বান্ডিল বান্ডিল টাকা ছেড়ে স্বামীকে কারাগার থেকে ছাড়িয়ে আনার দম্ভ দেখানো ছোট সাজ্জাদের বেপরোয়া স্ত্রী তামান্না শারমিনকে গ্রেফতারের সিদ্ধান্ত নিয়েছে চট্টগ্রাম মেট্রোপলিটন পুলিশ (সিএমপি)।
ফেসবুক লাইভে এসে আইনকে বৃদ্ধাঙ্গুলি দেখানো এবং সন্ত্রাসী স্বামীকে আশ্রয়-প্রশ্রয় প্রদান ও সহযোগিতার অভিযোগে তাকে গ্রেফতারের এই সিদ্ধান্ত নেওয়া হয়। ইতোমধ্যে তার অবস্থান নিশ্চিত করতে কাজ শুরু করেছে আইনশৃঙ্খলা বাহিনী।
এদিকে তামান্না নিজেও লাইভে স্বীকার করেছেন তার স্বামী সাজ্জাদ সন্ত্রাসী। রাগের মাথায় ওসিকে গালমন্দ করেছিল সাজ্জাদ।
১৫ মার্চ রাতে ঢাকায় শপিংমলে ঘোরাঘুরি করার সময় সাজ্জাদকে গ্রেফতার করে তেজগাঁও থানা পুলিশ। এ সময় সাজ্জাদের সঙ্গে স্ত্রী তামান্নাও ছিলেন। কিন্তু সাদা পোশাকের পুলিশের উপস্থিতি টের পেয়ে তামান্না সটকে পড়েন। সাজ্জাদকে গ্রেফতারের পরপরই লাইভ করে আলোচনায় আসেন তামান্না। দেখান টাকার গরম। পাশাপাশি দেন হুমকিও। যারা তার স্বামীকে গ্রেফতার করেছে এবং করতে সহযোগিতা করেছে তাদের দেখে নেবেন বলেও জানিয়েছেন এই লাইভে।
জানা যায়, ১২ ডিসেম্বর সাজ্জাদকে ধরতে গিয়ে তামান্নাকে গ্রেফতার করে নিয়ে আসে পুলিশ। পরে ৬ জানুয়ারি তিনি জামিনে বের হন। এরপর বায়েজিদ বোস্তামী থানার ওসি আরিফুর রহমান, আরও দুই এসআই ও অন্যান্য কয়েকজনের বিরুদ্ধে মামলা করেন তামান্না। সেই মামলায় তিনি ওসির বিরুদ্ধে নিজের ভ্রূণহত্যার অভিযোগ করেন। এ নিয়ে লাইভেও আসেন তিনি। লাইভে তামান্না অভিযোগ করেন, তার স্বামীকে না পেয়ে বায়েজিদ বোস্তামী থানার ওসি আরিফুর তার পেটে লাথি মারলে রক্তক্ষরণ হয়ে তার সন্তান নষ্ট হয়ে যায়। এতে সাজ্জাদ ক্ষিপ্ত হয়ে যান।
বেপরোয়া তামান্না : তামান্নার পুরো নাম তামান্না আহমেদ। তিনি চট্টগ্রাম নগরীর এমইএস কলেজে লেখাপড়া করেন। সেখানে পড়ালেখাকালীন নিজেও ছাত্রলীগের রাজনীতিতে যুক্ত ছিলেন। একেকবার একেক যুবককে কথিত বিয়ে করার অভিযোগ আছে তার বিরুদ্ধে। বিয়ের পর ওই যুবকদের কাছ থেকে টাকা-পয়সা হাতিয়ে সটকে পড়তেন তামান্না। সাজ্জাদও তার তেমনই এক স্বামী। বর্তমানেও তামান্নার আগের ঘরের এক সন্তান রয়েছে।
চট্টগ্রামের বোয়ালখালী উপজেলায় তাদের বাড়ি। ছেলেদের মোটরসাইকেল চালানো ও কথাবার্তায় কঠোরতার জন্য তিনি লেডি ডন পরিচিতি। সাজ্জাদকে বিয়ে করার পর দুজনই বেপরোয়া জীবনযাপন শুরু করেন।
পুলিশ জানায়, গ্রেফতারের পর সাজ্জাদকে চান্দগাঁও থানার মামলায় জিজ্ঞাসাবাদের জন্য রিমান্ডের আবেদন করা হলে আদালত ৭ দিনের রিমান্ড মঞ্জুর করেন। এরপর সিএমপির মুনসুরাবাদ ডিবি কার্যালয়ে নিয়ে তাকে জিজ্ঞাসাবাদ করা হচ্ছে বলে জানা গেছে।
সিএমপির একাধিক কর্মকর্তাদের সঙ্গে কথা বলে জানা যায়, ডিবি কার্যালয়ে থাকা সাজ্জাদকে সিএমপির ঊর্ধ্বতন কর্মকর্তারা জিজ্ঞাসাবাদ করলেও কিছুতেই সে মুখ খুলছে না। সেখানে বায়েজিদ বোস্তামী থানা পুলিশও তাকে জিজ্ঞাসাবাদ করেছে।
মঙ্গলবার সন্ধ্যা ৭টা পর্যন্ত তার কাছ থেকে উল্লেখযোগ্য কোনো তথ্য পাওয়া যায়নি বলে পুলিশের পক্ষ থেকে জানানো হয়েছে। সাজ্জাদের বিরুদ্ধে হত্যা-চাঁদাবাজিসহ ১৭টি মামলা রয়েছে। এর আগে তাকে ধরতে ৩০ জানুয়ারি পুরস্কার ঘোষণা করেছিলেন সিএমপি কমিশনার হাসিব আজিজ। এর আগের দিন ওসি আরিফুরকে ফেসবুক লাইভে এসে হুমকি দিয়েছিলেন সাজ্জাদ।
চট্টগ্রাম মেট্রোপলিটন পুলিশ কমিশনার হাসিব আজিজ বলেন, সাজ্জাদকে জিজ্ঞাসাবাদে এখনো উল্লেখযোগ্য কোনো তথ্য পাওয়া যায়নি। তার স্ত্রীকেও গ্রেফতার করা হবে।