২১ নভেম্বর ২০২৪, বৃহস্পতিবার, ০৯:০৬:৩১ অপরাহ্ন
সাকিবের ৫ উইকেট, ৫০৬ রানে অলআউট শ্রীলঙ্কা
  • আপডেট করা হয়েছে : ২৬-০৫-২০২২
সাকিবের ৫ উইকেট, ৫০৬ রানে অলআউট শ্রীলঙ্কা

অ্যাঞ্জেলো ম্যাথিউজ ও দিনেশ চান্দিমালের জোড়া সেঞ্চুরিতে ভীষণ বিপদে ছিল বাংলাদেশ। দিনের প্রথম দুই সেশন নির্বিঘ্নে কাটিয়ে দিয়েছিলেন এ দুই অভিজ্ঞ লঙ্কান ব্যাটার। সেখান থেকে শেষ সেশনে দারুণভাবে ঘুরে দাঁড়িয়েছে টাইগাররা। লঙ্কানদের শেষ ৫ উইকেট তারা তুলে নিয়েছে মাত্র ৪০ রানে।


বিশ্বসেরা অলরাউন্ডার সাকিব আল হাসান নিয়েছেন ৫ উইকেট। যা তার ক্যারিয়ারের ১৯তম ফাইফার। দেশের মাটিতে নিজের সেরা বোলিং করা এবাদত হোসেনের শিকার চার উইকেট। শ্রীলঙ্কা অলআউট হয়েছে ৫০৬ রানে। ১৪১ রানে পিছিয়ে থেকে দ্বিতীয় ইনিংসে ব্যাট করতে নামবে বাংলাদেশ।


আগেরদিন ৫ উইকেটে ২৮২ রান নিয়ে খেলা শেষ করেছিল শ্রীলঙ্কা। বৃষ্টির কারণে তৃতীয় দিন প্রায় তিন ঘণ্টা নষ্ট হওয়ায়, আজ ত্রিশ মিনিট আগে শুরু হয়েছে খেলা। দিনের প্রথম বলটিই পায়ের ওপর করেন এবাদত হোসেন। যেখান থেকে দুই রান নিয়ে নেন চান্দিমাল।


এমন শুরুর আর তেমনভাবে দুই অভিজ্ঞ লঙ্কানের ওপর চাপ প্রয়োগ করতে পারেনি বাংলাদেশের বোলাররা। সাকিব আল হাসান ও তাইজুল ইসলামের বলে বিচ্ছিন্ন কিছু আবেদন হলেও উইকেট তোলার মতো বোলিং করতে পারেননি তারা। ফলে অনায়াসেই কেটেছে লঙ্কানদের প্রথম ঘণ্টা।


পানি পানের বিরতির পর আক্রমণে আসেন খোদ অধিনায়ক মুমিনুল হক। সেই ওভারেই চতুর্থ বলে পরাস্ত হন চান্দিমাল। বল জমা পড়ে লিটন দাসের গ্লাভসে। বোলার-ফিল্ডারদের জোরালো আবেদনে সাড়া দেন আম্পায়ারও। কিন্তু চান্দিমাল রিভিউ নিলে দেখা যায় ব্যাটে লাগেনি সেই বল। ফলে মেলেনি উইকেট।


পরের ওভারে চান্দিমালের বিপক্ষে স্ট্যাম্পিংয়ের সুযোগ তৈরি করেছিলেন তাইজুল ইসলাম। রিপ্লে'তে এক পাশ থেকে মনে হচ্ছিল দাগের ভেতরে চান্দিমালের পায়ের কোনো অংশ নেই। তবে অন্য পাশ থেকে যায়, অল্পের জন্য পপিং ক্রিজের ভেতরেই রয়ে গেছেন চান্দিমাল। আবারও আশাহত হয় বাংলাদেশ।


এর বাইরে তেমন একটা সুযোগ তৈরি করতে পারেনি বাংলাদেশের বোলার-ফিল্ডাররা। চান্দিমাল ও ম্যাথিউজ মিলে খুব সহজেই কাটিয়ে দিয়েছেন পুরো সেশন। চান্দিমাল নিজের ফিফটি তুলে নিলেও, সেঞ্চুরির অপেক্ষা নিয়েই বিরতিতে যেতে হয়েছে ম্যাথিউজকে। পরে দ্বিতীয় সেশনে কাছাকাছি সময়েই সেঞ্চুরি করেন এ দুই ব্যাটার।


অবশ্য মধ্যাহ্ন বিরতির পর নেমে দ্বিতীয় ওভারেই খানিক উল্লাসের উপলক্ষ্য পেয়েছিল বাংলাদেশ। খালেদের করা সেই ওভারের শেষ বলটিতে ম্যাথিউজকে কট বিহাইন্ড আউট দেন আম্পায়ার জোয়েল উইলসন। তবে সঙ্গে সঙ্গে রিভিউ নিয়ে নিজের উইকেট বাঁচিয়ে নেন ম্যাথিউজ।


এর খানিক পরই ক্যারিয়ারের ১৩তম সেঞ্চুরি পূরণ করেন লঙ্কানদের এ সাবেক অধিনায়ক। সেঞ্চুরি ছোঁয়ার পর আবারও উইলসনের ভুল আউটের শিকার হন ম্যাথিউজ। মোসাদ্দেক হোসেনের করা ইনিংসের ১৪৪তম ওভারে লেগ বিফোর আউট দেন আম্পায়ার। এবারও রিভিউ নিয়ে নিজের উইকেট বাঁচান ম্যাথিউজ।


সংগ্রামী ব্যাটিংয়ে সেঞ্চুরি করতে ২৭৪ বল খেলেন ম্যাথিউজ। প্রায় সোয়া সাত ঘণ্টার ইনিংসে ছয়টি চার ও দুইটি ছক্কা হাঁকান তিনি। অন্যদিকে শুরু থেকেই সাবলীল খেলতে থাকা চান্দিমাল সেঞ্চুরি করতে খেলেন ১৮১ বল। যেখানে ছিল নয় চারের সঙ্গে একটি ছয়ের মার।


অবাক করার বিষয় হলো, চান্দিমাল যখন ফিফটি পূরণ করেছিলেন, তখন ম্যাথিউজের নামের পাশে ছিল ৮৮ রান। সেখান থেকে চা পানের বিরতিতে যাওয়ার আগে ম্যাথিউজ অপরাজিত ছিলেন ১২৩ রানে। তিনি ৩৫ রান করতেই আরও ৭০ রান নিয়ে নেন চান্দিমাল। সেশন শেষে তিনি ১২০ রানে অপরাজিত থাকেন।


সেখান থেকে শেষ সেশনে সাকিব ও এবাদতের দুর্দান্ত বোলিংয়ে মাত্র ১০.১ ওভারে নিজেদের শেষ ৫ উইকেট হারায় লঙ্কানরা। সেশনের দ্বিতীয় ওভারেই এবাদতের বলে তামিম ইকবালের দুর্দান্ত ক্যাচে সমাপ্তি ঘটে চান্দিমালের ১২৪ রানের ইনিংসের, ভাঙে ১৯৯ রানের ষষ্ঠ উইকেট জুটি।


এরপর আর বড় জুটি গড়তে পারেনি লঙ্কানরা। সাকিবের নিরোশান ডিকভেলার বিপক্ষে স্ট্যাম্পিংয়ের আবেদন করে কট বিহাইন্ড পেয়ে যায় বাংলাদেশ। থার্ড আম্পায়ার রিপ্লে দেখার সময় দেখা যায় ডিকভেলার ব্যাট ছুঁয়েই বল জমা পড়েছে লিটন দাসের গ্লাভসে। এরপর রমেশ মেন্ডিসকে ফিরিয়ে সাকিবের সমান চার উইকেট নেন এবাদত।


তবে এবাদতকে অপেক্ষায় রেখেই জয়াবিক্রমকে কট বিহাইন্ড করে ফাইফার তুলে নেন সাকিব। পরের ওভারে এবাদতের সামনে সুযোগ ছিল ফাইফার নেওয়ার। কিন্তু তিনি পারেননি, আর সুযোগও পাননি। সাকিবের করা ১৬৬তম ওভারের প্রথম বলে রানআউট হন শেষ ব্যাটার আসিথা ফার্নান্দো, ১৪৫ রানে অপরাজিত থেকে যান ম্যাথিউজ।


শেষ পর্যন্ত সাকিব ৯৬ রানে ৫ ও এবাদত নেন ১৪৮ রানে ৪টি উইকেট। ঘরের মাঠে টেস্টে এটিই এবাদতের সেরা বোলিং ফিগার। অন্যদিকে ২০১৮ সালের জুলাইয়ে ওয়েস্ট ইন্ডিজের বিপক্ষে কিংস্টন টেস্টের পর এবারই প্রথম ফাইফার পেলেন সাকিব। সময়ের হিসেবে সাকিবের দুই ফাইফারের মধ্যে এটিই দীর্ঘতম বিরতি।


সংক্ষিপ্ত স্কোর

বাংলাদেশ প্রথম ইনিংস: ৩৬৫/১০, ১১৬.২ ওভার (মুশফিক ১৭৫*, লিটন ১৪১, তাইজুল ১৫, মুমিনুল ৯, শান্ত ৮; কাসুন রাজিথা ৫/৬৪, আসিথা ফার্নান্দো ৪/৯৩)।


শ্রীলঙ্কা প্রথম ইনিংস: ৫০৬/১০, ১৬৫.১ ওভার (ম্যাথিউজ ১৪৫*, দিনেশ চান্দিমাল ১২৪, দিমুথ করুনারত্নে ৮০, ধনঞ্জয়া ডি সিলভা ৫৮, ওশাদা ফার্নান্দো ৫৭; সাকিব আল হাসান ৫/৯৬, এবাদত ৪/১৪৮)।

শেয়ার করুন