২০ নভেম্বর ২০২৫, বৃহস্পতিবার, ০৪:০৮:৫৫ অপরাহ্ন
ব্রাহ্মণবাড়িয়া-৫ আসনে বিএনপির মনোনয়ন নিয়ে ‘গৃহবিবাদ’ তুঙ্গে!
  • আপডেট করা হয়েছে : ২০-১১-২০২৫
ব্রাহ্মণবাড়িয়া-৫ আসনে বিএনপির মনোনয়ন নিয়ে ‘গৃহবিবাদ’ তুঙ্গে!

ব্রাহ্মণবাড়িয়া-৫ (নবীনগর) আসনে প্রাথমিক মনোনয়ন ঘোষণার পর থেকে বিবদমান স্থানীয় বিএনপিতে গৃহবিবাদ এখন তুঙ্গে। সম্প্রতি কেন্দ্রীয় বিএনপি থেকে এ আসনে প্রার্থীর নাম ঘোষণা করার পর পরই এখানকার বহুধা বিভক্ত স্থানীয় নেতাকর্মী ও সমর্থকদের মধ্যে থাকা বিভাজন যেন আরো সুস্পষ্ট হয়ে ওঠে। বিশেষ করে বিএনপি মনোনীত প্রার্থী অ্যাড. এম এ মান্নানের মনোনয়ন বাতিলের দাবিতে গত দুই সপ্তাহে বিভক্ত বিএনপির একটি অংশের পক্ষ থেকে একাধিক বিক্ষোভ, সমাবেশ ও মানববন্ধন পালিত হয়।


সবশেষ বুধবার (১৯ নভেম্বর) নবীনগর হাইস্কুল মাঠে অনুষ্ঠিত জনসমাবেশ থেকে দলীয় মনোনয়ন বঞ্চিত ৭ জন ‘হেভিওয়েট নেতার’ আক্রমণাত্মক ও উসকানিমূলক বক্তব্য প্রদানের পর মনোনয়ন নিয়ে উপজেলা বিএনপির ‘গৃহবিবাদ’ এখন ভয়ানক আকার ধারণ করেছে।


এদিকে আগামী ২২ নভেম্বর মনোনয়নপ্রাপ্ত এম এ মান্নানের পক্ষে অনুষ্ঠেয় পাল্টা আরেকটি জনসমাবেশের পর বিএনপির এই বিভাজন কোন পর্যায়ে যায়, এ নিয়েই এখন বিভিন্ন মহলে ব্যাপক আলোচনা-সমালোচনা চলছে।


জানা গেছে, গত ৩ নভেম্বর বিএনপির মহাসচিব মির্জা ফখরুল ইসলাম আলমগীর  ব্রাহ্মণবাড়িয়া-৫ (নবীনগর) আসনসহ সারাদেশের ২৩৭টি সংসদীয় আসনে ধানের শীষ প্রতীকে প্রার্থীদের প্রাথমিক নামের তালিকা প্রকাশ করেন।


সেই তালিকায় ব্রাহ্মণবাড়িয়া-৫ (নবীনগর) আসনে মনোনয়ন পান জেলা বিএনপির সাবেক আহ্বায়ক ও নবীনগর উপজেলা বিএনপির ৩ বারের সভাপতি অ্যাড. এম এ মান্নান।


স্থানীয় নেতারা জানান, ওই ঘোষণার পর থেকেই দলীয় মনোনয়ন বঞ্চিত নেতাদের মধ্যে তীব্র ক্ষোভ ও অসন্তোষ দেখা দেয়।


এরপরই মনোনয়ন বঞ্চিত নেতা জেলা বিএনপির অর্থ সম্পাদক কাজী নাজমুল হোসেন তাপসের অনুসারীরা মনোনয়নটি বাতিলের দাবিতে একাধিক কর্মসূচি করে। কিন্তু এখন পর্যন্ত এম এ মান্নানের মনোনয়ন বাতিল না হওয়ায়, সবশেষে  এ আসনে দলীয় মনোনয়ন বঞ্চিত বিএনপির ৭ জন প্রার্থী এম এ মান্নানের বিরুদ্ধে ‘একাট্টা’ হয়ে বুধবার (১৮ নভেম্বর) একমঞ্চে আবির্ভূত হন।


মনোনয়ন বঞ্চিত এই ৭ নেতা হলেন কেন্দ্রীয় নির্বাহী কমিটির সদস্য ও জেলা বিএনপির উপদেষ্টা তকদির হোসেন মো. জসিম, কেন্দ্রীয় বিএনপির সদস্য ও জেলা বিএনপির উপদেষ্টা সায়েদুল হক সাঈদ, কেন্দ্রীয় নির্বাহী কমিটির সদস্য সালাহ উদ্দিন ভূঁইয়া শিশির, জেলা বিএনপির অর্থবিষয়ক সম্পাদক কাজী নাজমুল হোসেন তাপস, কেন্দ্রীয় কৃষকদলের সহ-সাধারণ সম্পাদক কেএম মামুন অর রশিদ, ছাত্রদল কেন্দ্রীয় কমিটির সাবেক সহ-সাধারণ সম্পাদক অ্যাড. রাজিব আহসান চৌধুরী পাপ্পু ও সাবেক উপজেলা ভাইস চেয়ারম্যান ও নবীনগর বিএনপির সাধারণ সম্পাদক নাজমুল করিম।


বুধবারের জনসমাবেশে এই ৭ নেতা একমঞ্চে দাঁড়িয়ে মনোনয়ন পাওয়া এম এ মান্নানকে নিয়ে সমালোচনা ও কটূক্তি করেন।


বক্তারা অভিযোগ করেন, এম এ মান্নান গত ১৭ বছর শেখ হাসিনার আমলে মাঠের রাজনীতিতে কখনই সক্রিয় ছিলেন না। তাই তার মনোনয়ন বাতিল করে মনোনয়ন বঞ্চিত ৭ ‘হেভিওয়েট’ নেতাদের মধ্য থেকে যেকোনো একজনকে দলীয় প্রার্থী হিসেবে ঘোষণা দেওয়ার জোর দাবি করছি।


এ বিষয়ে মনোনয়ন বঞ্চিত বিএনপির কেন্দ্রীয় কমিটির সদস্য সায়েদুল হক সাঈদ কালের কণ্ঠকে বলেন, প্রাথমিকভাবে ঘোষিত প্রার্থী মান্নান সাহেবের প্রার্থীতা বহাল থাকলে, তিনি কোনোভাবেই বিএনপিকে ঐক্যবদ্ধ করে আদৌ নির্বাচনে জয়লাভ করতে পারবেন না৷ এমনকি, তিনি জামানতও হারাতে পারেন। তাই আমরা এই প্রার্থী পরিবর্তনের জন্য জোর দাবি করছি।


আরেক মনোনয়নবঞ্চিত কেন্দ্রীয় বিএনপির সদস্য তকদীর হোসেন মো. জসীম বলেন, ঘোষিত প্রার্থী মান্নানের বিরুদ্ধে প্রয়োজনে প্রতিরোধ গড়ে তুলতে হবে।


আগামী ২২ নভেম্বর যেন তিনি (মান্নান) কোনোভাবেই জনসমাবেশ করতে না পারে, সেই ব্যবস্থাও করতে হবে।

এ বিষয়ে মনোনয়ন পাওয়া অ্যাড. এম এ মান্নান বলেন, আগামী ২২ নভেম্বরের জনসমাবেশের পর আমার বিএনপির অভিমানী ভাইদের এসব দাবি-দাওয়া আর থাকবে না,  ইনশাআল্লাহ। আমার বিশ্বাস, তারা আজ যেমন একমঞ্চে বিএনপির ৩১ দফা নিয়ে কথা বলেছেন, ২২ তারিখের পর এরা সবাই ধানের শীষ প্রতীকের পক্ষে কথা বলে আমার পক্ষে ঐক্যবদ্ধ হয়ে মাঠে নামবেন এবং আমার নেতা তারেক রহমানের মনোনীত প্রার্থীর বিজয় শতভাগ সুনিশ্চিত করবেন।


শেয়ার করুন