১৫ মার্চ ২০২৫, শনিবার, ০৩:০৬:২২ অপরাহ্ন
গণ-অভ্যুত্থানে আহতদের সহায়তায় ধীরগতি
  • আপডেট করা হয়েছে : ১৫-০৩-২০২৫
গণ-অভ্যুত্থানে আহতদের সহায়তায় ধীরগতি

জুলাই গণ-অভ্যুত্থানে আহতদের আর্থিক সহায়তা প্রদানে ধীরগতি লক্ষ্য করা যাচ্ছে। অন্যদিকে আহতদের চিকিৎসা নিশ্চিতে করা ক্যাটাগরি নিয়ে অসন্তোষ সৃষ্টি হয়েছে।


কিছু ব্যক্তির উন্নত চিকিৎসা প্রয়োজন, তবে অর্থ সংকটে বিদেশ পাঠাতে বিলম্ব হচ্ছে। আর এখনো চূড়ান্ত হয়নি আহতদের তালিকা। তাদের পুনর্বাসন প্রক্রিয়া ও মাসিক ভাতার কার্যক্রম এখনো শুরু হয়নি। অনেকে বিভিন্ন হাসপাতালে চিকিৎসাধীন। তাদের ছুটি দিলেও পুনর্বাসন তালিকা থেকে বাদ পড়ার শঙ্কায় তারা হাসপাতাল ছেড়ে যাচ্ছেন না।


সংশ্লিষ্ট কর্মকর্তারা বলছেন, জনবল স্বল্পতা এবং তথ্য যাচাইয়ে বিলম্বের কারণে তালিকা প্রস্তুত ও পুনর্বাসনেও বিলম্ব হচ্ছে। ইতোমধ্যে হাসপাতালে চিকিৎসাধীন আহতদের বিশেষ বিবেচনায় স্মার্ট জাতীয় পরিচয়পত্র দেওয়া হয়েছে। এ মাসেই মিলবে জুলাই আহতদের মাসিক ভাতা। বিনামূল্যে চিকিৎসা দেওয়ার জন্য প্রস্তুত করা হচ্ছে হেলথ কার্ড। দ্রুত শুরু হবে পুনর্বাসন কার্যক্রম।


এমন পরিস্থিতিতে প্রতিবছরের মতো এবারও আজ (শনিবার) পালিত হচ্ছে বিশ্ব পঙ্গু দিবস। এবারের প্রতিপাদ্য হলো-‘ক্ষতি প্রতিরোধ ও পরিবর্তিত জীবন’। তবে সরকারি বা বেসরকারি পর্যায়ে দিবসটি খুব একটা গুরুত্বের সঙ্গে পালিত হয় না।


স্বাস্থ্য অধিদপ্তরের তথ্য বলছে, জুলাই আন্দোলনে আহত হয়ে বিভিন্ন হাসপাতালে এখনো ২৫০ জন চিকিৎসাধীন রয়েছেন। উন্নত চিকিৎসার জন্য দেশের বাইরে রয়েছেন আরও ৩০ জন। বিদেশ থেকে চিকিৎসা নিয়ে ফিরেছেন আটজন। দেশে চিকিৎসাধীনদের সবচেয়ে বেশি জাতীয় অর্থোপেডিক হাসপাতাল ও পুনর্বাসন প্রতিষ্ঠানে (নিটোর) ১০৬ জন। এবং জাতীয় চক্ষু বিজ্ঞান ইনস্টিটিউট ও হাসপাতালে ১২০ জন চিকিৎসাধীন রয়েছেন। এদের মধ্যে ২০ থেকে ৩০ শতাংশের অবস্থা গুরুতর।


চিকিৎসা সেবায় শ্রেণিকরণে অসন্তুষ্টি : আহতদের উন্নত চিকিৎসা নিশ্চিতে তিনটি ক্যাটাগরিতে ভাগ করা হয়েছে। গুরুতর আহতদের ‘এ’, মাঝারি আহতদের ‘বি’ ও কম ঝুঁকিপূর্ণদের ‘সি’ ভাগে ভাগ করে চিকিৎসা চলছে। তবে এসব ক্যাটাগরি নিয়ে অসন্তোষ রয়েছে আহতদের মধ্যে। তারা বলছেন, এই ক্যাটাগরি ত্রুটিপূর্ণ। শুক্রবার দুপুরে পঙ্গু হাসপাতালে কথা হয় আরাফাত হোসেনের সঙ্গে। তিনি বলেন, ‘এই ক্যাটাগরি নিয়ে একটা ঘোলাটে অবস্থা তৈরি হয়েছে। এক পা হারানোর পরেও আমাকে ‘বি’ ক্যাটাগরিতে রেখেছে। এটা সংশোধনের জন্য নতুন করে আবেদন করেছি। আমার পরিবারের আর্থিক অবস্থা শোচনীয়। কীভাবে বাকি জীবন চলব, সেই চিন্তায় ঘুমাতে পারি না। সুস্থ হয়ে ভবিষ্যতে গাড়ি চালাতে পারব বলে মনে হয় না।’


পঙ্গু হাসপাতালের একই ওয়ার্ডে চারজনকে দেখা গেল, প্রত্যেকের একটি করে পা কেটে ফেলেছেন চিকিৎসকরা। তারা গুলিবিদ্ধ হয়েছিলেন। আতিক হাসান নামে একজন বলেন, ‘আমি আহত হয়েছিলাম মিরপুর-১০ নম্বর গোল চত্বরে। ১৯ জুলাই গুলিবিদ্ধ হই এবং সেদিনই একটি বেসরকারি হাসপাতালে ভর্তি হই। প্রায় ৪ মাস ধরে পঙ্গু হাসপাতালে (নিটোর) অবস্থান করছি। এ পর্যন্ত কোনো তালিকায় আমার নাম আসেনি। যাদের অবস্থা বেশি জটিল, তাদের বিদেশে নিয়ে যাওয়া হচ্ছে না। এক্ষেত্রে প্রশাসন অবহেলা দেখাচ্ছে। অনেক সময় ভালোভাবে ফিজিওথেরাপি দেওয়া হয় না, প্রয়োজনীয় সেবাও দেওয়া হয় না। সঙ্গে রয়েছে সিন্ডিকেট। এসব কারণে ভালো সেবা পেতে সমস্যা হচ্ছে। হাসপাতালটির সূত্র বলছে, ছাত্র-জনতার আন্দোলনে আহত ৮৮৮ জনকে ভর্তি রেখে চিকিৎসা দেওয়া হয়েছে। তাদের মধ্যে ৬৯৬ জন গুলিতে আহত। ২৯২ জন বিভিন্নভাবে আহত। ২২ জনের পা বাঁচানো যায়নি। কয়েকজনের হাত কেটে ফেলতে হয়েছে। এদের মধ্যে আটজনের মৃত্যু হয়েছে। প্রতিষ্ঠানটির পরিচালক ডা. মো. আবুল কেনান বলেন, জুলাই আন্দোলনে আহত ১০৬ জন রোগী ভর্তি আছেন। জরুরি বিভাগ ও বহির্বিভাগে তাদের জন্য বিশেষ কক্ষ রয়েছে। আহতদের সর্বোত্তম চিকিৎসা দেওয়ার চেষ্টা করা হচ্ছে। তবে অনেকের অবস্থা গুরুতর। তাদের দীর্ঘমেয়াদি চিকিৎসা প্রয়োজন।


ছুটি দিলেও হাসপাতাল ছাড়ছেন না আহতরা : জাতীয় চক্ষু বিজ্ঞান ইনস্টিটিউট ও হাসপাতালে ১২০ জন চিকিৎসাধীন। হাসপাতালটিতে এ পর্যন্ত ১০০৩ জনের চিকিৎসা দেওয়া হয়েছে। ৫০৩ জনের চোখ নষ্ট হয়েছে। দুই চোখ নষ্ট হয়েছে ৪৫ জনের। আহতদের মধ্যে সুস্থ হওয়ায় মঙ্গলবার ৩২ জনকে ছুটি দেওয়া হয়েছে। তবে একজন ছাড়া কেউই হাসপাতাল ছেড়ে যাননি। নাম প্রকাশ না করে শর্তে জাতীয় চক্ষু বিজ্ঞানের একজন চিকিৎসক বলেন, আন্দোলনকারীদের পুনর্বাসনের প্রতিশ্রুতি দিয়েছে সরকার। এছাড়া বিনামূল্যে চিকিৎসা দেওয়ার জন্য হেলথ কার্ড প্রস্তুত হচ্ছে। সমাজসেবা অধিদপ্তর থেকে এককালীন আর্থিক অনুদানের কথা রয়েছে। এই কার্যক্রম এখনো শুরু হয়নি। 


আহতরা মনে করছেন, এখনই হাসপাতাল ছেড়ে গেলে তালিকা থেকে তারা বাদ পড়তে পারেন।


শেয়ার করুন