২৪ নভেম্বর ২০২৪, রবিবার, ১০:১৮:১৬ পূর্বাহ্ন
বৈশ্বিক সংকট মোকাবিলায় সহযোগিতা অগ্রাধিকার
  • আপডেট করা হয়েছে : ০২-০৯-২০২২
বৈশ্বিক সংকট মোকাবিলায় সহযোগিতা অগ্রাধিকার

প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার আসন্ন ভারত সফরে চলমান বৈশ্বিক সংকটের প্রভাব মোকাবিলায় ঢাকা ও দিলি­র মধ্যে সহযোগিতা জোরদারের বিষয়টি অগ্রাধিকার পাবে।

দিল্লির কূটনীতিকরা এমন উচ্চাশা ব্যক্ত করে বলেছেন, মহামারি এবং রাশিয়া-ইউক্রেন যুদ্ধের কারণে সৃষ্ট অর্থনৈতিক সংকটকালে শেখ হাসিনার এবারের সফর সময়োপযোগী। সংকট মোকাবিলায় বাংলাদেশের পাশে দাঁড়াবে ভারত।

প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা আগামী ৫ থেকে ৮ সেপ্টেম্বর ভারত সফর করবেন। সফরকালে তিনি ভারতের প্রধনমন্ত্রী নরেন্দ্র মোদির সঙ্গে আনুষ্ঠানিক দ্বিপক্ষীয় বৈঠক করবেন। তার বাইরে দুই নেতা একান্তেও কথা বলবেন। প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা ভারতের রাষ্ট্রপতি দ্রৌপদী মুর্মুর সঙ্গে সৌজন্য সাক্ষাৎ করবেন। তিনি ভারতের ব্যবসায়ী নেতাদের সঙ্গেও মতবিনিময় করবেন।

এ ছাড়া আজমীর শরিফে গিয়ে হজরত খাজা মঈনুদ্দিন চিশতি (রহ.) মাজার জিয়ারত করবেন। সফরকালে বাংলাদেশ ও ভারত বিভিন্ন ক্ষেত্রে বেশ কিছু সমঝোতা স্মারক সই করবে।

জানতে চাইলে বাংলাদেশে ভারতের সাবেক হাইকমিশনার বীনা সিক্রি বৃহস্পতিবার টেলিফোনে বলেন, ‘প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার সফর সম্পর্কে খুবই উচ্চ প্রত্যাশা রয়েছে। প্রতিবেশী দুই দেশের মধ্যে চমৎকার বোঝাপড়া আছে। ফলে সফরটি খুবই ইতিবাচক ফল নিয়ে আসবে। বিশেষ করে ভয়াবহ কোভিডের পর সফর হওয়ায় অর্থনীতি পুনরুদ্ধারে পরস্পরে কীভাবে সহায়তা করা যায় তা নিয়ে আলোচনা সম্ভব হবে। বিশ্বের সব দেশ এখন কঠিন সংকটের মধ্য দিয়ে অগ্রসর হচ্ছে। এ সময়ে এই সফর অত্যন্ত সময়োপযোগী ও ইতিবাচক।’

তিনি আরও বলেন, ‘প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার সফরকালে কুশিয়ারার পানি নিয়ে চুক্তি হতে পারে। তিস্তা নিয়ে তেমন কোনো অগ্রগতি এখনো হয়নি। তবে দুই দেশের মধ্যে পানি নিয়ে আলোচনা আবারও শুরু হওয়া ইতিবাচক। দুই দেশের বাণিজ্য আবারও জোরদার হবে। ভারতে বাংলাদেশের রপ্তানি অনেক বেড়েছে।’

রাজনীতি সম্পর্কে বীনা সিক্রি বলেন, ‘রাজনীতি হলো বাংলাদেশের অভ্যন্তরীণ ইস্যু। বাংলাদেশের গণতন্ত্র স্পন্দনশীল। বাংলাদেশের অর্থনীতি স্থিতিশীল। তবে বর্তমান সংকটকালে বাংলাদেশ আইএমএফের সহযোগিতা চেয়েছে। ভারতও বাংলাদেশকে সহায়তা করতে প্রস্তুত। কারণ স্থিতিশীল সমৃদ্ধ বাংলাদেশ ভারতের নিজের স্বার্থ। ভারত সংকটকালে শ্রীলংকাকে তিন দশমিক আট বিলিয়ন ডলারের সহায়তা করেছে। ডিজেল ও পেট্রোল দিয়ে করা হয়েছে এমন সহায়তা। ভারত রাশিয়া থেকে জ্বালানি তেল আমদানি করছে। বাংলাদেশ চাইলে সেখান থেকে বাংলাদেশে সরবরাহ দেওয়া সম্ভব। বাংলাদেশ কী চায় সেটাই বিবেচ্য। ভারত চাল, গম, ভুট্টা, শাকসবজি সবই সরবরাহ দিতে পারে। বাংলাদেশের চাহিদা কী সেটা জানাতে হবে।’

তিনি বলেন, ‘স্বাধীনতার ৫০ বছর উদযাপন করেছে বাংলাদেশ। কোভিডের মধ্যে ভারতের প্রধানমন্ত্রী বাংলাদেশ সফর করেছেন। এখন প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা আসছেন। তার সফরে আমরা খুবই খুশি।’

ভারতের সাবেক পররাষ্ট্র সচিব হর্ষবর্ধন শ্রিংলা প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার আসন্ন সফরের ফলাফল সম্পর্কে উচ্চ আশা প্রকাশ করে বলেছেন, ‘এই সফর দুই দেশের মধ্যে সহযোগিতার একটি নতুন যুগের সূচনা করবে।’

সিইপিএ সম্পর্কে, শ্রিংলা বলেন, যদি এটি চূড়ান্তভাবে স্বাক্ষরিত হয়, তাহলে বাংলাদেশের মোট দেশজ উৎপাদন বা জিডিপি প্রায় ১.৫ শতাংশ বাড়তে পারে।এই পদক্ষেপের ফলে ভারতও অনেক সুবিধা পাবে।’ তিনি আরও বলেন, শেখ হাসিনার আসন্ন ভারত সফর অত্যন্ত সফল হবে।

কনফেডারেশন অব ইন্ডিয়ান ইন্ডাস্ট্রির (সিআইআই) মহাপরিচালক চন্দ্রজিৎ ব্যানার্জি বলেছেন, শেখ হাসিনার ভারত সফর ইতোমধ্যে ক্রমবর্ধমান বাংলাদেশ-ভারত অর্থনৈতিক সম্পর্কের গতিকে আরও বাড়িয়ে দেবে, যা বছরের পর বছর ধরে ক্রমাগত বৃদ্ধি পাচ্ছে এবং ২০২১-২২ সালে কোভিড-১৯ এ সৃষ্ট চ্যালেঞ্জ সত্তে¡ও ১৮ বিলিয়ন ডলারের ল্যান্ডমার্ক অতিক্রম করেছে।

তিনি বলেন, ভারত, বাংলাদেশ এবং প্রতিবেশী দেশগুলোর মধ্যে উন্নত বাণিজ্য ও পরিবহণ সংযোগ সমগ্র উপ-আঞ্চলিক একীভ‚তকরণের জন্য একটি গেম চেঞ্জার হতে পারে, তা বিবিআইএন বা বিমসটেক যাই হোক না কেন।

ব্যানার্জী বলেন, এই সফর ভারতীয় বিনিয়োগকারীদের নতুন করে উদ্বুদ্ধ করবে বলেও আশা করা হচ্ছে।

তিনি আশা করেন, ভারতীয় অর্থনৈতিক অঞ্চলগুলো চালু হলে বাংলাদেশে আরও বেশি ভারতীয় বিনিয়োগ আসবে।

সিইপিএ সম্পর্কে তিনি বলেন, বাংলাদেশ এলডিসি অবস্থা থেকে উত্তরণের সময়, ‘এই চুক্তিটি দুই দেশের মধ্যে অগ্রাধিকারমূলক বাণিজ্য অব্যাহত রাখার জন্য একটি ভিত্তি প্রদান করবে বলে আশা করা হচ্ছে।’

প্রবীণ সাংবাদিক এবং দক্ষিণ এশিয়ার ফরেন করেসপন্ডেন্টস ক্লাবের (এফসিসি) সাবেক সভাপতি এস ভেঙ্কট নারায়ণ বলেছেন, ভারতের জনগণ এখানে শেখ হাসিনাকে স্বাগত জানাতে অধীর আগ্রহে অপেক্ষা করছে। কারণ তাকে দেশের সবচেয়ে কাছের বন্ধু হিসাবে বিবেচনা করা হয়।

তিনি বলেন, তার (শেখ হাসিনার) ভারত সফরে একটি ‘বড় সাফল্য’ আসবে। কারণ এটি ভারত-বাংলাদেশকে অতীতের যে কোনো সময়ের তুলনায় অনেক কাছাকাছি আনতে সাহায্য করবে।

দীর্ঘদিন ধরে অমীমাংসিত তিস্তার পানি বণ্টন চুক্তির বিষয়ে জানতে চাইলে তিনি মত দেন যে, পশ্চিমবঙ্গ সরকারের শিগগিরই চুক্তিটি স্বাক্ষরের ক্ষেত্রে বিধিনিষেধ প্রত্যাহার করা উচিত।

অস্ট্রেলিয়ার নেটওয়ার্ক সেভেন টিভি চ্যানেলের দক্ষিণ এশিয়া ব্যুরো চিফ ভেঙ্কট বলেন, বাংলাদেশ ও ভারত ৫৪টি অভিন্ন নদীর অংশীদার। তাই সেই নদীগুলো থেকে পানির ন্যায্য অংশ পাওয়ার বৈধ অধিকার বাংলাদেশের রয়েছে। তাই শিগগিরই তিস্তা চুক্তি হওয়া উচিত।

এই প্রসঙ্গে তিনি ২০১১ সালে তৎকালীন ভারতের প্রধানমন্ত্রী মনমোহন সিংয়ের বাংলাদেশ সফরের সময় তিস্তার পানি বণ্টন চুক্তির চ‚ড়ান্তকরণের কথা উলে­খ করেন।

চুক্তি স্বাক্ষরের চূড়ান্ত পর্যায়ে পশ্চিমবঙ্গের মুখ্যমন্ত্রী মমতা বন্দ্যোপাধ্যায় তার সীমাবদ্ধতা দেখালে তিস্তার পানি বণ্টন চুক্তি স্থগিত রাখা হয়।

প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার নেতৃত্বে বাংলাদেশের বর্তমান অর্থনৈতিক অগ্রগতির প্রশংসা করেন এফসিসির সাবেক সভাপতি।

প্রধানমন্ত্রীর সফরের আগে, দীর্ঘ ১২ বছর পর ২৫ আগস্ট নয়াদিলি­তে বাংলাদেশ ও ভারতের মধ্যে যৌথ নদী কমিশনের (জেআরসি) মন্ত্রী পর্যায়ের বৈঠক অনুষ্ঠিত হয়।

ভারতীয় হাইকমিশনারের সঙ্গে মতবিনিময় : ভারতের হাইকমিশনার বিক্রম দোরাইস্বামী বৃহস্পতিবার বাংলাদেশের সাবেক রাষ্ট্রদূতদের সংগঠন ‘অ্যাম্বাসেডর্স অব ফরমার বিসিএস অ্যাম্বাসেডর্স (এওএফএ) সদস্যদের সঙ্গে মতবিনিময় করেছেন। ফরেন সার্ভিস একাডেমিতে এই মতবিনিময় সভা অনুষ্ঠিত হয়।

ভারতের হাইকমিশনার তার বক্তব্যে বাংলাদেশ ও ভারতের মধ্যে বর্তমান দ্বিপক্ষীয় সম্পর্কের বিভিন্ন দিক তুলে ধরেন। তিনি ভবিষ্যতের সম্ভাবনা, সুযোগ ও চ্যালেঞ্জও তুলে ধরেন। তিনি উলে­খ করেন, যৌথ নদী কমিশন (জেআরসি) বৈঠকের ফলাফল থেকে প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার আসন্ন ভারত সফরে অনেক কিছু প্রাপ্তি যোগ হবে। তিনি বলেন, অপরাপর অভিন্ন নদীর পানি বণ্টনের বিষয়টি দুই দেশের কারিগরি পর্যায়ে আলোচনা হচ্ছে। তিনি আশা করেন যে, সফরটি দুই দেশের ঐতিহাসিক ও কৌশলগত সম্পর্ককে নতুন পর্যায়ে নিয়ে যাবে।

এওএফএ সদস্যদের প্রশ্ন ও মন্তব্যের জবাবে দোরাইস্বামী বলেন, দুই দেশের মধ্যে বিশেষ করে ভারতের উত্তর-পূর্বাঞ্চলের সঙ্গে বাংলাদেশের কানেকটিভিটি, বাণিজ্য ও ভ্রমণ ব্যাপকভাবে বৃদ্ধি পেয়েছে। এই সম্পর্ক আরও বিস্তৃত করার প্রয়োজন রয়েছে। এওএফএ সদস্যরা পারস্পরিক লাভালাভ, পারস্পরিক শ্রদ্ধা সম্পর্ককে আরও শক্তি দেবে।

অ্যাসোসিয়েশনের সভাপতি শমসের মোবিন চৌধুরীর সভাপতিত্বে অনুষ্ঠিত এই মতবিনিময় অনুষ্ঠান মধ্যাহ্নভোজের মাধ্যমে শেষ হয়।

শেয়ার করুন