২১ জুলাই ২০২৫, সোমবার, ০৩:১৬:৪৭ পূর্বাহ্ন
চুরি ঠেকাতে অসহায় রাসিক ,গায়েব হচ্ছে ড্রেনের ঢাকনা
স্টাফ রিপোর্টার :
  • আপডেট করা হয়েছে : ২০-০৭-২০২৫
চুরি ঠেকাতে অসহায় রাসিক ,গায়েব হচ্ছে ড্রেনের ঢাকনা

রাজশাহী সিটি করপোরেশনের নির্বাচিত পরিষদ নেই প্রায় এক বছর। গত ৫ আগস্ট সরকার পতনের পর ১৬ আগস্ট রাজশাহীর সাবেক মেয়র এএইচএম খায়রুজ্জামান লিটনকে অপসারণ করেন। এর মাসখানেক পর অপসারণ করা হয় রাসিকের ৩৫ জন কাউন্সিলরকে। রাজশাহীর বিভাগীয় কমিশনার পদাধিকার বলে বর্তমানে রাজশাহী সিটি করপোরেশনের প্রশাসকের দায়িত্ব পালন করছেন।

অন্যদিকে বিভিন্ন দপ্তরের সরকারি কর্মকর্তারা পালন করছেন বিভিন্ন ওয়ার্ডের কাউন্সিলের দায়িত্ব। তবে নির্বাচিত পরিষদ না থাকায় রাজশাহী সিটি করপোরেশনের সেবা কার্যক্রমসহ বিভিন্ন কার্য পরিচালনায় এক ধরনের অচলাবস্থা চলছে। বিশেষ করে অবকাঠামো উন্নয়ন সংস্কার ছাড়াও পরিষেবাখাত নির্বাহের গতি মন্থর। এ নিয়ে নাগরিক ভোগান্তির অভিযোগ হচ্ছে হরহামেশাই। বিশেষ করে রাজশাহী নগরীতে ফুটপাত ও ড্রেনের ঢাকনা বা স্লাব চুরির হিড়িক পড়েছে। এর ফলে পথচলতি হাজারো মানুষ ভোগান্তির শিকার হচ্ছেন।

ভুক্তভোগী নগরবাসীর অভিযোগ, সুষ্ঠু তদারকির অভাবে নগরীর ফুটপাতগুলো থেকে হরহামেশাই চুরি হচ্ছে ড্রেনের ঢাকনা বা স্লাব। চোরেরা গত প্রায় এক বছরে নগরীর বিভিন্ন ফুটপাত ও ড্রেনের ওপর বসানো অধিকাংশ ঢাকনা চুরি করে নিয়ে গেছে। আরও অভিযোগ ড্রেন ও ফুটপাতের ঢাকনা চুরি রোধে সিটি করপোরেশনের দৃশ্যমান কোনো তৎপরতা নেই। সম্প্রতি রাজশাহী কলেজের হিন্দু ছাত্রাবাসের সামনে থেকে বরেন্দ্র জাদুঘর মোড় পর্যন্ত ২২০ মিটার ড্রেন ও ফুটপাতের ওপরের ঢাকনাগুলো রাতের আঁধারে গায়েব হয়ে গেছে।

রাজশাহী কলেজের শিক্ষার্থী সিফাত আকরাম বলেন, রাজশাহী কলেজের সামনে সড়কের দুই ধারে ড্রেনের ওপর দিয়ে দৃষ্টিনন্দন ফুটপাত দিয়ে হাজারো শিক্ষার্থী প্রতিদিন চলাচল করেন। সড়কটির উত্তরে রয়েছে রাজশাহী কলেজের ছাত্রী হোস্টেল। কলেজসংলগ্ন এলাকায় রয়েছে প্রাচীন শিক্ষাপ্রতিষ্ঠান কলেজিয়েট স্কুল। অভিভাবকরা এ ফুটপাত দিয়ে হেঁটে শিশুদের স্কুলে নিয়ে যান। সম্প্রতি রাজশাহী সিটি করপোরেশনের পরিচ্ছন্নতা বিভাগের কর্মীরা ফুটপাতের ওপরের ঢাকনাগুলো তুলে ড্রেনের ময়লা পরিষ্কার করেছিলেন। ঢাকনাগুলো পুনরায় না বসিয়ে কর্মীরা চলে যান। সেই রাতেই ঢাকনাগুলো চুরি হয়ে যায়। এক সপ্তাহ হলেও সিটি করপোরেশন নতুন ঢাকনা বসাতে পারেনি।

প্রায় ১০ লাখ জনঅধ্যুষিত রাজশাহী মহানগরীতে ছোট-বড় ৩৫৭ কিলোমিটার পাকা সড়ক রয়েছে। ড্রেন রয়েছে ২৩৬ কিলোমিটার। ড্রেনগুলোর ওপর দিয়ে নির্মাণ করা হয়েছে ১২০ কিলোমিটার ফুটপাত। জনসাধারণের চলাচলের সুবিধার্থে সড়কের দুই পাশে টাইলস বসানো প্রশস্ত ফুটপাথ নির্মাণ করা হয়েছিল ২০২২-২৩ অর্থবছরে। এসব ড্রেনের ময়লা পরিষ্কারের জন্য স্বল্প দূরত্বে বসানো হয় কংক্রিটের ঢাকনা। নগরীর বিভিন্ন ফুটপাতে এ ধরনের সাড়ে ছয় হাজারের বেশি ঢাকনা বসানো হয়েছিল। এসব ফুটপাত নির্মাণে বিপুল পরিমাণ অর্থ ব্যয় হয়েছিল ওই সময়। কিন্তু সুষ্ঠু তদারকির অভাবে প্রতিদিনই কোনো না কোনো সড়কের ফুটপাথ ও ড্রেনের ওপর বসানো কংক্রিটের ঢাকনাগুলো গায়েব হয়ে যাচ্ছে।

সম্প্রতি সরেজমিন দেখা গেছে, নগরীর বিলসিমলা মোড় থেকে সিটি হার্ট পর্যন্ত সাড়ে ৪ কিলোমিটার সড়কটির দুই পাশে ড্রেন ও ফুটপাতের ওপর বসানো আড়াই শতাধিক ঢাকনা চুরি হয়ে গেছে। বছর চারেক আগে বিপুল পরিমাণ অর্থ ব্যয়ে চারলেনে উন্নীত এই সড়কটির দুই পাশের ড্রেনের ওপর প্রশস্ত ও টাইসল বসানো ফুটপাত নির্মাণ করে সিটি করপোরেশন। বর্তমানে সড়কটির ফুটপাতের ঢাকনাগুলোর অধিকাংশই নেই। চোরেরা দিনের বেলায়ও এসব ঢাকনা তুলে নিয়ে গেছে বলে অভিযোগ করেছেন তেরখাদিয়া এলাকার ব্যবসায়ী সজীব হোসেন মুন্না। তিনি বলেন, সকাল-সন্ধ্যায় সড়কটির প্রশস্ত ফুটপাত দিয়ে এলাকার প্রবীণ ব্যক্তিরা হাঁটাহাঁটি করতেন। ঢাকনা চুরি হওয়ায় প্রবীণরা হাঁটতে পারছেন না। একটু অসতর্ক হলেই খোলা হয়ে থাকা ড্রেনের ভেতরে পড়ে যাবেন। এলাকার বাসিন্দারা আরও বলেন, ঢাকনাগুলো চুরি রোধে করপোরেশনের কোনো উদ্যোগ দেখা যায় না। রাসিকের কর্মীরা মাসে একবারও তদারক করতে যান না।

নগরীর তালাইমারী মোড় থেকে কাটাখালী পর্যন্ত প্রায় সাড়ে ৫ কিলোমিটার সড়কটি গত বছর ছয়লেনে উন্নীত করাসহ দুই পাশে সুবিস্তৃত ড্রেন ও ড্রেনের ওপর ফুটপাত নির্মাণ করা হয়। এই প্রকল্পে খরচ হয়েছে প্রায় ৯৩ কোটি টাকা।

ড্রেন ও ফুটপাতের ওপর বসানো কংক্রিটের এসব ঢাকনা তৈরি করা হয়েছে সরু রড ও সিমেন্ট দিয়ে। একশ্রেণির মাদকাসক্ত ব্যক্তি ছাড়াও পেশাদার চোরেরা এসব ঢাকনা চুরি করার পর ভেঙে আড়াই কেজির মতো লোহার রড পেয়ে থাকে। এই রডগুলো তারা ভাঙারির দোকানে বিক্রি করেন। রাজশাহী সিটি করপোরেশন ঢাকনা চুরির বিষয়ে খোঁজখবর রাখলেও চুরি ঠেকাতে কোনো ব্যবস্থা নেয়নি।

রাজশাহী সিটি করপোরেশনের পরিচ্ছন্নতা বিভাগের একজন কর্মী বলেন, আগে এসব তদারকি করতেন এলাকার কাউন্সিলররা। কিন্তু গত এক বছরে রাসিকের কোনো ওয়ার্ডে কাউন্সিলর নেই। ফলে নগরীতে ছড়িয়ে ছিটিয়ে থাকা রাসিকের বিভিন্ন অবকাঠামো এভাবেই নষ্ট হচ্ছে।

রাসিকের প্রধান নির্বাহী কর্মকর্তা রেজাউল করিম বলেন, ড্রেন ও ফুটপাতের ওপর বসানো ঢাকনা চুরির ঘটনা ঘটছে। আমরা প্রায়ই অভিযোগ পেয়ে থাকি। ড্রেন ও ফুটপাতের ওপর নতুন করে ঢাকনা পুনরায় বসানো হয়। কিন্তু কয়েকদিন পরে সেগুলোও চুরি হয়ে যাচ্ছে। এসব নিয়ে রাজশাহী সিটি করপোরেশন উদ্বিগ্ন। চুরির পর রাসিকের পক্ষে থানায় অভিযোগ করা হয়। কিন্তু চোরেরা ধরা পড়ে না। করপোরেশনের জনবল দিয়ে এসব চুরি ঠেকানোও যাচ্ছে না। তবে সচেতন নগরবাসী যদি এই দিকে একটু নজর দেন তা হলে হয়তো চোরেরা এভাবে ঢাকনা নিয়ে যেতে পারবে না।

শেয়ার করুন