১২ ফেব্রুয়ারী ২০২৫, বুধবার, ০২:৩৯:৪২ পূর্বাহ্ন
চাকরিচ্যুত ২২০০ পুলিশ সদস্যকে পুনর্বহালের দাবি
  • আপডেট করা হয়েছে : ১১-০২-২০২৫
চাকরিচ্যুত ২২০০ পুলিশ সদস্যকে পুনর্বহালের দাবি

আওয়ামী স্বৈরাচারী সরকারের আমলে চাকরিচ্যুত ২ হাজার ২০০ পুলিশ সদস্যকে চাকরিতে পুনর্বহালের দাবি জানিয়েছে ভুক্তভোগী পরিবার। এ সময় ১ হাজার ৫২২ জন পুলিশ সদস্যকে পুনর্বহালের সংবাদকে মিথ্যা আখ্যা দিয়ে প্রতিবাদ জানিয়েছে তারা। 


মঙ্গলবার রাজধানীর জাতীয় প্রেস ক্লাবের মাওলানা আকরম খাঁ হলে আয়োজিত এক সংবাদ সম্মেলনে ‘ভিকটিম পুলিশ পরিবার’ এর পক্ষ থেকে এ দাবি জানানো হয়েছে। 


সংবাদ সম্মেলনে চাকরিচ্যুত পুলিশ সদস্যরা বলেন, ছাত্র-জনতার আন্দোলনের মাধ্যমে দীর্ঘ ১৬ বছরের স্বৈরশাসনের পতন ঘটেছে। এই দীর্ঘ সময়ে স্বৈরশাসক হাসিনা দেশের সব প্রতিষ্ঠান ধ্বংস করেছে। তারমধ্যে অন্যতম হচ্ছে বাংলাদেশ পুলিশ।বিগত স্বৈরাচারী সরকারের আমলে অন্যায়ভাবে প্রায় ২২০০ পুলিশ সদস্যকে চাকরিচ্যুত করার মাধ্যমে পুলিশ বাহিনীর নিম্নপদস্থ কর্মচারীদের মনে চাকরি হারানোর আতঙ্ক সৃষ্টি হয়। এরই ফলস্বরূপ জুলাই-আগস্ট বিপ্লবে পুলিশ বাহিনীর কিছু সিনিয়র দানবদের অবৈধ আদেশ পালন করে চাকরি বাঁচাতে অনিচ্ছা স্বত্ত্বেও গণহত্যার মতো অপরাধ করতে বাধ্য হয়।


তারা বলেন, স্বৈরাচারী সরকারের আমলে পুলিশ বাহিনীর বেশিরভাগ সিনিয়র কর্মকর্তা পুলিশ বাহিনীকে ভয়ঙ্কর দানবে পরিণত করতে আমাদের বিরুদ্ধে মিথ্যা, বানোয়াট, ভিত্তিহীন মামলা দিয়ে চাকরিচ্যুত করেছে। বিভাগীয় মামলা তদন্তের ক্ষেত্রে ন্যায়সঙ্গত কোনো প্রকার প্রসিডিউর অনুসরণ করা হয়নি।তদন্তকারী কর্মকর্তা, তদন্ত, মিথ্যা স্বাক্ষ্য গ্রহণসহ সব কিছুতেই তাদের পক্ষের একতরফা নীতি অনুসরণ করেছে। তারা এমনভাবে মামলা সৃজন করেছে যেন আদালত থেকেও কোনোভাবে বিবাদী নিজেকে নির্দোষ প্রমাণ করতে না পারে।আদালত থেকে প্রথম, দ্বিতীয় ও তৃতীয় রায় পাওয়ার পরেও আমাদেরকে চাকরিতে পুনর্বহাল করেনি।


চাকরিচ্যুত এই পুলিশ সদস্যরা আরও বলেন, স্বাস্থ্য মন্ত্রণালয়ের অনুমতি না থাকা স্বত্ত্বেও রাজারবাগ পুলিশ হাসপাতাল ও অন্যান্য অনুমোদনহীন হাসপাতাল থেকে ডোপ টেস্টের মাধ্যমে নিরীহ পুলিশ সদস্যদেরকে চাকরিচ্যুত করেছে। বেশিরভাগ চাকরিচ্যুত পুলিশ সদস্য ওই দিনই ঢাকা মেডিকেল ও পিজি হাসপাতাল থেকে ডোপ টেস্টের নেগেটিভ রিপোর্ট জমা দিলেও তা গ্রহণ করেনি। ডোপ টেস্টে যারা বড় অংকের টাকা ঘুস দিয়েছে বা যারা স্বৈরাচারী সরকারের লোক ছিলেন, তাদেরকে চাকরিতে বহাল রেখেছে। আর যারা টাকা দিতে পারেনি, তাদেরকে চাকরিচ্যুত করেছে। যারা অন্যায়ের বিরুদ্ধে সোশ্যাল মিডিয়া ফেসবুকে কমেন্ট করেছেন, তাদেরকে অন্যায়ভাবে চাকরিচ্যুত করেছে।


তারা বলেন, বিগত স্বৈরাচারী দোসরদের রাজনৈতিক এজেন্ডা বাস্তবায়ন করতে কিছু পুলিশ সদস্যকে চাকরিচ্যুত করতে মিথ্যা নাটক সাজিয়ে মাদক ও অস্ত্র দিয়ে পুলিশ বাদী হয়ে মামলা দিয়েছে। পুলিশ বাহিনীর কিছু অসাধু কর্মকর্তা নিজেদের পরিচিত লোকের মাধ্যমে মিথ্যা, ভিত্তিহীন অভিযোগ দিয়ে অসংখ্য পুলিশ সদস্যকে চাকরিচ্যুত করেছে। ২০০৭ সালে সাবেক আইজিপি নূর মোহাম্মদ বিভাগীয় মামলার ক্ষেত্রে সর্বনিম্ন শাস্তি প্রদানের প্রজ্ঞাপন জারি করেন। কিন্তু স্বৈরাচারী সরকারের দোসররা আওয়ামী এজেন্ডা বাস্তবায়ন করতে ছোটখাটো অপরাধের সর্বোচ্চ শাস্তি চাকরিচ্যুত করেছে।


তারা আরও বলেন, অন্তর্বর্তীকালীন সরকারের সাবেক স্বরাষ্ট্র উপদেষ্টা ব্রিগেডিয়ার জেনারেল (অব.) এম সাখাওয়াত হোসেন মানবিক বিবেচনায় সব পুলিশ সদস্যকে পুনর্বহালের আদেশ দেওয়ার পরেও স্বৈরাচারী সরকারের নিয়োজিত দোসররা তা বাস্তবায়নে বাধা প্রদান করছে। অনেক পুলিশ সদস্যকে চাকরিচ্যুত করার পর যদি আদালতে কোনো আইনানুগ ব্যবস্থা গ্রহণ করতে চায়, তাহলে গুম-খুনের হুমকি দিয়েছে। এসবের ভয়ে অনেক পুলিশ সদস্য আদালতে মামলা দায়ের করতে পারেনি। অনেক পুলিশ সদস্যকে জোরপূর্বক অথবা স্বাক্ষর জাল করে চাকরি থেকে স্বেচ্ছায় অবসর বা বাধ্যতামূলক অবসর গ্রহণ করতে বাধ্য করেছে। পুলিশপ্রধান পিআরবি ৮৮৪ প্রবিধান মতে সব চাকরিচ্যুত পুলিশ সদস্যকে পুনর্বহালের ব্যবস্থা গ্রহণ করার ক্ষমতা থাকলেও বিগত স্বৈরাচারী দোসরদের বাধার কারণে তা প্রয়োগ হচ্ছে না।


চাকরি পুনর্বহালের দাবি জানিয়ে ভুক্তভোগী পুলিশ সদস্যরা বলেন, আজকে যখন গণ-অভ্যুত্থানের মুখে স্বৈরশাসক পালিয়ে গেছে, তখন পুলিশ বাহিনীর কিছু পুরাতন দোসর আমাদেরকে চাকরিতে পুনর্বহাল করার কথা দিয়েও টালবাহানা করছে। আমরা বর্তমান সরকারকে বিনীত আবেদন জানাচ্ছি, আমাদেরকে সব সুযোগ-সুবিধাসহ চাকরিতে পুনর্বহাল করা হোক এবং বাংলাদেশ পুলিশ বাহিনী থেকে স্বৈরাচারের দোসরদের অপসারণ করা হোক।


সংবাদ সম্মেলনে ভুক্তভোগী পুলিশ পরিবারের পক্ষ থেকে বক্তব্য দেন- ‘ভিকটিম পুলিশ পরিবার’-এর সমন্বয়ক এসআই মামুন, সমন্বয়ক এসআই জাকারিয়া, মুখপাত্র এএসআই তৌহিদ মন্ডল, ভারপ্রাপ্ত সমন্বয়ক এএসআই সাইফুল, সমন্বয়ক কনস্টেবল সাদ্দাম হোসেন, সমন্বয়ক কনস্টেবল আরাফাত প্রমুখ।


এছাড়াও ভুক্তভোগী আরও অনেক পুলিশ সদস্য সংবাদ সম্মেলনে উপস্থিত ছিলেন।


শেয়ার করুন