২৫ জুন ২০২৫, বুধবার, ০৪:১৩:০১ অপরাহ্ন
ইরানের পারমাণবিক কর্মসূচি ধ্বংস হয়নি : পেন্টাগনের বিশ্লেষণ
  • আপডেট করা হয়েছে : ২৫-০৬-২০২৫
ইরানের পারমাণবিক কর্মসূচি ধ্বংস হয়নি : পেন্টাগনের বিশ্লেষণ

যুক্তরাষ্ট্রের পেন্টাগন সম্প্রতি প্রকাশিত এক মূল্যায়নে জানিয়েছে, ইরানের পারমাণবিক স্থাপনায় মার্কিন বিমান হামলায় দেশটির পারমাণবিক কর্মসূচি পুরোপুরি ধ্বংস হয়নি। এই হামলা শুধু ইরানের পারমাণবিক কার্যক্রম কয়েক মাস পিছিয়ে দিয়েছে বলে জানিয়েছে পেন্টাগন। গত শনিবার, যুক্তরাষ্ট্র অত্যাধুনিক বি-২ স্টিলথ বোমারু বিমান ব্যবহার করে ইরানের গুরুত্বপূর্ণ পারমাণবিক কেন্দ্রে হামলা চালায়। মার্কিন প্রেসিডেন্ট ডোনাল্ড ট্রাম্প তখন একে ‘অত্যন্ত সফল’ বলে অভিহিত করেছিলেন।


তবে মাত্র তিনদিনের মধ্যেই পেন্টাগনের এই নতুন মূল্যায়ন জানায় যে, হামলার পর পরিস্থিতি এতটা নাটকীয় নয়।

পেন্টাগনের গোয়েন্দা শাখা ডিফেন্স ইন্টেলিজেন্স এজেন্সি (ডিআইএ) এই প্রতিবেদন তৈরি করেছে, যেখানে বলা হয়েছে, ইরানের ইউরেনিয়াম সমৃদ্ধকরণের মজুদ এবং গুরুত্বপূর্ণ স্থাপনাগুলো সম্পূর্ণভাবে ধ্বংস হয়নি। মূলত, হামলার ফলে ইরানের সেন্ট্রিফিউজগুলো অনেকটাই অক্ষত রয়েছে এবং ক্ষয়ক্ষতি সীমাবদ্ধ ছিল স্থলভাগের অবকাঠামো পর্যন্ত।


গোয়েন্দা সূত্রের বরাতে সিবিএস নিউজ জানিয়েছে, এই হামলা শুধু কয়েক মাসের জন্য ইরানের পারমাণবিক কর্মসূচি পিছিয়ে দিয়েছে, তবে এটি পুরোপুরি ধ্বংস করতে সক্ষম হয়নি।


সেইসঙ্গে ইরান পূর্ব থেকেই কিছু ইউরেনিয়াম মজুদ স্থানান্তরিত করেছিল, ফলে হামলার পরও বড় ধরনের ক্ষতি হয়নি।

হোয়াইট হাউস অবশ্য পেন্টাগনের এই মূল্যায়নকে ‘সম্পূর্ণ ভুল’ বলে আখ্যা দিয়েছে এবং দাবি করেছে, এটি প্রেসিডেন্ট ট্রাম্পকে হেয় করার উদ্দেশ্যে করা হচ্ছে। ট্রাম্প তার ট্রুথ সোশ্যাল মিডিয়াতে পোস্ট করে জানিয়েছেন, সিএনএন ও নিউইয়র্ক টাইমসের প্রতিবেদনে যে দাবি করা হয়েছে, তা মিথ্যা এবং এটি তার প্রশাসনের সফল অভিযানকে ছোট করার চেষ্টা।


পেন্টাগন জানায়, ইরানের ফোরদো, নাতাঞ্জ ও ইসফাহান- এই তিনটি পারমাণবিক স্থাপনায় ৩০ হাজার পাউন্ড ওজনের ‘বাংকার বাস্টার’ বোমা নিক্ষেপ করা হয়েছিল, যা ৬০ ফুট কংক্রিট বা ২০০ ফুট মাটি ভেদ করতে সক্ষম।


এই হামলার মাধ্যমে ইরানের পারমাণবিক স্থাপনাগুলোতে গুরুতর ক্ষতি হওয়ার কথা ছিল, কিন্তু স্যাটেলাইট চিত্র এবং পরবর্তী গোয়েন্দা তথ্য নিশ্চিত করেছে যে ভূগর্ভস্থ স্থাপনাগুলোর ক্ষতি ছিল সীমিত।

বিশেষ দূত স্টিভ উইটকফের মতে, ইরানে মার্কিন হামলার পর যেসব গোয়েন্দা তথ্য প্রকাশিত হয়েছে তা রাষ্ট্রদ্রোহিতার শামিল। তিনি বলেছেন, ‘এটি অত্যন্ত নিন্দনীয়, রাষ্ট্রদ্রোহিতার মতো এবং এটি অবশ্যই তদন্ত হওয়া উচিত।’ ট্রাম্পও এই মন্তব্যের সমর্থন জানিয়ে বলেছেন, ‘এটা হাস্যকর যে কেউ বলছে, হামলায় আমাদের লক্ষ্য পূর্ণ হয়নি।’


ইরানি কর্মকর্তারা অবশ্য দাবি করেছেন, হামলার পূর্বেই বেশিরভাগ গুরুত্বপূর্ণ উপকরণ সরিয়ে নেওয়া হয়েছিল এবং বেশ কিছু স্থাপনা খালি ছিল, ফলে বড় ধরনের ক্ষতি হয়নি।


তবে, মার্কিন প্রতিরক্ষামন্ত্রী পিট হেগসেথ এবং ইসরায়েলের প্রধানমন্ত্রী বেনিয়ামিন নেতানিয়াহু এই হামলাকে সফল বলে অভিহিত করেছেন।

ইসরায়েল মনে করে, ইরানের সমৃদ্ধ ইউরেনিয়ামের বেশিরভাগ অংশ এখন ধ্বংসস্তূপের নিচে চাপা পড়ে আছে। ইন্সটিটিউট ফর সায়েন্স অ্যান্ড ইন্টারন্যাশনাল সিকিউরিটির সভাপতি ডেভিড অলব্রাইট বলেন, ‘ইরান যদি আবারও তাদের পারমাণবিক কর্মসূচি পুনরায় শুরু করতে চায়, তবে তা করতে গিয়ে আরো অনেক সময়, শক্তি এবং বিনিয়োগ প্রয়োজন হবে।’


মার্কিন হামলার পর ইরান পাল্টা হামলা চালিয়ে কাতারের আল-উদেইদ বিমানঘাঁটিতে ক্ষেপণাস্ত্র নিক্ষেপ করে, তবে সেগুলোর বেশিরভাগই প্রতিহত হয় এবং কোনো হতাহতের খবর পাওয়া যায়নি। শেষে, ট্রাম্প ইসরায়েল ও ইরানকে যুদ্ধবিরতিতে সম্মত হওয়ার আহ্বান জানান এবং উভয় দেশই পরে যুদ্ধবিরতিতে পৌঁছেছে বলে ঘোষণা দেয়।


সূত্র : বিবিসি বাংলা


শেয়ার করুন