শিক্ষাগতযোগ্য নিয়ে প্রশ্ন ওঠায় রাজশাহীর পুঠিয়ার বানেশ্বরের শহীদ নাদের আলী বালিকা উচ্চ বিদ্যালয় এন্ড কলেজের অধ্যক্ষকে নির্যাতন, অবৈধভাবে বরখাস্ত করা ও সভাপতির দুর্নীতির প্রতিবাদে সংবাদ সম্মেলন করেছেন ভূক্তভোগি অধ্যক্ষ রুহুল আমিন।
বুধবার (৫ অক্টোবার) বেলা সাড়ে ১১টার দিকে রাজশাহী সাংবাদিক ইউনিয়ের কার্যালয়ে সংবাদ সম্মেলনে লিখিত বক্তব্য উপস্থাপন করেন অধ্যক্ষ রুহুল আমিন।
অধ্যক্ষ বলেন, অত্র শিক্ষা প্রতিষ্ঠানের গভর্নিং কমিটির কার্যক্রম চলতি বছরের ১৩ জানুয়ারী শুরু হয়। সে সময়ে এই কমিটির সভাপতি মাহাবুব আলম বাবুর শিক্ষাগতযোগ্যতা নিয়ে প্রশ্ন ওঠায় শুরু থেকেই সভাপতি তাঁর বিরুদ্ধে ষড়যন্ত্র শুরু করেন। এরই ধারাবাহিকতায় সভাপতি ১২ মে দুইজন র্শিক্ষক প্রতিনিধির সামনে জোরপুর্বক অফিস হতে ১০নং রেজুলেশন খাতা নিয়ে গেলে তিনি এ নিয়ে পুঠিয়া থানায় একটি সাধারণ ডায়েরী করেন।
তিনি আরো উল্লেখ করেন ২৩ মে তিনি রেজুলেশন বইয়ের উপর অস্থায়ী নিষেধাজ্ঞার মামলা করলে ২৫ মে তারিখ বিবাদী পক্ষের নিকট নোটিশ জারী হয়। কোর্টের অস্থায়ী নিষেধাজ্ঞা থাকা সত্ত্বেও সভাপতি আইন অমান্য করে চলতি বছরের ৮ জুলাই তাঁকে বরখাস্তের রেজুলশন করেন। এই রেজুলেশন করার জন্য সদস্যদের নিকট থেকে ফাঁকা খাতায় স্বাক্ষর নেন।
পরবর্তীতে সভাপতি তাঁর নিজের ইচ্ছামত মনগড়া আলোচ্যসূচী সংযোগ করে বরখাস্তের রেজুলশন তৈরী করেন। বরখাস্তের এই রেজুলেশন সম্পর্কে সদস্যরা অবহিত নন বলে জানান তিনি। এই অবহিত না থাকার বিষয়টি পরিচালনা পর্ষদের ৯জন সদস্য লিখিতভাবে বোর্ড চেয়ারম্যানকে অবহিত করেন।
কিন্তু বোর্ড চেয়ারম্যান এখন পর্যন্ত কোন প্রকার পদক্ষেপ না নেয়ায় এ অবস্থার সৃষ্টি হয়। এছাড়াও সভাপতির নানাবিধ অনৈতিক কর্মকাণ্ডের প্রতি অতিষ্ঠ হয়ে পরিচালনা পর্ষদের ৯জন সদস্য নিজ নিজ পদ হতে ৬ থেকে ৮আগস্ট ২০২২ ইং তারিখের মধ্যে স্বেচ্ছায় পদত্যাগ করেন এবং পদত্যাগপত্র ডাকযোগে সভাপতির নিকট এবং হাতে হাতে শিক্ষাবোর্ড চেয়ারম্যান, উপজেলা নির্বাহী অফিসার ও অধ্যক্ষকে জমা দেন।
তিনি উল্লেখ করেন সভাপতি প্যাড ও স্বারকলিপি ছাড়া একটি সাদা কাগজে বরখাস্তের চিঠি লিখে পিয়নের হাত দিয়ে তাঁর বাসায় পাঠিয়ে দেন।। যা সম্পূর্ন নিয়ম বহির্ভূত। একজন অধ্যক্ষকে বরখাস্ত করতে হলে পর পর তিনবার কারণ দর্শানোর নোটিশ দিতে হয়। কিন্তু তিনি এ ধরনের কোন নোটিশ তিনি আজও আপনি।
এদিকে ৯জন সদস্য পদত্যাগ করায় পুঠিয়া-দূর্গাপুরের সংসদ সদস্য ১৩ আগস্ট ২০২২ ইং তারিখ এডহক কমিটি গঠনের জন্য বোর্ডে ডিও প্রদান করেন। অধিকাংশ সদস্য পদত্যাগ করলে সাথে সাথে কার্যকর হ বাংলাদেশ গেজেট ২০০৯,৩০ এর ৩ ধারা অনুযায়ী।
তিনি আরো বলেন, ২৯ সেপ্টেম্বর ২০২২ ইং তারিখ ৩৫জন শিক্ষক-কর্মচারীর স্বাক্ষর বিহিন বেতন বিল এবং বোর্ডের অনুমতি চিঠি ছাড়াই অনিয়ম করে করে সম্পূর্ন অবৈধভাবে অবৈধ ভারপ্রাপ্ত অধ্যক্ষ ও অকার্যকর সভাপতির স্বাক্ষরের ভিত্তিতে সোনালী ব্যাংক পুঠিয়া শাখার ম্যানেজার নিজের ইচ্ছায় তাঁর অর্ধেক বেতন বিলসহ অন্যান্য শিক্ষকদের বেতন জমা দেন। কিভাবে তিনি বোর্ডের অনুমতি বা কমিটির সিদ্ধান্ত ছাড়া তাঁর অর্ধেক বেতন বিল নির্ধারণ করেন বলে প্রশ্ন রাখেন।
অধ্যক্ষ বলেন, ১ অক্টোবর প্রতিষ্ঠানের কাজ শেষ করে দুপুর ১টার দিকে তিনি জরুরী কাজে বাসায় গেলে এই সুযোগে সভাপতি অবৈধভাবে তার মনোনীত ১৪তম শিক্ষককে অধ্যক্ষের চেয়ারে বসান। পরে অফিসের নির্ধারিত তালা না দিয়ে একটি নতুন তালা লাগিয়ে দেন। পরে তিনি বিকেলে গিয়ে অফিসের নির্ধারিত তালা লাগিয়ে আসেন। এর পরের দিন ২ অক্টোবর সকাল আনুমানিক ৭টার দিকে সকলের সামনে কাঁর লাগানো তালা ভেঙ্গে ফেলে সভাপতি।
এরপর তাঁর ভাড়া বাসার সামনে এসে জোরে জোরে চিৎকার করে বলতে থাকেন তালা ভাঙ্গার কথা। সেইসাথে নিচে আসার জন্য ডাকতে থাকেন। তিনি নিচে নেমে আসলে সভাপতি তাঁর গেঞ্জির কলার ধরে মারতে শুরু করলে তাঁর স্ত্রী এসে প্রতিহত করেন। এরই একপর্যায়ে সভাপতির আনা বাঁশের গুতাতে সভাপতিরই হাত কেটে যায়।
এসময়ে স্থানীয় লোকজন এসে তাঁকে উদ্ধার করেন বলে জানান অধ্যক্ষ। তিনি কাউকে মারপিট করেননি। আর চাইনিজ কুড়াল ও রড দিয়ে আঘাত করাতো দুরের কথা তাদের হাতে কোন অস্ত্র বা লাঠিসোটা কিছুই ছিলোনা বলে জানান অধ্যক্ষ। আর তার ছোট ভাই ঘটনার সময়ে নিজ প্রতিষ্ঠানে থাকায় তিনি ঘটনাস্থলে ছিলেন না বলে জানান তিনি। সংবাদ সম্মেলনে উপস্থিত ছিলেন গভর্নিং বডির পদত্যাগকারী সদস্য বাবলু অধ্যক্ষের স্ত্রী নার্গিস আক্তার।
এ বিষয়ে জানতে সভাপতি মাহবুবু আলম বাবুকে মুঠোফোনে কল করলে তিনি বলেন, অধ্যক্ষ রুহুল আমিনের নানাবিধ দুর্নীতি রয়েছে। তিনি বিভিন্ন সময়ে মনগড়া রেজুলেশন করেছেন যা তিনি জানেন না। এছাড়াও শিক্ষকদের সাথে অধ্যক্ষের সম্পর্ক ভাল নাই। আর তিনি কাউকে মারেন নি। উপরোন্ত তাঁকেই অধ্যক্ষ ও স্ত্রী মিলে মারপিট করেছেন বলে জানান সভাপতি। তবে তিনি এর শেষ দেখে ছাড়বেন বলে জানান।