যশোরের চৌগাছায় নতুন মৌসুমের পেঁয়াজ বাজারে উঠতে শুরু করেছে। তবে পেঁয়াজের দাম কম হওয়ায় হতাশ কৃষকেরা।
তারা বলছেন, চলতি বছরে দেশের বাজারে পেঁয়াজের দাম অনেক বেশি থাকার কারণে যশোরের চৌগাছার প্রান্তিক কৃষকেরা লক্ষ্যমাত্রার দ্বিগুণ জমিতে পেঁয়াজ চাষ করেছেন। ফলে নতুন পেঁয়াজ ওঠার পর বাজারে বড় ধরনের দর পতন দেখা দিয়েছে। এ অবস্থায় সরকারকে পেঁয়াজ সংরক্ষণের ব্যবস্থা গ্রহণের আহ্বান জানিয়েছেন প্রান্তিক কৃষকরা।
কৃষি সম্প্রসারণ অফিসের তথ্য অনুসারে, চলতি মৌসুমে উপজেলায় প্রায় ৩শ’ হেক্টর জমিতে পেঁয়াজের চাষ হয়েছে, যা লক্ষ্যমাত্রার দ্বিগুণ।
বিভিন্ন বাজার ঘুরে দেখা গেছে, মুড়িকাটা পেঁয়াজের দাম প্রতি কেজি ৪০ থেকে ৪৫ টাকায় বিক্রি হচ্ছে। অল্প কিছুদিন আগেও কেজি প্রতি পেঁয়াজের দাম ছিল ১৫০ টাকা। যশোর শহরসহ বিভিন্ন প্রান্তিক এলাকার বাজারে নতুন পেঁয়াজ পাওয়া যাচ্ছে। খুচরা পর্যায়ে ৪৫ থেকে ৫০ টাকা কেজি, পাইকারি বাজারে ৩০ থেকে ৩২ টাকা দরে কেনাবেচা চলছে।
খুচরা ব্যবসায়ী আজিজুর রহমান বলেন, সাধারণত পাইকারি ও খুচরা কেনাবেচাতে ৫ থেকে ১০ টাকার পার্থক্য থাকে। বর্তমান পাইকারি ও খুচরা বাজারে এই পার্থক্য বেড়ে দাঁড়িয়েছে ১৫ থেকে ২০ টাকা।
এ পরিস্থিতিতে পেঁয়াজের উৎপাদন ব্যয়, বাজারমূল্যের অস্থিরতা এবং মধ্যস্বত্বভোগীদের দৌরাত্ম্যকে দায়ী করেছে প্রান্তিক কৃষকরা।
প্রান্তিক কৃষক মহিরুদ্দীন বলছেন, পেঁয়াজের উৎপাদন ব্যয়, বাজার মূল্যের অস্থিরতা এবং মধ্যস্বত্বভোগীদের দৌরাত্ম্যই এই লোকসানের প্রধান কারণ। এসব কারণে পেঁয়াজ চাষে আাগামীতে আগ্রহ হারাতে পারে কৃষক। কয়েক বছর ধরে পেঁয়াজের উৎপাদন খরচ ক্রমাগত বেড়েই চলেছে।
সদর ইউনিয়নের বেড়গোবিন্দপুর গ্রামের কৃষক আবদার আলী ও আব্দুস সামাদ বলেন, চলতি বছরে দুই বিঘা জমিতে পেঁয়াজ চাষ করেছি। বীজের দাম কয়েক বছরের মধ্যে সবচেয়ে বেশি ছিল। এ বছর আবহাওয়া ভালো থাকায় ফলন ভালো হয়েছে। কিন্তু বাজারে দাম পড়ে গেছে। মজুরি, সার ও কীটনাশক, বীজ কেনায় বিঘা প্রতি মোট ৮০ থেকে ৯০ হাজার টাকা খরচ পড়েছে। এক বিঘা জমিতে উৎপাদন হয় ৪০ থেকে ৪৫ মণ পেঁয়াজ। যার বর্তমান বাজার মূল্য ৪৮ থেকে ৫০ হাজার টাকা। সে হিসাবে দুই বিঘা জমিতে ক্ষতি হবে ৭০ থেকে ৮০ হাজার টাকা।
আড়তদার সিদ্দিকুর রহমান বলেন, সরকারের উচিৎ স্থানীয়ভাবে কোল্ড স্টোর স্থাপন করে মৌসুমে উৎপাদিত পেয়াজ সংরক্ষণের ব্যবস্থা করা। তাহলে কৃষক ক্ষতির মুখে পড়বে না। অন্যদিকে বাজারে ক্রেতা কম থাকায় মোকামেও পেয়াজের চাহিদা কমে গেছে বলে জানিয়েছেন পেঁয়াজের পাইকারি ব্যবসায়ীরা।
উপজেলা কৃষি কর্মকর্তা মাসাব্বির হুসাই বলেন, স্থানীয় পদ্ধতিতে পেঁয়াজ সংরক্ষণের বিষয়ে কৃষকদের পরামর্শ দেওয়া হচ্ছে। পেঁয়াজ সংরক্ষণ করতে পারলে ভালো লাভ করা সম্ভব।