

একমাত্র কুরআনের শাসন বাংলাদেশে ন্যায়বিচার ও ইনসাফ-ভিত্তিক সমাজ ও রাষ্ট্র কায়েম করতে পারে- উল্লেখ করে বাংলাদেশ জামায়াতে ইসলামীর আমির ডা. শফিকুর রহমান বলেছেন, ‘চাঁদাবাজি-দখলদারিত্বের বিরুদ্ধে আমাদের ন্যায়ের যুদ্ধ চলবে। যুদ্ধ কতক্ষণ? যতক্ষণ না রাষ্ট্র ও সমাজে ইনসাফ কায়েম হয়। এই ইনসাফ দিতে পারে একমাত্র আল কুরআন। এই কুরআনের শাসনের আলোকে আমরা বাংলাদেশ গড়তে চাই’। 


শনিবার দুপুরে রাজশাহীর ঐতিহাসিক মাদ্রাসা মাঠে জেলা ও মহানগর জামায়াত আয়োজিত বিশাল কর্মী সম্মেলনে প্রধান অতিথির বক্তব্যে তিনি এসব কথা বলেন।


জামায়াত আমির বলেন, ‘আমরা বৈষম্যহীন, দুর্নীতিমুক্ত, চাঁদাবাজমুক্ত, ন্যায়-ইনসাফের মাধ্যমেই বাংলাদেশ গড়তে চাই। এ জন্য আমাদের লড়াই এখনও চালিয়ে যেতে হবে। আমরা অতীতে অনেক ত্যাগ করেছি। প্রয়োজনে আরও ত্যাগ স্বীকার করতে হবে। জীবন খুব ছোট, কাজ অনেক বড়। বিশ্রামের কোনো সময় নেই’।


তিনি বলেন, ‘অনেকে দেশ শাসন করেছেন। আমাদের সন্তানেরা এত এত রক্ত কেন দিল? কারণ, তারা চেয়েছেন এই সমাজ ও রাষ্ট্র থেকে সব ধরনের দুঃশাসন এবং দুর্নীতির কবর রচিত হোক। আমরা একটা কল্যাণময় রাষ্ট্র কায়েম করব। 


সারা দেশে চাঁদাবাজি ও দখলদারিত্বের ব্যাপারে ক্ষোভ প্রকাশ করে জামায়াত আমির বলেন, ‘যারা এসব করছেন, বিনয়ের সাথে তাদেরকে বলি, এগুলো বন্ধ করেন। তবে যদি আমাদের এই বিনয়ী অনুরোধ কেউ না মানেন, তাহলে বলছি, আমাদের যুদ্ধ এখনও শেষ হয়নি। সন্তানেরা শ্লোগান দিচ্ছে- আবু সাঈদ মুদ্ধ, শেষ হয়নি যুদ্ধ। যুদ্ধ চলবে।’


তিনি আরও বলেন, ‘রাজশাহী, যেটাকে শিক্ষার ভিলেজ বলা হয়, শিক্ষার গ্রাম শিক্ষা নগরী। আমি আশা করি, ৫ আগস্টের পর রাজশাহীতে আর কোনো চাঁদাবাজি হয় না। এখানকার মানুষ ভদ্র, বিনয়ী এবং সৎ। এখানে কেউ চাঁদাবাজি করে না, ঠিক না?’ এ সময় নেতাকর্মীরা ‘চাঁদাবাজি হয়’ চাঁদাবাজি হয় বলে আওয়াজ তোলেন। 


আমির প্রশ্ন করেন, ‘এখানেও চাঁদাবাজি হয়? এখানেও ফুটপাত দখল হয়? হাটবাজার, বালুমহাল, জলমহাল, যানবাহন স্ট্যান্ড, সবগুলোতে দখলদারি হয়?’ তখনও মাঠভরা নেতাকর্মীরা ‘হয়’ হয় বলে আবার আওয়াজ তোলেন।


ডা. শফিকুর রহমান বলেন, ‘তাহলে আমাদের শহিদদের রক্তের প্রতি এটা কি ভালোবাসা? এই কাজ যারা করেন, বিনয়ের সাথে অনুরোধ করি এই কাজটা ছেড়ে দেন। আমাদের শহিদেরা কষ্ট পাবেন। অফিস আদালতে ঘুস বাণিজ্য আছে, আবার মামলা বাণিজ্যও অনেকে করেন। তাদের প্রতি আমাদের আন্তরিক অনুরোধ- ভাই, এই কাজগুলো করিয়েন না। আমাদের শহিদদের আত্মা বড় কষ্ট পাবে। আমাদের জীবন্ত সন্তানেরা যারা শহিদ হওয়ার নিয়ত করে রাস্তায় নেমেছিল, তারা কষ্ট পাবে। তাদেরকে কষ্ট দিবেন না।’


তিনি আরও বলেন, ‘আমরা আল্লাহর শক্তিতে বলিয়ান একটি জাতি গঠন করতে চাই। সে জাতি হবে সাহসী জাতি, বীরের জাতি। সে জাতি আল্লাহ ছাড়া কারও কাছে মাথানত করবে না। এটা করেনি বলেই বিগত ১৫টি বছর আলেম-ওলামাদের ওপর বিগত সরকার জঘন্য তান্ডব চালিয়েছে। জামায়াতের দুজন আমিরসহ ১১ জন দায়িত্বশীল নেতাকে আমাদের বুক থেকে কেড়ে নিয়েছে। অন্যায়ের প্রতিবাদ যারা করেছে; তাদের গুম করেছে। অসংখ্য ভাইকে খুন করেছে। চাকরি কেড়ে নিয়েছে। ব্যবসা ছিনিয়ে নিয়েছে। কাউকে কাউকে দেশেও থাকতে দেয়নি। মানুষের কল্যাণে কাজ করার কারণে অনেকে জিন্দা শহিদ হয়ে আছে। হাত পা টুকরা-টুকরা। এই কষ্টের জীবন নিয়ে তারা বেঁচে আছেন।’


শফিকুর রহমান বলেন, ‘যারা রক্ত দিয়ে আজকের এই পরিবেশ দিয়ে গিয়েছেন, আমরা তাদের প্রতি ঋণী এবং কৃতজ্ঞ। এই ঋণের দায় আমাদের আজীবন শোধ করতে হবে। কতজন আদম সন্তানকে দুনিয়া থেকে বিদায় করা হয়েছে সঠিক হিসাব কেউ দিতে পারবে না। আন্দোলনের শেষ দিনগুলোতে ইন্টারনেট বন্ধ রেখে, সবকিছু অন্ধকারে রেখে অনেক লাশ গুম করা হয়েছে। স্তূপে স্তূপে লাশ। ট্রাকের ওপর ছুড়ে মারা হয়েছে। তারপর পেট্রল ঢেলে আগুন দিয়ে লাশগুলো পুড়িয়ে দেওয়া হয়েছে। আমরা তাদের ঋণ কোনোদিন শোধ করতে পারব না।’


এমন সাহসী সন্তান থাকলে বাংলাদেশকে নিয়ে আর ষড়যন্ত্র করে লাভ নেই মন্তব্য করে জামায়াত আমির বলেন, ‘সাংবাদিক বন্ধুরা প্রশ্ন করেছেন- আপনাদের দলের কতজন শহিদ হয়েছে। আমরা বলেছি, যারা শহিদ হয়েছেন আমরা তাদের দলের মানুষ। তাদেরকে কোনো দলীয় পরিচয়ে আমরা তাদের সংকীর্ণ স্থানে নামাতে চায় না। তারা জাতীয় সম্পদ। তাদের আমরা মাথার ওপরে তুলে রাখতে চাই। এক হাত চলে গেছে, আরেক হাত নিয়ে যুদ্ধ করতে চায়। এমন সাহসী মানুষ থাকলে এই জাতির ওপর কোনো ষড়যন্ত্র বাস্তবায়ন হবে না’।


কর্মী সম্মেলনে বিশেষ অতিথি ছিলেন জামায়াতে ইসলামীর নায়েবে আমির অধ্যাপক মুজিবুর রহমান। সভাপতিত্ব করেন রাজশাহী মহানগর জামায়াতের আমির ড. মো. কেরামত আলী। আর সমাবেশ পরিচালনা করেন মহানগরের সেক্রেটারি ইমাজ উদ্দিন মন্ডল।


বক্তব্য রাখেন, কেন্দ্রীয় কমিটির সহকারী সেক্রেটারি জেনারেল রফিকুল ইসলাম খান, কেন্দ্রীয় কর্মপরিষদ সদস্য অধ্যক্ষ নজরুল ইসলাম, কেন্দ্রীয় সাংগঠনিক সেক্রেটারি অধ্যাপক রফিকুল ইসলাম, কেন্দ্রীয় নির্বাহী পরিষদ সদস্য নুরুল ইসলাম বুলবুল, মোবারক হোসাইন, রাজশাহী অঞ্চল পরিচালক অধ্যক্ষ মো. সাহাবুদ্দিন প্রমুখ।


দীর্ঘ ১৫ বছর রাজশাহীর ঐতিহাসিক মাদ্রাসা ময়দানে শনিবার জামায়াতের এমন কর্মী সম্মেলন অনুষ্ঠিত হলো। এই কর্মী সম্মেলনে যোগ দিতে সকাল থেকেই মাদ্রাসা মাঠে নেতাকর্মীদের ঢল নামে।


কর্মী সম্মেলন ছাড়াও এদিন দুপুরে চিকিৎসক সমাবেশ এবং বিকাল ৩টায় জামায়াতের মহিলা সদস্য সমাবেশে বক্তব্য দেন জামায়াতের আমির।  সন্ধ্যার পর তিনি ব্যবসায়ীদের নিয়ে রাজশাহী চেম্বার অব কমার্স অ্যান্ড ইন্ডাস্ট্রি ভবনে একটি সমাবেশ করেন। 


শেয়ার করুন