চার দিনের রাষ্ট্রীয় সফরে জাপানের উদ্দেশে রওনা হয়েছেন প্রধান উপদেষ্টা মুহাম্মদ ইউনূস। মঙ্গলবার রাত সোয়া ২টার কিছু আগে শাহজালাল আন্তর্জাতিক বিমানবন্দর থেকে তাকে বহনকারী উড়োজাহাজ ঢাকা ছেড়ে গেছে বলে জানিয়েছে প্রধান উপদেষ্টার দপ্তর। ক্যাথে প্যাসিফিক এয়ারলাইন্সের একটি ফ্লাইটে হংকং হয়ে তিনি টোকিওতে পৌঁছাবেন।
জাপানের স্থানীয় সময় বুধবার দুপুর আড়াইটার দিকে তার নারিতা আন্তর্জাতিক বিমানবন্দরে পৌঁছানোর কথা বলে বাসসের খবরে বলা হয়েছে।
এ সফরে তিনি ৩০তম নিক্কেই ফোরামে যোগ দেবেন এবং দ্বিপক্ষীয় সহযোগিতা জোরদারের লক্ষ্যে জাপানের প্রধানমন্ত্রী শিগেরু ইশিবার সঙ্গে বৈঠক করবেন।
পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয় বলছে, সফরে বিনিয়োগ, জ্বালানি ও প্রযুক্তি খাতে সহযোগিতার সাতটি সমঝোতা স্মারক সই হওয়ার কথা।
বাজেট সহায়তা এবং জয়দেবপুর-ঈশ্বরদী রেলপথকে ডুয়েল-গেজ ডাবল-ট্র্যাকে উন্নীত করার বিষয়ে ‘নোট বিনিময়’ হওয়ার সম্ভাবনাও রয়েছে।
সফরসূচি অনুযায়ী, টোকিওতে পৌঁছানোর পর প্রধান উপদেষ্টা বুধবার বিকাল ৫টায় জাপান-বাংলাদেশ পার্লামেন্টারি ফ্রেন্ডশিপ লীগের প্রেসিডেন্ট তারো আসোর সঙ্গে সৌজন্য সাক্ষাৎ করবেন।
সন্ধ্যায় তিনি যোগ দেবেন নিপ্পন ফাউন্ডেশনের চেয়ারম্যান ইয়োহেই সাসাকাওয়ার নৈশভোজে। এরপর জাপানের বিশিষ্ট ব্যক্তিদের সঙ্গে তার মতবিনিময় সভা হওয়ার কথা রয়েছে।
নিক্কেই ফোরামের আগে বৃহস্পতিবার নিক্কেই ইনকরপোরেটেডের ঊর্ধ্বতন নির্বাহীরা প্রধান উপদেষ্টার সঙ্গে সৌজন্য সাক্ষাৎ করবেন।
এরপর ৩০তম নিক্কেই ফোরামের উদ্বোধনী অধিবেশনে মূল বক্তৃতা দেবেন প্রধান উপদেষ্টা। সেখানে তিনি ‘অশান্ত বিশ্বে এশিয়ার চ্যালেঞ্জ’ নিয়ে কথা বলবেন।
ফোরামে লাওস ও পালাউয়ের প্রেসিডেন্ট, জাপান ও কম্বোডিয়ার প্রধানমন্ত্রী, ভিয়েতনাম ও সিঙ্গাপুরের উপ-প্রধানমন্ত্রী, মন্ত্রী, নীতি বিশেষজ্ঞ, শিক্ষাবিদ ও আন্তর্জাতিক সংস্থার প্রতিনিধিরা অংশগ্রহণ করবেন।
এদিন প্রধান উপদেষ্টা টোকিওতে বাংলাদেশ দূতাবাসের আয়োজনে মানবসম্পদ উন্নয়ন বিষয়ক সেমিনারে যোগ দেবেন। সেখানে তিনি জাপানের দক্ষ কর্মীবাহিনীর চাহিদা পূরণে বাংলাদেশের ক্রমবর্ধমান সম্ভাবনা তুলে ধরে বিশেষ ভাষণ দেবেন। অধ্যাপক ইউনূস জাপানের গুরুত্বপূর্ণ অংশীদারদের সঙ্গেও বৈঠক করবেন, যাদের মধ্যে জাইকার প্রেসিডেন্ট তানাকা আকিহিকোও থাকবেন। সেখানে বাংলাদেশে চলমান উন্নয়ন সহযোগিতা এবং জাইকার অর্থায়নে পরিচালিত প্রকল্পগুলো নিয়ে পর্যালোচনা হবে।
তিনি জাপানের শীর্ষস্থানীয় সংবাদমাধ্যম- নিক্কেই, এনএইচকে, আসাহি শিম্বুন, আসাহি টিভি ও নিপ্পন টিভিকে সাক্ষাৎকারও দেবেন।
২৯ মে সন্ধ্যায় তিনি সম্মেলনে অংশগ্রহণকারী বিশিষ্ট বক্তাদের সম্মানে নিক্কেই ফোরাম আয়োজিত নৈশভোজে যোগ দেবেন।
পরের দিন সকালে টোকিওতে প্রধানমন্ত্রীর কার্যালয়ে প্রধান উপদেষ্টা অধ্যাপক ড. মুহাম্মদ ইউনূস ও জাপানের প্রধানমন্ত্রী শিগেরু ইশিবার মধ্যে দ্বিপক্ষীয় বৈঠক হবে।
বৈঠকের আগে লাল গালিচা সংবর্ধনা ও গার্ড অব অনার দেওয়া হবে অধ্যাপক ইউনূসকে।
বৈঠকে বাণিজ্য ও বিনিয়োগ, অবকাঠামো উন্নয়ন, কৃষি সহযোগিতা, মানবসম্পদ ও রোহিঙ্গা সংকটসহ কৌশলগত বিষয় বিস্তৃত আলোচনা হবে বলে পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয় তরফে জানানো হয়েছে।
এদিন ড. ইউনূস দ্বিপক্ষীয় বাণিজ্য ও বিনিয়োগ বৃদ্ধির বিষয়ে জেট্রোর প্রেসিডেন্ট কিমুরা ফুকুনারির সঙ্গে বৈঠক করবেন।
তিনি জাপানি বিনিয়োগকারীদের সঙ্গে গোলটেবিল বৈঠকে অংশগ্রহণের পাশাপাশি ‘বাংলাদেশ বিজনেস সেমিনারে’ যোগ দেবেন।
সেখানে তিনি বিশ্বব্যাপী সিইও, সামাজিক ব্যবসা সার্কেলের সদস্য ও উভয় দেশের তরুণ পেশাদারদের সঙ্গে মতবিনিময় করবেন।
সামাজিক উদ্ভাবন ও বৈশ্বিক উন্নয়নে অবদানের স্বীকৃতি হিসেবে সোকা বিশ্ববিদ্যালয় বিকালে অধ্যাপক ড. মুহাম্মদ ইউনূসকে সম্মানসূচক ডক্টরেট ডিগ্রি দেবে। সেখানে তিনি দর্শক-শ্রোতাদের উদ্দেশে ভাষণ দেবেন।
সন্ধ্যায় প্রধান উপদেষ্টা টোকিওতে বাংলাদেশ দূতাবাস আয়োজিত একটি কমিউনিটি সংবর্ধনা অনুষ্ঠানে যোগ দেবেন। সেখানে তিনি প্রবাসী বাংলাদেশিদের সঙ্গে কথা বলবেন। এরপর তিনি বাংলাদেশ হাউসে জাপানে নিযুক্ত বাংলাদেশের রাষ্ট্রদূত আয়োজিত নৈশভোজে অংশ নেবেন।
প্রধান উপদেষ্টা শনিবার সকালে সিঙ্গাপুর এয়ারলাইন্সের একটি ফ্লাইটে টোকিও ত্যাগ করবেন এবং সিঙ্গাপুর হয়ে ওই রাতেই তার ঢাকায় পৌঁছানোর কথা রয়েছে।