২৮ নভেম্বর ২০২৫, শুক্রবার, ০৫:৩৮:৪৯ পূর্বাহ্ন
জাতীয় নির্বাচনের দিনেই গণভোট, কমিশনের জন্য চ্যালেঞ্জ
  • আপডেট করা হয়েছে : ২৬-১১-২০২৫
জাতীয় নির্বাচনের দিনেই গণভোট, কমিশনের জন্য চ্যালেঞ্জ

আগামী বছরের ফেব্রুয়ারিতে অনুষ্ঠেয় জাতীয় সংসদ নির্বাচনের দিনেই গণভোট আয়োজনের সিদ্ধান্ত চূড়ান্ত করেছে অন্তর্বর্তী সরকার। এ জন্য ‘গণভোট অধ্যাদেশ-২০২৫’-এর খসড়া নীতিমালা অনুমোদন দিয়ে গণভোট পরিচালনা, গণনা ও প্রস্তুতিমূলক প্রক্রিয়ার বিধান নির্ধারণ করা হয়েছে।


বাংলাদেশে তিনবার গণভোট হলেও জাতীয় নির্বাচনের দিন গণভোট আয়োজনের নজির নেই। ফলে একই দিনে দেশে ও প্রবাসে প্রায় ১৩ কোটি ভোটারের জন্য দুটি ভোট পরিচালনায় নির্বাচন কমিশনের সক্ষমতা নিয়ে প্রশ্ন উঠছে। প্রধান নির্বাচন কমিশনার এ এম এম নাসির উদ্দিনও জানিয়েছেন, একই দিনে জাতীয় নির্বাচন ও গণভোট আয়োজন ইসির জন্য বড় চ্যালেঞ্জ এবং অতিরিক্ত প্রস্তুতি নিতে হবে।


২৫ নভেম্বর অধ্যাদেশ জারির পর সংবাদ সম্মেলনে আইন উপদেষ্টা অধ্যাপক আসিফ নজরুল জানান, জাতীয় নির্বাচনের যেসব কেন্দ্রে ভোট হবে, সেই কেন্দ্রেই গণভোট অনুষ্ঠিত হবে এবং দুই ফলাফল একসঙ্গে ঘোষণা করবে ইসি। একই ভোটার তালিকা ও একই কর্মকর্তাদের অধীনেই গণভোট পরিচালিত হবে। তিনি বলেন, প্রথমবারের মতো প্রবাসীরাও জাতীয় নির্বাচন ও গণভোট উভয় ক্ষেত্রেই ভোট দিতে পারবেন।


ইসি জানিয়েছে, জাতীয় নির্বাচনের ব্যালট সাদা কাগজে কালো ছাপে আর গণভোটের ব্যালট রঙিন কাগজে হবে। ব্যালট ছাপা হবে বিজি প্রেসে।


চ্যালেঞ্জ বাড়ছে

জুলাই সনদ বাস্তবায়নে গণভোট আয়োজনের সিদ্ধান্ত আগেই জানানো হয়েছিল, তবে সময় নিয়ে রাজনৈতিক মতানৈক্য ছিল। এরপর প্রধান উপদেষ্টা ১৩ নভেম্বর এক ভাষণে জাতীয় নির্বাচনের দিনেই গণভোটের ঘোষণা দেন। সরকার এ বিষয়ে ইসিকে চিঠি পাঠানোর পর সিইসি বলেন, একই রিসোর্স দিয়ে দুই ভোট আয়োজন আগের কোনো কমিশনের অভিজ্ঞতা নয়।


ইসির তথ্য অনুযায়ী, ৩০০ আসনে ৪২ হাজার ৭৬১ কেন্দ্রে নির্বাচনের প্রস্তুতি চলছে। পুরুষ ভোটারদের জন্য ৬০০ এবং নারী ভোটারদের জন্য ৫০০ করে ভোটকক্ষ নির্ধারণ করা হয়েছে। ফেব্রুয়ারির শীতকালে সকাল ৮টা থেকে বিকেল ৪টার মধ্যে দুই ব্যালটে ভোট দেওয়া সময়সাপেক্ষ হবে বলে বিশ্লেষকদের মত। সাবেক নির্বাচন কর্মকর্তা জেসমিন টুলী ভোটকক্ষপ্রতি ভোটার সংখ্যা কমানোর পরামর্শ দিয়েছেন।


নির্বাচন কমিশনের একাধিক কর্মকর্তা বলেছেন, আর কয়েকদিনের মধ্যেই জাতীয় নির্বাচনের তফসিল ঘোষণা করা হবে। যে কারণে আগেই ভোটকেন্দ্র চূড়ান্ত করা হয়েছে। কয়েক মাস আগে থেকে প্রশিক্ষণও শুরু হয়েছে।


ইসির সংশ্লিষ্ট শাখার কর্মকর্তারা জানিয়েছেন, এর আগে ৩০০টি সংসদীয় আসনের জন্য ইসির নির্ধারিত কেন্দ্রের সংখ্যা ছিল ৪২ হাজার ৭৬১টি। এরমধ্যে পুরুষদের জন্য এক লাখ ১৫ হাজার ১৩৭ এবং নারীদের জন্য এক লাখ ২৯ হাজার ৬০২ ভোটকক্ষ নির্ধারণ করা হয়েছিল।


চার প্রস্তাব, একটি প্রশ্ন

গণভোট ব্যালটে একটি প্রশ্ন থাকবে- জুলাই জাতীয় সনদ বাস্তবায়নে চারটি মূল প্রস্তাবে ভোটার সম্মত কি না। প্রস্তাবগুলো হলো- ১) তত্ত্বাবধায়ক সরকার, নির্বাচন কমিশন ও সাংবিধানিক প্রতিষ্ঠান পুনর্গঠনের বিধান; ২) দুই কক্ষ বিশিষ্ট সংসদ এবং সংবিধান সংশোধনে উচ্চকক্ষের অনুমোদন; ৩) নারী প্রতিনিধিত্ব বৃদ্ধি, ডেপুটি স্পিকার বিরোধীদল থেকে, প্রধানমন্ত্রীর মেয়াদসীমা, রাষ্ট্রপতির ক্ষমতা বৃদ্ধি, বিচার বিভাগ স্বাধীনতা—ইত্যাদি ৩০ দফা বাস্তবায়নের বাধ্যবাধকতা; ৪) অন্যান্য সংস্কার রাজনৈতিক প্রতিশ্রুতি অনুযায়ী বাস্তবায়ন।


ভোটারদের উত্তর দেওয়ার জন্য থাকবে দুটি অপশন- ‘হ্যাঁ’ অথবা ‘না’। ত্রুটিতে ব্যালট বাতিল হতে পারে। দুই ভোটের জন্য আলাদা ব্যালট বাক্স থাকবে কি না- এ বিষয়ে ইসি এখনো সিদ্ধান্ত জানায়নি।


সূত্র/ বিবিসি বাংলা


শেয়ার করুন