দিনাজপুরের কাহারোলে ধানের অভাবে ১৩৯টির মধ্যে ১১৮টি চালকল ও চাতাল বন্ধ রয়েছে। এতে দুর্দিনে রয়েছেন এই পেশায় নিয়োজিত শ্রমিকরা। ধানের অভাবে এসব চালকল ও চাতাল বছরের অর্ধেক সময় বন্ধ থাকছে। ফলে এই পেশায় নিয়োজিত ১ হাজার ৫০০-এর অধিক শ্রমিক-কর্মচারী বেকার হয়ে অতি কষ্টে জীবন অতিবাহিত করছেন পরিবার-পরিজন নিয়ে। মিল-চাতাল বন্ধ থাকার কারণে মিল মালিকদের বিপুল অঙ্কের টাকা লোকশান গুনতে হচ্ছে।
চালকল মালিক সূত্রে জানা গেছে, ইরি- বোরো মৌসুম ও আমন মৌসুমে ধান কাটা শুরু হলে চালকলগুলোতে রাত-দিন চলে ধান সেদ্ধ করা, শুকানো ও ভাঙানোর কাজ চলত । এ সময় কাহারোল উপজেলা থেকে প্রতিদিন শতাধিক ট্রাক যোগে ঢাকাসহ দেশের বিভিন্ন স্থানে চাল পাঠাতেন মিল মালিকরা। বর্তমানে এখন চাল পাঠাতে পারছেন না ঐ সব মালিক। কারণ আগের মতো পর্যাপ্ত ধান সরবরাহ নেই। আর যদি ধান পাওয়া যায়, তাহলে ধানের দাম বেশি পড়ে । এতে লাভ বেশি থাকে না ।
উপজেলা রসুলপুর ইউনিয়নের রসুলপুর গ্রামের মিল-চাতাল ব্যবসায়ী লঙ্কেশ্বর রায় জানান, চালকল ও চাতালে লোকশান দিতে দিতে পুঁজি শেষ হয়ে গেছে। তাই বাধ্য হয়ে চাতাল ব্যবসা বন্ধ করে দিতে হবে বলে মন্তব্য করেন তিনি। এদিকে গড়েয়া হাটের আরেক মেসার্স রফিক নামক হাসকিং মিলের চাতালে কাজ করা শ্রমিক রহিমা বেগম জানান, আগে যে টাকা রোজগার হতো, এখন তা হচ্ছে না। তিন ছেলে দুই মেয়েকে নিয়ে দিন চালানো কষ্টকর হয়ে পড়েছে । অন্যদিকে শ্রমিক আব্দুস সালামসহ আরও অনেকেই জানান, তারা শুধু ধান সেদ্ধ করা, শুকানো ও ভাঙানোর কাজ করে থাকেন।
তারা বলেন, 'আগে মিল-চাতালে কাজ করে প্রতিদিন একেক জনের আয় হতো ৪০০ থেকে ৫০০ টাকা, এছাড়াও চালের খুদ ও গুঁড়াও মিলত। তা দিয়ে খাওয়া চলত। কিন্তু এখন পেটের ভাত জোগাড় করা খুবই কষ্টকর হয়ে পড়েছে। তাই বাধ্য হয়ে এ পেশা ছেড়ে আমরা শ্রমিকরা অন্য পেশায় চলে যেতে বাধ্য হচ্ছি।' উপজেলার চালকল মালিক সমিতির সভাপতি, সাধারণ সম্পাদক আমাদের প্রতিনিধিকে জানান, চালকল ও চাতালের ব্যবসা এখন আর আগের মতো নেই । কারণ ধানের দাম অনেক বেড়ে গেছে। চাহিদা অনুযায়ী ধান পাওয়া যাচ্ছে না।
উপজেলা খাদ্য নিয়ন্ত্রক মো. মাসুদ রানা জানান, উপজেলায় ১৩৯টি চালকল ও চাতালের মধ্যে ১১৮টি বন্ধ অবস্থায় রয়েছে। ২১টি মিল ও চাতাল চালু অবস্থায় রয়েছে। এসব মিল খাদ্য বিভাগের সঙ্গে প্রতি বছর চাল সরবরাহ করার জন্য চুক্তিবদ্ধ হয়ে থাকে।

