কৃত্রিম বুদ্ধিমত্তা (এআই) প্রযুক্তির ক্ষেত্রে চীনের নতুন উদ্ভাবন ডিপসিক (DeepSeek) বৈশ্বিক প্রযুক্তি জগতে আলোড়ন তুলেছে। চীনা প্রতিষ্ঠানটির এই কম খরচের এবং উচ্চ দক্ষতার এআই অ্যাসিস্টেন্ট অ্যাপ শুধু চ্যাটজিপিটির মতো কার্যকরই নয়, বরং মার্কিন প্রতিষ্ঠানগুলোর ব্যয়বহুল মডেলগুলোকে প্রতিযোগিতার নতুন মঞ্চে নিয়ে এসেছে। মাত্র ৬০ লাখ ডলার ব্যয়ে নির্মিত কৃত্রিম বুদ্ধিমত্তা ডিপসিকের জনপ্রিয়তা দ্রুত বৃদ্ধি পাচ্ছে, বিশেষত যুক্তরাষ্ট্রে। অ্যাপ স্টোরের শীর্ষ ডাউনলোডেড অ্যাপ হিসাবে ইতোমধ্যেই জায়গা করে নিয়েছে এটি। ব্যবহারকারীদের মতে, ডিপসিকের এআই অ্যাসিস্টেন্ট শক্তিশালী ও ব্যক্তিগতকরণে দক্ষ।
এ উত্থানের মধ্যেই সাইবার আক্রমণের শিকার হয়েছে কৃত্তিম বুদ্ধিমত্তা প্ল্যাটফর্মটি। তারা জানিয়েছে, সাময়িকভাবে নিবন্ধন সীমিত করবে। মূলত এআই অ্যাসিস্ট্যান্টটি আকস্মিক জনপ্রিয়তা অর্জনের পর এই আক্রমণের ঘটনা ঘটেছে।
বার্তাসংস্থা রয়টার্সের এক প্রতিবেদনে বলা হয়, ডিপসিকের ওয়েবসাইটে একই দিনে সার্ভার ডাউন হয়ে যায়। অ্যাপলের অ্যাপ স্টোরে যুক্তরাষ্ট্রে তাদের এআই অ্যাসিস্ট্যান্ট সেরা রেটিং পাওয়া ফ্রি অ্যাপ হিসাবে উঠে আসার পরই এই সমস্যা দেখা দেয়।
বাজারে প্রভাব
ডিপসিকের সাফল্যের খবর প্রকাশ পাওয়ার পরই মার্কিন আর্থিক বাজারে বড় ধরনের প্রভাব পড়ে। মার্কিন প্রযুক্তি কোম্পানিগুলোর শেয়ারমূল্যে ব্যাপক পতন ঘটে। বিশেষত, চিপ প্রস্তুতকারী প্রতিষ্ঠান এনভিডিয়ার শেয়ারমূল্য একদিনেই প্রায় ১৭ শতাংশ কমে যায়, যা তাদের বাজারমূল্যে ৬০ হাজার কোটি ডলারের ক্ষতি করে।
বিশ্লেষকরা বলছেন, ডিপসিকের সাফল্য শুধু মার্কিন এআই মডেলগুলোর ব্যয়ের কাঠামোকেই প্রশ্নবিদ্ধ করেনি, বরং উচ্চ-পারফরম্যান্স চিপের অপরিহার্যতার ধারণাতেও ছেদ ঘটিয়েছে। ডিপসিক কম উন্নত সেমিকন্ডাক্টর চিপ ব্যবহার করেও সফল মডেল তৈরি করেছে, যা চিপ নির্মাণ খাতের ভবিষ্যৎ সম্পর্কে অনিশ্চয়তা তৈরি করছে।
সতর্কবার্তা ও ইতিবাচক দৃষ্টিভঙ্গি
মার্কিন প্রেসিডেন্ট ডোনাল্ড ট্রাম্প ডিপসিকের উত্থানকে মার্কিন প্রতিষ্ঠানগুলোর জন্য সতর্কবার্তা হিসাবে উল্লেখ করেছেন। ফ্লোরিডায় এক বক্তব্যে তিনি বলেন, চীনা কম খরচের এআই মডেল মার্কিন প্রতিষ্ঠানগুলোকে প্রতিযোগিতায় এগিয়ে থাকার তাগিদ দিচ্ছে। তবে চীনা প্রযুক্তিকে তিনি ইতিবাচক দৃষ্টিতে দেখেন, কারণ এটি প্রযুক্তি খাতে খরচ কমাতে ভূমিকা রাখবে বলে তার বিশ্বাস।
ডিপসিকের ভবিষ্যৎ
ডিপসিকের প্রতিষ্ঠাতা লিয়াং ওয়েনফেং-এর উদ্যোগ, চীনের এআই খাতের প্রতি সরকারের সহযোগিতা এবং শক্তিশালী চিপের বিকল্প খুঁজে বের করার কৌশল ডিপসিককে দ্রুত জনপ্রিয় করেছে। এনভিডিয়া চিপের ব্যবহার সীমিত থাকা সত্ত্বেও, ডিপসিক স্বল্প খরচে কার্যকর প্রযুক্তি নিয়ে আসতে সক্ষম হয়েছে।
বিশেষজ্ঞদের মতে, ডিপসিকের এ সাফল্য শুধু এআই খাত নয়, বৈশ্বিক প্রযুক্তি বাজারেও দীর্ঘমেয়াদে প্রভাব ফেলবে। নতুন প্রযুক্তি এবং উদ্ভাবনী কৌশল মার্কিন আধিপত্যকে চ্যালেঞ্জ করবে এবং বৈশ্বিক প্রযুক্তি প্রতিযোগিতা আরও তীব্র করে তুলবে। ডিপসিকের উত্থান এআই খাতের জন্য নতুন একটি মাইলফলক। কম খরচে উচ্চমানের প্রযুক্তি উদ্ভাবনের মাধ্যমে প্রতিষ্ঠানটি প্রমাণ করেছে, সৃজনশীলতা ও দক্ষ ব্যবস্থাপনা দিয়ে ব্যয়বহুল প্রযুক্তির বিকল্প তৈরি করা সম্ভব।